হেপাটাইটিস রোগ:
হেপাটাইটিস একটি জটিল রোগ। প্রতি বছর এই রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ত্রিশ লক্ষ মানুষ মারা যায়। প্রতি বছর ২৮ জুলাই হেপাটাইটিস দিবস পালন করা হয়।
এই রোগটি ছোয়াচে নয়। আগেই বলে রাখি, এটি কিন্তু লিভারের রোগ। তাই একজনের কাছ থেকে আরেক জনের কাছে ছড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
সাধারণত বর্ষার সময় এই রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি হয়। তাই বর্ষাকালে একটু বেশি সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার এবং সচেতন হওয়া দরকার।
হেপাটাইটিস কি:
হেপাটাইটিস হলো আসলে লিভারের রোগ। সাধারণত নানা ধরণের দূষিত খাবার-দাবার এবং পানির মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়।
হেপাটাইটিস রোগটি পুরোপুরি ছড়িয়ে না পড়া পর্যন্ত তেমন কোনো নির্দিষ্ট লক্ষণ দেখা যায় না। তবে এ রোগে আক্রান্ত হলে শরীর দূর্বল হয়ে যাওয়া, বমি-বমি ভাব হওয়া, পেট ব্যথা হওয়া এবং শরীরের মধ্যে হলুদাভাব আসা – এই লক্ষণগুলো দেখা যায়।
প্রস্রাবের মাধ্যমেও এই রোগের লক্ষণ বোঝা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রস্রাবের রং হলুদ হয়ে যায়। প্রস্রাবে সাধারণত জ্বালাপোড়া থাকে না।
আপনার শরীরে যদি এই হেপাটাইটিস রোগের বিস্তার ঘটে তবে কিছু লক্ষণ মারাত্মভাবে পরিলক্ষিত হতে পারে। যেমন- পেটের মধ্যে পানি আসা, রক্ত বমি এবং রক্ত পায়খানা ইত্যাদি।
হেপাটাইটিস এর প্রকারভেদ সহ বিস্তারিত আলোচনা:
জেনে রাখা ভালো, হেপাটাইটিস এর মোট ৫টি ভাইরাস আছে। এগুলো হচ্ছে- এ, বি, সি, ডি এবং ই। এগুলোর মধ্যে টাইপ বি এবং সি সবচেয়ে ভয়াবহ।
কারণ, টাইপ বি এবং টাইপ সি এর কারণে লিভার সিরোসিস এবং ক্যান্সার হতে পারে। প্রথম অবস্থায় বোঝা না গেলে অল্প দিনের মধ্যেই অবস্থা খুব খারাপ দিকে চলে যায় এবং লিভার নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
আগেই বলা হয়েছে, এ রোগ সাধারণত পঁচা-বাসি কিংবা দূষিত খাবার এবং দূষিত পানির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। উপরে উল্লিখিত লক্ষণগুলো ছাড়াও আরো কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন- লিভার ফুলে বড় হয়ে যাওয়া, জ্বর আসা, বমি-বমি ভাব কিংবা বমি হওয়া, খাওয়ায় অরূচি আসা, ক্ষুধা কমে যাওয়া, শরীরের জয়েন্টগুলোতে ব্যথা হওয়া ইত্যাদি।
হেপাটাইটিস বি নামক মারাত্মক এই ভাইরাসটি রক্ত কিংবা দেহ হতে নিঃসৃত যেকোন তরলের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। সাধারণত রক্তে থাকা ভাইরাস এবং এর বিরুদ্ধে যে অ্যান্টিবডি থাকে তা থেকে এই রোগটি নির্ণয় করা হয়।
এই রোগ হলে রোগীর শরীরের লিভারের উপর খুব খারাপ প্রভাব পড়ে। প্রচণ্ড ক্লান্তি আসতে পারে। সম্পূর্ণ শরীর হলুদ হয়ে যেতে পারে।
লিভারের এটি এমন একটি রোগ যা হলো সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী। লিভারের সবচেয়ে মারাত্মক রোগ এটি। আপনি জানলে অবাক হবেন যে, কোনো গর্ভবতী নারী যদি গর্ভাবস্থায় এই রোগে আক্রান্ত হন তবে তার গর্ভস্থ শিশুটিও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
অন্যদিকে, হেপাটাইসিস সি – এই ভাইরাসটিও টাইপ এ এবং বি এর চেয়ে অনেক বেশি বিপজ্জনক। শিরা থেকে শিরায় ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে রক্তের সাথে রক্তের সংযোগের ফলে এটা ছড়াতে পারে।
এছাড়াও জীবাণুযুক্ত সরঞ্জাম ও রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। সমগ্র পৃথিবীতে আনুমানিক ১৩০-১৭০ মিলিয়ন মানুষ হেপাটাইটিস টাইপ সি’তে আক্রান্ত।
যারা হেপাটাইটিস সি তে আক্রান্ত হন তাদের সাধারণত তেমন কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ থাকে না। যখন এ সংক্রমণটি সুপ্ত অবস্থায় থেকে এক সময় দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায় তখন লিভারে ক্ষত হয় এবং লিভার সিরোসিস হয়।
কোনো কোনো সময় লিভার সিরোসিস আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তির লিভার একদম অকার্যকর হয়ে যায় এবং ফলশ্রতিতে সেখানে ক্যান্সার হয়ে যেতে পারে। খাদ্যনালী কিংবা পাকস্থলীর শিরা সরু বা স্ফীত হয়ে যেতে পারে। ফলশ্রুতিতে রক্তক্ষরণ হয়ে অনেকের মৃত্যু হতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন: লিভার ভালো রাখতে করণীয় কি জানুন।
হেপাটাইটিস টাইপ ডি সাধারণত টাইপ বি ও সি থেকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সাধারণত দূষিত রক্তের সংক্রমণ, সংক্রমিত সূঁচের যথেচ্ছ ব্যবহার কিংবা শেভিং এর মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। হেপাটাইটিস টাইপ ডি এর কারণে সাধারণত বমি-বমি ভাব এবং হালকা জ্বর হতে পারে।
কেবল দূষিত খাবারের মাধ্যমে হেপাটাইটিস টাইপ-ই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। যখন কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয় তখন সাধারণত ক্লান্তি লাগা, ওজন কমে যাওয়া, সম্পূূর্ণ ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া, জ্বর-জ্বর ভাব হওয়া সহ আনুষঙ্গিক আরও কিছু লক্ষণ দেখা যায়।
পৃথিবীর মধ্যে কেবল ইন্ডিয়া’য় এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কম (হেপাটাইটিস টাইপ-ই)। টাইপ-ই এর কারণে ত্বক ফ্যাকাসে হয়ে যেতে পারে।
আপনার মধ্যে যদি হেপাটাইটিস রোগের কোনো লক্ষণ থেকে থাকে তবে অনুগ্রহ করে সময় নষ্ট করবেন না। যতো দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতালে কিংবা আপনার হাতের নাগালে যেসব ভালো ডাক্তার রয়েছেন তাদের চিকিৎসা নিন।