হোমিও চিকিৎসা সর্বজনীন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। এ চিকিৎসা পদ্ধতিতে রোগের নয় রোগীর চিকিৎসা করা হয়। একটি মাত্র ওষুধ এক মাত্রা প্রয়োগ করেই অনেক সময় বহু জটিল রোগ ভালো হয়ে যায়।
হোমিও চিকিৎসা বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক জনপ্রিয়। বহু অভিজ্ঞ ডাক্তার আছে যারা এখনও হোমিওপ্যাথির উন্নতিকল্পে কাজ করে যাচ্ছে।
ডা. আর্নেস্ট এ ফ্যারিংটন তেমনই একজন মানুষ। তিনি হোমিওপ্যাথির ওপর একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক ছিলেন। আজ আমরা তার জীবনের কিছু সফলতার কথা জানবো যেখানে তিনি ওষুধ প্রয়োগ করে সফল হয়েছেন। তো আর কথা নয় – সরাসরি যাচ্ছি মূল আলোচনায়।
হোমিও চিকিৎসা হিসেবে ডা. আর্নেস্ট এ ফ্যারিংটন এর মর্মবানী:
আর্কটিয়াম ল্যাপ্পা: আর্দ্র দুর্গন্ধ পীড়কায় ধূসরাভ শ্বেতবর্ণ চিপিটিকা জন্মালে, বিশেষত গ্রন্থি স্ফীত হলে , এমনকি কক্ষ-গ্রন্থি পাকলেও আর্কটিয়ামি ল্যাপ্পা ফলপ্রদ।
আর্জেন্ট নাইট: চক্ষু প্রদাহে বিশেষত পিঁচুটি জন্মালে, পালসেটিলা প্রয়োগ করার পর তা কাজ করতে না পারলে অর্থাৎ ব্যর্থ হলে আর্জেন্ট নাইট প্রয়োগ করা যায়।
আবার যেসব রোগে আর্জেন্ট নাইট উপযোগী, তাতে প্রায়ই শিরোঘূর্ণন থাকে, শিরোঘূর্ণনসহ সর্বাঙ্গীন দুর্বলতা ও স্নায়ুবিক দুর্বলতাজনিত কম্পন থাকে এমন লক্ষণে আর্জেন্ট নাইট বিশেষ ফলপ্রদ।
আর্জেন্ট নাইট: মৃগী রোগাবেশের কয়েকদিন বা কয়েক ঘন্টা পূর্বে রোগীর চোখের তারার প্রসারণ এবং রোগাবেশের পরে অতিশয় অস্থিরতা ও হাত কাঁপা আর্জেন্ট নাইট ওষুধের প্রধান প্রয়োগ লক্ষণ। ভয়জনিত বা ঋতুকালে সমাগত মৃগী রোগ লক্ষণে আর্জেন্ট নাইট বিশেষ উপযোগী।
আর্নিকা মন্ট: রাতে ঘুম না হয়ে মাংসপেশিতে ব্যথা ব্যথা ভাব ও অত্যন্ত ক্লান্তিভাব থাকলে আর্নিকা মন্ট ২০০ এক মাত্রায় সেসব উপসর্গ দূর করতে পারে।
আর্সেনিক এল্ব: টাইফয়েড জ্বরের প্রথমাবস্থায় লক্ষণের অভ্রান্ত সাদৃশ্য ব্যতীত আর্সেনিক এল্ব ব্যবহার করতে নেই। করলে বিপদ ঘটার সম্ভাবনা থাকে। রোগীর মানসিক অবস্থা নিশ্চিত সন্দেহহীন রুপে আর্সেনিক সূচন না হলে আর্সেনিক এল্ব ব্যবহারের উপকার না হয়ে বরং অপকার হয়।
আর্সেনিক এল্ব: আর্সেনিক সম্পর্কে আমি একটি সতর্ক বাণী উপস্থাপন করতে চাই যে, সচরাচর রোগের সূচনা অবস্থায় প্রয়োগ কারার ওষুধ এটি নয়। এর ঝোঁক লক্ষণগুলো নিম্নমুখী করে দেয়।
তুমি উদ্বেগ এড়াতে প্রয়োজনের অপেক্ষা তাড়াতাড়ি প্রয়োগ করলে দেখবে যে রোগীর লক্ষণগুলো নিম্নগতির দিকে ঝুকে পড়ছে।
এটি অবধারিত যে , তুমি অবশ্যই মানসিক অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হবে। অন্যথায় অর্সেনিক উপকারের পরিবর্তে অনিষ্টই ঘটাবে।
এনাকার্ডিয়াম ওরি: রোগী যদি মনে করে যে তার মনটি তার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং কেউ তার পশ্চাদে অনুসরণ করছে – সেক্ষেত্রে এনাকার্ডিয়াম ওরি বিশেষ উপকারী।
এনাকার্ডিয়াম ওরি: গ্যাস্ট্রিক লক্ষণে রোগী প্রায়ই কোষ্ঠবদ্ধতা থাকে এবং তা তার গুহ্যদ্বারের পেশির পক্ষাঘাতের কারণেই হয়ে থাকে- এমন রোগ লক্ষণে এনাকার্ডিয়াম ওরি বিশেষ ফলপ্রদ।
এরানিয়া ডায়াডেমা: এরানিয়া ডায়াডেমার সমস্ত লক্ষণ আর্দ্র ঋতুতে ও আর্দ্র স্থানে বিবর্ধিত হয়। পুরানো সবিরাম জ্বরেই এই কথার যথার্থতা বিশিষ্টরুপে প্রত্যক্ষ করা যায়।
এসিডাম মিউর: যকৃতের সিরোসিসের ফলে শোথ যখন অন্তিম অবস্থায় পৌঁছায়, তখন এসিডাম মিউর অত্যন্ত উপকারী।
কক্কাস ক্যাক্টি: বালক নিদ্রা থেকে জাগ্রত হওয়ামাত্র কাশির আবেশ উপস্থিত হয়ে বমনে পরিসমাপ্তি হলে এবং মুখ থেকে পরিষ্কার রজ্জুর মতো শ্লোষ্মা দীর্ঘ দড়ির মতো ঝুলে থাকলে কক্কাস ক্যাক্টি ওষুধটি সুব্যবস্থেয়।
কলচিকাম: খাদ্যদ্রব্যে অরুচি বা খাদ্যদ্রব্যের গন্ধে ও নাম শুনলে বিবমিষা , বমি ইত্যাদি হলে কলচিকাম উপকারী।
আবার খাদ্যদ্রব্য বা রন্ধনের গন্ধ – বিশেষত মাছ, ডিম, মাংসের গন্ধ একেবারেই সহ্য হয় না লক্ষণে কলচিকাম উপকারী।
পালসেটিলা: কোনো রোগে আর্জেন্ট নাইট নির্বাচিত ওষুধ হলে তা যদি যথাযথভাবে কাজ না করে তবে পালসেটিলা প্রয়োগে উপকার পাওয়া যায়।
ফসফরাস: এই ওষুধ সাবধানে ব্যবহার না করলে তা উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করে থাকে। নিশ্চিত ওষুধ নিরুপিত তা বারবার ব্যবহার করা উচিত নয়, তাহলে যা নিবারণ করার চেষ্টা করা যায়, তাই সত্বর ফিরে আসে।
যেসব রোগীর যক্ষারোগ সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে, তাদের পক্ষে ফসফরাস উপযুক্ত নয়। ফুসফুসে গুটিকা (টিউবারকল) সঞ্চিত, এবং ফসফরাসের লক্ষণ সুনিশ্চিত না হলে এই ওষুধ ব্যবহার করা উচিত নয়।
ফসফরাস: এটি একটি শক্তিশালী এন্টিসোরিক ওষুধ, কিন্তু যেখানে সার্বিক দুর্বলতা, যেখানে কামেচ্ছার অভাব অথবা যেখানে জীবনীশক্তি দুর্বল এবং বিধ্বস্ত, সেখানে এটি ব্যবহার করা হয় না।
পরিশেষে বলা যায়, হোমিওপ্যাথির সাইড ইফেক্ট খুবই কম। নাই বললেই চলে। তাই যেকোন সমস্যায় হোমিও চিকিৎসা গ্রহণ করুন। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করতে হবে।
যদিও এখানে লক্ষণানুযায়ী ওষুধ এর কথা বলা হয়েছে কিন্তু এই তথ্যগুলো সাধারন পাঠকগণের কেবল জানার জন্য। আর প্রয়োগ তারাই করবেন যারা বর্তমানে ডাক্তারী প্রাকটিস করছেন কিংবা যারা হোমিওপ্যাথি পড়াশোনা করছেন।
আরও পড়ুন: ডা. আর হেল এর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ও মর্মবানী।