হোমিও মর্মবানী তাদের জন্যই বেশি প্রয়োজন যারা হোমিওপ্যাথি ভালোবাসেন। বিশেষ করে যারা হোমিওপ্যাথির ছাত্র কিংবা বর্তমানে প্রাকটিস (ডাক্তারী) করছেন। হোমিও মর্মবানী মূলত সেসব কথা যা একজন ডাক্তার প্রয়োগ করার মাধ্যমে সফল হয়েছেন।
আজ আমরা হোমিও মর্মবানী হিসেবে স্বনামধন্য ডাক্তার কনটেস্টাইন হেরিং এর মূল্যবান তথ্যগুলো জানবো। সাধারন মানুষ যারা তাদের উচিত হবে না সরাসরি এখানে যেভাবে বলা আছে সেভাবে ওষুধ প্রয়োগ করা কিংবা ব্যবহার করা।
কারণ, হোমিওপ্যাথিক ওষুধের ব্যবহার কিভাবে করতে হয়, কতগুলো লক্ষণের সাথে মিলতে হয় তা কেবল একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারই বলতে পারেন। যারা প্রাকটিস করেন তারা নিশ্চিন্তে হোমিও মর্মবানী গুলো প্রয়োগ করতে পারেন। তো আর কথা নয় – সরাসরি যাচ্ছি মূল আলোচনায়।
ডা. কনটেস্টাইন হেরিং এর হোমিও মর্মবানী:
অরাম ট্রিফাইলাম: অতিশয় অস্থিরতা ও মুত্রের অনুৎপত্তি প্রভৃতি লক্ষণে টাইফয়েড জ্বরেও অরাম ট্রিফাইলাম প্রয়োগ করা যায়।
এগনাস ক্যাস্টাস: অতিরিক্ত শুক্রক্ষয় করে যেসব যুবক অল্প বয়সে বৃদ্ধের মতো হয়েছ, সুন্দরী স্ত্রির আলিঙ্গনেও কোনোরুপ উত্তেজনা হয় না, সহবাসে কোনো সুখ পায় না বরং অনুশোচনার গ্লানি ভোগ করে, এগনাস ক্যাস্টাস তাদের পরম বন্ধু।
এনথ্রাসাইনাম: কার্বাঙ্কালকে শস্ত্র চিকিৎসা তথা অপারেশনের রোগ বলা ঠিক নয়। এনথ্রাসাইনাম এক্ষেত্রে ভালো ফল দেয়।
এন্টিম ক্রড: আমাশয়ের পুরাতন প্রতিস্মার প্রতিরোধে জিহ্বায় দুধের মতো গাঢ় প্রলেপ বা দানাদার শুভ্রবর্ণ লেপ লক্ষণে এন্টিম ক্রড অতিশয় ফলপ্রদ।
এপিস মেল: পূর্ণমাত্রায় এপিস মেল মূত্রকর , অতএব এতদ্বারা মূত্রপিন্ত বা মাস্তক – ঝিল্লির সাথে অসংসৃষ্ট, যথা- হৃৎপৈন্ডিক ও ডিম্বাশয়িক শোথেও উপকারী।
এপিস মেল: গর্ভস্রাব প্রবণাদের পক্ষে গর্ভকালে উচ্চক্রম ভিন্ন এপিস মেল সেবন করা বিহিত নয়।
এলুমিনা: যেসব দুগ্ধপায়ী শিশু মায়ের দুধ পান না, না পেয়ে বোতলের দুধ বা কৃত্রিম দুধের উপর জীবন ধারণ করে, তাদের কোষ্ঠবদ্ধতা সৃষ্টি হলে এলুমিনা ভালো ফল দেয়।
এলো সকোট্রিনা: মাথাব্যথা গরমে বাড়ে কিন্তু ঠান্ডায় কমে, এমন অবস্থায় এলো সকোট্রিনা খুবই উপকারী।
এলো সকোট্রিনা: অতিমাত্রায় ওষধ প্রয়োগের পর অনেক ক্ষেত্রে রোগ ও ওষধজাত লক্ষণগুলো মিলেমিশে শরীরে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি করে এমন অবস্থায় এলো সকোট্রিনা প্রয়োগ করলে শরীরের বিধান তন্ত্রসমূহের শৃঙ্খলা ফিরে আসে।
এসিড ফ্লুওরিক: আঙুলহাড়া, দাঁতের ও চোখের নালী ঘা, শিরার স্ফীতি, হাতের তলায় ভিজা ভাব ও সরলান্ত্রের পীড়া এসিড ফ্লুওরিক ওষুধ প্রয়োগে আরোগ্য হয়েছে।
ওপিয়াম: ওপিয়ামের রোগী মনে করে তার শরীরে কোনো কোনো অঙ্গ- প্রত্যঙ্গ বা অংশবিশেশ বৃহদাকার হয়েছে।
ওপিয়াম: তীব্র জোলাপ প্রয়োগ করার পরও মল নির্গত না হওয়া ওপিয়ামের বিশেষ লক্ষণ।
ক্যানাবিস ইন্ডিকা: কথা বলার সময় স্বরের সীমা পরিমাপে অক্ষমতার ক্ষেত্রে ক্যানাবিস ইন্ডিকা বিশেষ উপকারী।
ক্যালি আয়োড: কাশির স্বাদ লোনা হয়ে ক্যালি আয়োডের কথা স্মরণ করতে হবে।
ক্যালি ফস: কোনো পীড়ার চরম অবস্থায় যখন রোগীর কিছুমাত্র জীবনীশক্তি থাকে না , দুর্বলতায় কথা পযন্ত জড়িয়ে যায়, তখন ক্যালি ফসই একমাত্র ওষুধ হিসেবে কাজ করে।
ক্যালি ফস: সুপ্রসবের জন্য ক্যালি ফসই একমাত্র ওষুধ। গর্ভের ৭/৮ মাস থেকে নিয়মিত ক্যালি ফসের ৬x শক্তি সেবন করলে এবং গর্ভের ১০ম মাসে ৪x শক্তি সেবন করলে যথাসময়ে সুপ্রসব হয়।
টিউক্রিয়াম: সব ধরণের পলিপে, বিশেষত নাকের পলিপে টিউক্রিয়াম বিশেষভাবে উপকারী।
ডলিকস: শিশুদের দাঁত উঠার সময় জ্বর লক্ষণ থাকলে ডলিকস প্রয়োগ করার পূর্বে একমাত্রা একোনাইট দিতে যেন ভুল না হয়। আগে থেকেই এই সতর্কতা অবলম্বন না করলে উচ্চতম ক্রম প্রয়োগেও ধনুষ্টংকার হয়ে থাকে।
ড্রসেরা: হুপিং কাশিতে সালফার এবং ভিরেট্রামের অন্তর্বর্তীকালীন প্রয়োগের জন্য সর্বাপেক্ষা উপযোগী ওষুধ হলো ড্রসেরা।
ড্রসেরা: মলদ্বারে চাপ বোধ, মনে হয় যেন মলদ্বার বের হয়ে যাবে লক্ষণে ড্রসেরা প্রয়োগ করা যায়।
ড্রসেরা: হাঁটার সময় পাকস্থলীর ডান দিক থেকে বাম দিকে অনবরত সূঁচ ফোটানো বেদনায় মনে হয় যেন দম বন্ধ হয়ে যাবে লক্ষণে ড্রসেরা প্রয়োগ করা যায়।
ডিপথেরিয়া: ডিপথেরিয়া রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ডিপথেরিয়া সাফল্যের সাথে ব্যবহার করা যায়।
পালসেটিলা: সন্তানের মৃত্যুর পর স্তনের দুধ শুকানোর জন্য পালসেটিলা বেশ ভালো ওষুধ।
ব্রায়োনিয়া: ব্রায়োনিয়া কৃষ্ণ বর্ণের রোগীর জন্য অধিক উপযোগী হলেও গৌর বর্ণের রোগীর জন্যও বেশ উপকারী।
বেনজোয়িক এসিড: গেটে বাতে যত বেনজোয়িক এসিড প্রয়োগ করা হবে ততোই উন্নতি যোগ লক্ষ্য করা যাবে।
ব্যাডিয়েগা: বাল্যকালে যাদের গণ্ডমালা দোষ ছিল, যৌবনে আবার তা প্রকাশিত হলে ব্যাডিয়েগা সেবনে উপকার হয়।
ম্যাগ ফস: গলগণ্ড রোগে ম্যাগ ফস ২০০ কিছুদিন খাওয়ালে ভালো ফল দর্শে কিন্তু কিছুদিন সুস্থ্য মানুষকে খাওয়ালে গলগণ্ড রোগ আর হয়না।
মেডোরিনাম: এই নোসোড ওষুধটি ঘন ঘন পুনঃ প্রয়োগ করা যাবে না।
মেডোরিনাম: মেডোরিনাম উচ্চ শক্তির কয়েক মাত্রা খাওয়ালে পক্ষাঘাত ব্যাধি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না।
ল্যাক ক্যান: সন্তানের মৃত্যুর পর স্তনের দুধ শুকাতে ল্যাক ক্যান খুব ভালো কাজ করে।
ল্যাক ডিপ্লো: সন্তান পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ না পেলে বা স্তনের দুধ না থাকলে ল্যাক ডিপ্লো ব্যবহার করা যায়।
সাইলিশিয়া: হাঁটুর মালাইচাকির বাতে সাইলিসিয়া অব্যর্থ ফলপ্রদ।
সালফার: গরমের সময় ঠাণ্ডার ভয় এবং ঠাণ্ডার সময় গরমের ভয় থাকলে সালফার প্রয়োগে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
সালফিউরিক এসিড: সালফিউরিক এসিড ৬ শক্তি ৫ থেকে ১০ ফোঁটা করে দিনে ৪ বার খেলে মদ খাওয়ার ইচ্ছা চিরতরে দূর হয়।
রোগীর আরোগ্য নীতি: রোগীর রোগ আরোগ্যের পথ তিনটি। সেগুলো হলো- ১. উপরের দিক থেকে নিচের দিকে ক্রিয়া প্রকাশ; ২. ভেতর থেকে বাইরের দিকে ক্রিয়া প্রকাশ; ৩. রোগ লক্ষণ ঠিক যে ধারায় আত্মপ্রকাশ করেছে ঠিক তাদের বিপরীত ধারায় তিরোহিত হওয়ার মাধ্যমে ক্রিয়া প্রকাশ।
ব্যাডিয়েগা: রাশিয়ায় অর্শ রোগে আরোগ্যকর বলে ব্যাডিয়েগার খ্যাতি রয়েছে।
পরিশেষে বলা যায়, শ্রদ্ধেয় ডাক্তার কনটেস্টাইন হেরিং নিজ জীবনের সমস্ত অভিজ্ঞতার আলোকে উপরের হোমিও মর্মবানী গুলো দিয়েছেন। সুতরাং এই হোমিও মর্মবানী গুলো প্রয়োগ করে ব্যর্থ হবার কোনো সম্ভাবনা থাকার কথা নয়।
আরও পড়ুন: মেয়েদের স্তন কেন ঝুলে যায় – কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন।