হার্টের রোগ সারাতে হোমিওপ্যাথির বেশ সাফল্য রয়েছে। হার্টের রোগ সাধারনত একটু বয়স্ক মানুষদের বেশি হয়। তবে ছোট, বড় বা মাঝারি সব বয়সী মানুষই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
হোমিওপ্যাথি হলো লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ধৈর্য্য ধরে চিকিৎসা নিতে হয়। হার্টের রোগ খুব কঠিন রোগ। রোগ লক্ষণ দেখা দেয়া মাত্রই যদি চিকিৎসা শুরু করা হয় তবে সুস্থ্য হতে তেমন সময় লাগে না। তো চলুন মূল আলোচনা শুরু করি।
বেশি দৌড়-ঝাঁপ, ব্যায়াম প্রভৃতি করলে এ রোগ হয়। হৃদরোগ, হৃদস্পন্দন, হৃদশূল প্রভৃতিকে বলা হয় হৃৎপিণ্ডের রোগ। এ রোগ হলে পেশীর দুর্বলতা দেখা দেয়, শ্বাসকষ্ট হয়, মুর্ছাও হয়ে থাকে, হৃৎকম্পন দেখা দেয়।
হৃৎপিণ্ডের বাঁ পাশে বা ডান পাশে ব্যথা হয়, নাড়ী ক্ষীণ হয়, মৃত্যুভয় দেখা দেয়, শোক, ভয়, মানসিক উত্তেজনা, অজীর্ণতা সহ প্রভৃতি লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়।
বুক ধড়ফড় করা, অবসন্নতা, কেউ হৃৎপিণ্ডে চেপে ধরেছে মনে হওয়া প্রভৃতি লক্ষণও দেখা দিয়ে থাকে। এ রোগ হলে উত্তেজক খাদ্য গ্রহণ, মদ্যপান, চা-কফি পান, ধুমপান, অতিরিক্ত কায়িক বা মানসিক পরিশ্রম, রোদে ঘুরাঘুরি, বেশি হাঁটা-চলা প্রভৃতি করা উচিত নয়।
নির্দিষ্ট সময়ে গোসল ও খাওয়া-দাওয়া করা দরকার। বেশি বিশ্রাম নেয়া দরকার। ভালো ঘুমও দরকার। রাত্রি জাগরণ এ রোগের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। হালকা ধরণের পুষ্টিকর খাদ্য ও উন্মুক্ত বায়ু গ্রহণ এ রোগের পক্ষে বিশেষ প্রয়োজন।
হৃদরোগের চিকিৎসা: হাঁটা-চলা বা ব্যায়ামের ফলে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটলে এ রোগ হয়। বুক ধড়ফড় করা, হৃৎপিণ্ডে শব্দ সহ স্পন্দন প্রভৃতি প্রধান লক্ষণ।
মাথা ঘোরা, হৃৎপিণ্ডের পেশীর দুর্বলতা, হাঁপানি হৃৎকম্পন প্রভৃতি লক্ষণে- ডিজিটেলিস ৩x।
ব্যায়ামের ফলে এ রোগ হলে- আর্নিকা ৬।
বাতগ্রস্ত রোগীর এ রোগ হলে- ফাইটোলাক্কা ৬।
হৃৎপিণ্ডের ডান পাশে ব্যথা বাড়লে- পালসেটিলা ৬।
শ্বাসকষ্ট, দ্রুত নাড়ী, হৃৎপিণ্ডের বাঁ পাশে ব্যথা, হৃৎপিণ্ডের ক্রিয়া বৃদ্ধি সহ প্রভৃতি লক্ষণে- অ্যাকোনাইট ৩।
হৃৎস্পন্দনের চিকিৎসা: অতিরিক্ত পরিশ্রম, অজীর্ণতা দোষ, মানসিক উত্তেজনা, ভয়, শোক, উচ্ছ্বাস, শরীরের উপর অত্যাচার প্রভৃতি কারণে রোগটা হয়। মুখমণ্ডল নানা বর্ণের হওয়া, বুক ধড়ফড় করা, হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া প্রভৃতি প্রধান লক্ষণ।
পাকাশয়ের গোলযোগ হেতু বুক ধড়ফড় করলে- নাক্সভমিকা ৬। ১ ফোঁটা করে দিনে ৩ বার সেব্য।
মানসিক উত্তেজনা, অতিরিক্ত পরিশ্রম প্রভৃতি কারণে এ রোগ হলে- ডিজিটেলিস ৩০। দিনে ৩ বার ১ ফোঁটা করে ঠাণ্ডা পানি সহ সেব্য।
উপরের ওষুধে কাজ না হলে- আইবেরিস (মাদার) ২ ফোঁটা করে দিনে ৩ বার সেব্য।
ভারী জিনিস উত্তোলন বা ব্যায়ামের সময় বুকে ব্যথা লেগে এ রোগ দেখা দিলে- আর্নিকা ৩। ১ ফোঁটা করে দিনে ২ বার সেব্য।
কেউ যেন হৃৎপিণ্ডে চেপে ধরে আছে, এমন মনে হলে- ক্যাক্টাস ৩x। গরম দুধ সহ তিনটি করে বড়ি দিনে ৪ বার সেব্য।
হাত-পা অবশ হলে, মুখমণ্ডল নানা বর্ণের হলে, হৃদস্পন্দন দ্রুত হলে- অ্যাকোন ৩x।
হৃদস্পন্দন প্রবল হলে- সালফার ৩০। ১ ফোঁটা করে দিনে ৩ বার সেব্য।
হৃদশূলের চিকিৎসা: শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, ঘাস, মুর্ছা প্রভৃতি এ রোগের লক্ষণ।
অনিদ্রা, বুক ধড়ফড় প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দিলে- বেলেডোনা ৩।
হৃদস্পন্দন যদি বার বার হয়, মূর্ছা হয়, এমন লক্ষণে- অ্যাসিড হাইড্রো ৬।
পেটের গোলযোগ হেতু হৃদশূল হলে- নাক্সভমিকা ৬।
শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে- অ্যামিল নাইট্রেট ৬ বা গ্লোনয়িন ৩x।
নাড়ী ক্ষীণ, চোখ বসে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি লক্ষণে- আর্সেনিক ৬।
পরিশেষে বলা যায়, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় হার্টের রোগ সারাতে হলে যেমন তেমন চিকিৎসকের কাছে গেলে হবে না। অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
আরও পড়ুন: দাঁত ব্যথা হওয়ার কারণ এবং নিরাময়ের উপায়।
আর যদি অপারেশন করার প্রয়োজন হয় তবে অবশ্যই একজন সার্জারী বিশেষজ্ঞ দেখাতে হবে। সেক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথির উপর নির্ভরতা কমাতে হবে। কারণ, অপারেশন শুধু অ্যালোপ্যাথিতেই সম্ভব।
লক্ষণ মিলে গেলেও নিজে নিজে চিকিৎসা করতে যাবেন না বা ওষুধ খেতে যাবেন না। তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে। এখানে শুধু মাত্র জানার স্বার্থে ওষুধগুলোর নাম তুলে ধরা হয়েছে।