হোমিও চিকিৎসা যখন থেকে পৃথিবীতে শুরু হয়েছে ঠিক তখন থেকেই কিছু মানুষ হোমিওপ্যাথির কল্যাণার্থে অবিরত চেষ্টা করেই গেছেন। তারা যখন যে ওষুধে সফল হয়েছেন তা হোমিও চিকিৎসা হিসেবে লিপিবদ্ধ করেছেন।
আজ এমন একজন গুণধর চিকিৎসকের সফলতার তথ্যগুলো জানবো। যারা বর্তমানে হোমিও চিকিৎসা প্রাকটিস করছেন তাদের খুবই কাজে লাগবে। যারা বর্তমানে হোমিও চিকিৎসা শিখছেন অর্থাৎ ছাত্র-ছাত্রী তাদেরও উপকারে আসবে।
তো আর কথা নয় – সরাসরি যাচ্ছি মূল আলোচনায়। তবে বলে রাখি, এখানে যে চিকিৎসার কথা বলা হয়েছে তা সাধারন মানুষ যারা আছেন তারা সরাসরি কখনোই প্রয়োগ করতে যাবেন না। তাহলে সমস্যা হতে পারে।
ডা. অপরেশ কুমার ব্যানার্জী (হোমিও চিকিৎসা):
আর্টিকা ইউরেন্স: চিংড়ি খাওয়ার কারণে আমবাত হয়েছে এমন অনেক রোগীকেই আর্টিকা ইউরেন্স প্রয়োগ করে সুস্থ করে তোলা হয়েছে।
এগারিকাস মাসকেরিয়াস: রোগীর ডান উর্ধ্বাঙ্গ এবং বাম নিম্নাঙ্গ বা বাম উর্ধ্বাঙ্গ এবং ডান নিম্নাঙ্গ আক্রমণে এগারিকাস মাসকেরিয়াস ব্যবহার করে আমি বেশ ভালো ফল পেয়েছি।
ওষুধ প্রয়োগ প্রসঙ্গে: এক রোগী আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন, ডাক্তার বাবু কি ওষুধ খেলাম, শুধু জিহ্বাটাই ভিজলো, পেটে কিছু গেল বলে তো মনে হল না।
আমি বলেছিলাম হোমিওপ্যাথিক ওষুধে জিহবা ভিজলেই হলো। হোমিওপ্যাথিক ওষুধ জলে গুলে দেবার পর তা যদি জিহবাকে ছুয়ে যায় বা ভিজাতে পারে তবে জিহবার প্রচুর স্নায়ুকে স্পর্শ করে, ফলে ওষুধের ক্রিয়া দ্রুতবেগে হয়।
অন্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে ওষুধ পেটে যাওয়ার পর সেখান থেকে রক্তের মাধ্যমে দেহের রোগাক্রান্ত অংশে যায়। কিন্তু হোমিওপ্যাথিক ওষুধ স্নায়ুর মাধ্যমে সঞ্চালিত হয়। এখানেই হোমিওপ্যাথিক ওষুধের বৈশিষ্ট্য।
গ্রাফাইটিস: এলোপেসিয়া সমস্যায় আক্রান্ত অনেক রোগীকে আমি গ্রাফাইটিস প্রয়োগে আরোগ্য করেছি।
পঞ্চাশ সহস্রতমিক ওষুধের শক্তি লিপিবদ্ধকরণ: হোমিওপ্যাথিক ওষুধের শক্তি নির্দেশ করার জন্য অনেকেই এলএম২, এলএম৩, ইত্যাদি বা এম২,এম৩ ইত্যাদি বা ০/২, ০/৩ ইত্যাদি ব্যবহার করেন ।
কিন্তু এর কোনোটাই মহ্ত্মা হানেমান নির্দেশিত পন্থা নয়। হোমিওপ্যাথিক ওষুধের পঞ্চাশসহস্রতমিক শক্তি নির্দেশ করার জন্য ২/০, ৩/০ ইত্যাদি ব্যবহার করা উচিত। কারণ একমাত্র এই পদ্ধতির লিপিবদ্ধ করলেই এই পদ্ধতির ওষুধের শত্তির প্রকৃত মান বা অবস্থা বোঝা যায়, অন্য কোনোভাবেই নয়।
পঞ্চাশ সহস্রতমিক পদ্ধতি ব্যবহার প্রসঙ্গে: অনেক বয়স্ক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের সাথে আলোচনার সময় তাঁরা কেন পঞ্চাশ সহস্রতমিক পদ্ধতি ব্যবহার করেন না জানতে চেয়েছি।
তাঁরা আমাকে বলেছেন, ‘দেখো বাবা’ আমরা পুরানো যুগের মানুষ, আমরা পুরানোটাই ব্যবহার করি, তোমরা নতুন যুগের মানুষ, তোমরা নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করো।
আমি বিনীতভাবে বলি, আপনার বয়স তো ২০০ বছরের বেশি নয়, তাই না? মহত্মা হানেমান তো ২০০ বছর আগেই নতুন পদ্ধতি হিসেবে এই পদ্ধতির কথা চূড়ান্ত করে গেছেন। তাই সেটা মানতে বা ব্যবহার করতে বাধা কোথায়?
মাইরিস্টিকা: ঘাড়ের স্পন্ডেলাইটিসের বেশ কয়েকজন রোগীকে আমি মাইরিস্টিকা প্রয়োগে আরোগ্য প্রদান করেছি।
হ্যামামেলিস: গাড়িতে চড়ে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি লেগে জরায়ু থেকে রক্তস্রাব হচ্ছে এমন একাধিক মহিলাকে হ্যামামেলিস প্রয়োগ করে রক্তস্রাব দ্রুত বন্ধ করাতে সক্ষম হয়েছি।
হোমিওপ্যাথিক ওষুধে কাজ না করা: আমি একথা দ্ব্যর্থহীনভাবেই বলতে চাই যে, বাজারে প্রচলিত ফিল্টার ব্যবহার করে পরিশ্রুত জল দিয়ে তৈরি হোমিওপ্যাথিক ওষুধ কখনই পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ করতে সক্ষম হবে না। কারণ এই ধরনের জলে ওষুধ তৈরি করা হলে তা অনেকাংশেই হানেমান নির্দেশিত মিশ্রপ্যাথির সমান অবস্থা তৈরি করে, যা মোটেও কাম্য নয়।
হোমিওপ্যাথিক ওষুধে জলের ব্যবহার: হোমিওপ্যাথিক ওষুধ সঠিকভাবে নির্বাচিত হলেও তা যথাযথভাবে কাজ করতে নাও পারে ওষুধ তৈরিতে যে জল ব্যবহার করা হয় , তার কারণে।
আমি অনেক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের দেখেছি বাজারে প্রচলিত ‘জল পরিশ্রুতকরণ যন্ত্র‘ (Water Purifier Machine) ব্যবহার করে পরিশ্রুত জল দিয়ে হোমিও ওষুধ তৈরি করে রোগীকে দিতে।
কিন্তু একথা ভুললে চলবে না যে এসব মেশিনে জল পরিশ্রুতকরণের জন্য ক্লোরিন ব্যবহার করা হয়, যা জলকে ক্লোরিনায়ন করে তোলে ।
এই ধরনের জলে হোমিও ওষুধ তৈরি করা হলে তা স্বাভাবিকভাবেই ক্লোরিনের সাথে বিক্রিয়া করবে। ফলে ওষুধের মৌলিক কার্যকারিতা তাতে যথেষ্টই বাধাগ্রস্ত হবে আর ওষুধও এতে তেমন ভালো কাজ করবে না।
হোমিওপ্যাথিক ওষুধের ক্রিয়া: হোমিওপ্যাথিক ওষুধের ক্রিয়া কেবল তাপেই বিনষ্ট হতে পারে । সে কারণেই হোমিওপ্যাথিক ওষুধ অতিরিক্ত তাপযুক্ত স্থানে রাখা যায় না।
আর এই কারণেই হোমিওপ্যাথিক ওষুধ যে শিশিতে তৈরি করে রোগীকে প্রদান করা হয়, পুনরায় সেই শিশি ব্যবহার করতে হলে গরম জলে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হয়। এক্ষেত্রে বলা ভালো শুধু শিশিই নয়, শিশির ক্যাপও ভালোভাবে গরম জলে ফুটিয়ে নিতে হয়।
পরিশেষে বলা যায়, উপরের আলোচনা আশা করি সবার জন্য ফলপ্রসু হবে। অভিজ্ঞ ডাক্তারদের ব্যক্তি জীবনের একেকটি সফলতা উপরে তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো খুব সহজ বিষয় নয়।
অভিজ্ঞতা থেকে যা লেখা হয় তা কখনো বৃথা যায় না। তাই হোমিও চিকিৎসক তথা সকল ছাত্রছাত্রীদের সকল অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া ও তাদের অনুসরণ করা উচিত। সবাই ভালো থাকবেন, দেখা হবে পরবর্তী কোনো আর্টিকেলে।
আরও পড়ুন: হস্তমৈথুন করে লিঙ্গ ছোট হয়ে গেছে? সমাধান জেনে নিন।