মহাত্মা স্যামুয়েল হ্যানিম্যান এর হোমিওপ্যাথি বিষয়ক মর্মবাণী
হোমিওপ্যাথি হলো এক ধরণের বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি। জার্মান বিখ্যাত চিকিৎসক স্যামুয়েল হ্যানিম্যান ১৯৭৬ সালে এ চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।
এ চিকিৎসা পদ্ধতি ভারতীয় উপমহাদেশে খুবই জনপ্রিয়। এই চিকিৎসা পদ্ধতিকে বলা হোমিওপ্যাথি। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকগণ এ পদ্ধতির উন্নতি সাধনে এখনও কাজ করে যাচ্ছেন।
এ চিকিৎসা পদ্ধতি অনুযায়ী, যে পদার্থ কোনো সুস্থ্য মানুষের মধ্যে রোগের উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে সেই একই পদার্থ আবার অসুস্থ্য মানুষের মধ্যে একই ধরণের উপসর্গ নিরাময় করতে পারে।
এই মতবাদকে তাই বলা হয় সদৃশ সদৃশকে আরোগ্য করে। জার্মান ভাষায় বলা হচ্ছে- সিমিলিয়া সিমিলিবাস কিউরেন্টার।
সাধারণত হোমিওপ্যাথিতে ব্যবহারকৃত সকল ওষুধকে রেমিডি বলা হয়। আর এটি হোমিওপ্যাথিক ডায়ালেশন পদ্ধতি ব্যবহার করে তৈরী করা হয়।
যাইহোক, মহাত্মা স্যামুয়েল হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথি নিয়ে অনেক মর্মবাণী রেখে গেছেন। তার কিছু কথা ও চিকিৎসা পদ্ধতি আজ এখানে তুলে ধরা হবে। আশা করি, হোমিওপ্যাথি ছাত্র, শিক্ষক তথা হোমিওপ্যাথি ভালোবাসেন এমন সবার এই আর্টিকেল এর তথ্যগুলো কাজে লাগবে।
অচির রোগের প্রকারভেদ:
- এক প্রকার রোগ ব্যক্তিবিশেষকে আক্রমণ করে।
- এক প্রকার রোগ একই সময়ে অনেক ব্যক্তিকে আক্রমণ করে।
- এক প্রকার রোগ ব্যাপক সংক্রামক প্রকৃতির হয় যা মহামারী হিসেবে আবির্ভূত হয়।
অচির রোগের রূপান্তর: মারাত্মক প্রকৃতির দৈহিক অচির রোগ অনেকক্ষেত্রে মানসিক ব্যাধিতে রূপান্তরিত হয়। ফলে দৈহিক ব্যাধি অনেকাংশে কমে যায়।
অত্যানুভূতিযুক্ত রোগীর ক্ষেত্রে ওষুধ প্রয়োগ: যদি দেখা যায় রোগী স্পর্শকাতর ও অত্যানুভূতিযুক্ত, তবে ওষুধটি ১০ ঝাঁকি দিয়ে ১ দাগ ওষুধ ১টি গ্লাসের চারভাগের তিন ভাগ পূর্ণ বিশুদ্ধ জলের সাথে মিশিয়ে পরিষ্কার চামচ দিয়ে নেড়ে ১ টেবিল চামচ উক্ত গ্লাস থেকে সেবন করাতে হবে। বাকি দ্রব ফেলে দিতে হবে।
পরবর্তী ওষুধও একই নিয়মে সেবন করতে হবে। প্রতিবার ওষুধ সেবন করার সময় এই কাজটি অবশ্যই করতে হবে।
অত্যাশ্চর্য ও বৈশিষ্ট্যজ্ঞাপক লক্ষণ: রোগীর সাধারণ লক্ষণ বৈশিষ্ট্য দিয়ে প্রভাবিত না হয়ে রোগীর অত্যাশ্চর্য ও বৈশিষ্ট্যজ্ঞাপক লক্ষণের প্রতি বিশেষ জোর দিতে হবে।
অসদৃশ চিকিৎসা পদ্ধতি: অসদৃশ বা বিপরীত চিকিৎসা পদ্ধতি শুধু এ কারণে ত্রুটিপূর্ণ নয় যে, এটি রোগের একটিমাত্র বাছাই করা লক্ষণের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়।
এই পদ্ধতির চিকিৎসায় রোগের প্রাথমিক উপশমের পর প্রতিটি ক্ষেত্রেই রোগের প্রচণ্ড বৃদ্ধি সংঘটিত হয়।
আঘ্রাণ পদ্ধতিতে ওষুধ প্রয়োগ: নির্বাচিত ওষুধটির উচ্চ শক্তির একটি ছোট বড়ি জলে ভিজিয়ে একটি শিশিতে নিতে হবে। রোগী এই শিশিটিকে নাকের কাছে ধরে কিছুক্ষণের জন্য ঘ্রাণ নেবে।
ঘ্রাণের মাধ্যমে নিঃশ্বাসের সাথে শক্তিকৃত ওষুধের ক্রিয়া নাকের ভেতর দিয়ে ফুসফুস পর্যন্ত বিস্তৃত হয় বলে মুখে ওষুধ সেবনের মতোই কার্যকরী হয়।
আদর্শ আরোগ্যের জন্য ওষুধ প্রয়োগ: প্রতিটি রোগের আদর্শ আরোগ্যের জন্য একটিমাত্র ওষুধ ও একমাত্রা প্রয়োগই যথেষ্ট যদি ওষুধের চরিত্র ও রোগীর রোগ লক্ষণের সাথে সদৃশতম (Similimum) হয়।
আর্নিকা মন্ট: ফোঁড়া প্রতিরোধ ও আরোগ্যের জন্য আমি আর্নিকা মন্ট ব্যবহারের নির্দেশ দেই।
আর্নিকা মন্ট: বিশুদ্ধ প্রদাহিক পীড়ার সাথে প্রধানত আক্রান্ত স্থান উত্তপ্ত থাকলে আমরা কখনোই আর্নিকা মন্ট বাহ্য প্রয়োগ করবো না।
এমন রোগীর ক্ষেত্রে সর্বদা বেদনাদায়ক হবে। কারণ এর ক্রিয়ার বিচিত্র ধরণ হতে এটি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান।
আরোগ্য ক্রিয়া ত্বরান্বিত ও প্রতিক্রিয়াবিহীন করা: রোগীর রোগারোগ্য ক্রিয়া ত্বরান্বিত করা ও প্রতিক্রিয়াবিহীন করার জন্য তিনটি বিষয়ে জ্ঞাত হওয়া প্রয়োজন। তিনটি বিষয় হলো:
- রোগ নিরাময়ের জন্য অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ওষুধটি নির্বাচন করতে হবে যাতে ওষুধটি রোগের মধ্যে সম্পূর্ণ সদৃশযুক্ত হয়।
- ওষুধটিকে উচ্চ শক্তিতে পরিণত করতে হবে। জলে দিতে হবে এবং যথাযথ ক্ষুদ্রমাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
- ওষুধটি নির্দিষ্ট সময়ান্তরে পরিবর্তিত শক্তিতে পূণঃপ্রয়োগ করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই একই শক্তির ওষুধ বার বার প্রয়োগ করা যাবে না।
আরোগ্য: সব রোগ লক্ষণ দূর হলে কেবল সম্পূর্ণ ব্যাধির আরোগ্য হয়।
আরোগ্য সাধ্য রোগ: মানবদেহের আরোগ্যযোগ্য রোগ চিকিৎসকের কাছে লক্ষণসমুহের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করবেই।
ইগ্নেশিয়া: পর্যায়ক্রমে প্রফুল্লতা ও বিমর্ষতা রোগে ইগ্নেশিয়া প্রয়োগের বিশেষ লক্ষণ।
আরও পড়ুন: সোরিয়াসিস নামক চর্মরোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়।
ইপিকাক: বমনশূন্য পুরানো বমন-প্রবৃত্তিতে ইপিকাক ব্যবহার করা যেতে পারে।
উপযুক্ত আরোগ্যদায়ক হোমিওপ্যাথিক ওষুধ: যোগ্যতম ওষুধের লক্ষণ তালিকা থেকে যে প্রতিরূপ তৈরী করা হয় তার মধ্যে যদি সেসব বিচিত্র, অসাধারণ, অনন্য এবং বিশিষ্ট (পরিচায়ক) লক্ষণসমুহ বিদ্যমান থাকে যেগুলো অধিক সংখ্যায় ও অধিকতর সাদৃশ্যসহ যে রোগ চিকিৎসা করতে হবে তার মধ্যে দেখা যায় তাহলে সেই ওষুধই হবে রোগে সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত আরোগ্যদায়ক হোমিওপ্যাথিক ওষুধ।