দীর্ঘদিন যাবত কেউ হৃদরোগ রোগে ভুগতে ভুগতে হঠাৎ খুব বেশি অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে – অনেক সময়ই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়। যদি এই সকল অসুবিধা সংক্ষিপ্ত ও ক্ষুদ্র কোন অসুস্থ্যতা হয় যেমন- নাক দিয়ে রক্তপাত, মাথা ধরা, শ্বাস-কষ্ট তাহলে ডাক্তার বা হাসপাতালের সাহায্যের দরকার হয় না।
অনেক সময় হঠাৎ অসুস্থ্যতা সর্বক্ষেত্রেই জরুরী নয় তবুও হৃদযন্ত্রের অসুস্থ্যতা বা শরীরের মধ্যে প্রচুর রক্তক্ষরণ জীবননাশের কারণ হয়ে দাড়ায়। এমন পর্যায়ে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে পৌছানোই হলো প্রাথমিক চিকিৎসা।
মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ, মৃগী বা খিঁচুনীর রোগ, হৃদরোগে অসুস্থ্য রোগী অজ্ঞান হয়ে পড়েছে তাহলে কারও উপস্থিতিতে ঐ ব্যক্তির শরীর পরীক্ষা করা উচিত এবং দেখতে হবে যে তার পকেটে কোন প্রেসক্রিপশন কার্ড বা কোন ওষুধ আছে কিনা।
হৃদরোগ বা অসুস্থ্যতা:
অনেক সময় হৃদরোগে রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে যদি হার্টের কোন অংশের রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় তাহলে তাকে করোনারী হার্ট অ্যাটাক বা করোনারী রোগ বলে।
রোগী হার্ট অ্যাটাকের কারণে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে বা নাও পারে। তবে রোগের আক্রমণ মারাত্মক হলে রোগী হঠাৎ মারা যেতে পারে। এসব রোগীর পূর্বের কোন ইতিহাস থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে সামান্য বুকের ব্যথা থাকতে পারে। ব্যথার তীব্রতা এই রোগের জরুরীত্ব নির্ণয় করে না।
রোগীর অভিযোগ ও লক্ষণ:
১. সকল সময়ের জন্য বুকের মাঝখানে ব্যথা করে। এই ব্যথা অনেক সময় হাতে, কাঁধে, ঘাড়ে বা মাড়িতে ছড়াতে পারে।
২. উদ্বেগ এবং ব্যায়ামের পরে শ্বাসকষ্ট হয়।
৩. রোগী সাদা হয়ে যায় নতুবা ঠোঁট, চামড়া বা নখ নীল হয়ে যায়।
৪. খুব কষ্ট করে সংক্ষিপ্ত শ্বাস নেয়।
৫. রোগী দ্রুত দূর্বল হয় এবং নাড়ীও অনিয়মিত হয়।
৬. রোগী খুবই ঘেমে যায়।
৭. রোগীর শক হয়।
৮. কোন রোগীর পায়ের গিড়া ফোলা দেখে বোঝা যাবে যে ঐ ব্যক্তি হার্টের রোগী।
৯. হৃদরোগের প্রধান লক্ষণ হলো বুকে ব্যথা (বুকে বা কাঁধ থেকে আরম্ভ করে আঙুল পর্যন্ত) এবং উপরের পেটে।
১০. বুকে সুঁচ ফোটানোর মতো ব্যথা থাকে। অনেক সময় মনে হয় বিরাট ওজনের কিছু বুকে চেপে আছে।
১১. অনেক সময় হৃদরোগের সাথে বদ হজম, বমি বমি ভাব বা বমিও হতে পারে।
হৃদরোগ হলে প্রাথমিক চিকিৎসা:
১. রোগীর নিজস্ব ইচ্ছা মোতাবেক থাকতে হবে অর্থাৎ যে অবস্থায় রোগী আরাম অনুভব করে সে অবস্থায় রাখতে হবে।
২. রোগীকে খোলা বাতাসে থাকতে দিতে হবে। লোকজন যেন রোগীর চারপাশে ভিড় না জমায়। রোগীকে ঠাণ্ডা হতে দেওয়া যাবে না।
৩. রোগী যদি শ্বাস গ্রহণ করতে না পারে তবে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. রোগীর ব্যক্তিগত চিকিৎসককে ডাকবার ব্যবস্থা করতে হবে। অক্সিজেনসহ অ্যাম্বুলেন্সের জন্য যোগাযোগ করতে হবে।
৫. রোগী যদি কোন ডাক্তারের চিকিৎসাধীন থাকে তবে ব্যবস্থা মোতাবেক ওষুধ দিতে হবে। প্রয়োজনবোধে ডাক্তারের সাথে রোগীর ব্যাপারে সরাসরি আলাপ করতে হবে।
৬. অজ্ঞান রোগীকে কোন কিছু তরল খাবার দেওয়া চলবে না।
৭. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া স্থান পরিবর্তন করা চলবে না। কেননা রোগী এতে কষ্ট পেতে পারে।
পথ্য ও আনুষঙ্গিক চিকিৎসা ব্যবস্থা:
১. ভিন্ন ভিন্ন হৃদরোগ এর জন্য ভিন্ন ভিন্ন ওষুধ আছে। যদি কেউ মনে করে যে, কেউ হৃদযন্ত্রের রোগে ভুগছে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে বা যতো দ্রুত সম্ভব অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
২. হার্টের রোগীর জন্য শক্ত বা কঠিন কাজ করা উচিত নয় কারণ এতে বুকের ব্যথা বা শ্বাস-কষ্ট বেড়ে যেতে পারে।
৩. হার্টের রোগীর তৈলাক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। শরীরের ওজন মাত্রাতিরিক্ত হলে খাওয়া নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়াম করে তা স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে হবে।
৪. হার্ট অ্যাটাক হলে যতক্ষন হার্টের ব্যথা না কমে ততক্ষণ বিশ্রাম নিতে হবে।
৫. ধুমপানের অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে।
৬. পরিমাণ মতো যথেষ্ট বিশ্রাম নিতে হবে এবং ঘুমাতে হবে।
৭. যেসব কাজে উদ্বেগ বাড়ে সেসব ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: হার্টের রোগ সারাতে হোমিওপ্যাথির সাফল্য।
৮. বেশি নড়াচড়া করা চলবে না। ধীরে সুস্থ্যে চলাফেরা করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। খাবারে কাঁচা লবণ খাওয়া বন্ধ করতে হবে এবং তরকারি রান্নার সময়ও কম দিতে হবে।