স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর কৌশল:
প্রতিটি মানুষের জন্যই স্মৃতিশক্তি ব্যাপারটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, স্মৃতিশক্তি ছাড়া একজন মানুষ কিছুই মনে রাখতে পারে না। তখন তাকে পূর্ণাঙ্গ মানুষও বলা যায় না।
মস্তিষ্কের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার তথ্য ধারণ করে রাখার নামই স্মৃতি। প্রথমে স্মৃতিতে কোনো তথ্য জমা করা হয় এবং তারপর সেই তথ্য প্রয়োজন অনুযায়ী বের করা হয় অথবা খুঁজে নিয়ে আসা হয়।
কখনো যদি এই তথ্যগুলো মস্তিষ্কের মধ্য থেকে সঠিকভাবে বের হয়ে না আসতে পারে বা অনেক দেরি হয় কিংবা হারিয়ে ফেলে তখনই বলা হয় স্মৃতিশক্তির সমস্যা। মানসিক সমস্যা থেকে এ ধরণের সমস্যা বেশি হয়।
আজকের কথা কাল, কালকের কথা পরশু কিংবা ১০ বছর আগের কোনো কিছু মুহূর্তেই বলে ফেলতে পারার নামই স্মৃতিশক্তি। স্মৃতিশক্তি দূর্বল হলে জীবনে চলতে ফিরতে অনেক কষ্ট হয়।
কারও সাথে কথা বলতে গেলে হঠাৎ করে থেমে যেতে হয়। আবার, হিসাব-নিকাশ ভুলে যায়। তাই স্মৃতিশক্তির ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হওয়া দরকার।
আজকের আলোচনায় আমরা কেবল স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করবো। নিম্নে সেই উপায়গুলো বর্ণিত হলো:
পরিমিত ঘুম: সারাদিনের কাজের পর রাতে আমরা ঘুমাতে যাই। কারণ, ঘুমের মাধ্যমে শরীরের সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। অন্যদিকে, রাতে ঘুম কম হলে তা বার্ধক্য প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে মস্তিষ্কে বড় ধরণের বাঁধার সৃষ্টি করে।
এই ধরণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পর্যাপ্ত ঘুম জরুরী। বিজ্ঞান থেকে জানা যায়, ঠিক মতো ঘুম না হলে মস্তিষ্ক অন্তত সাত বছর সময়েরও বেশি বুড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করা: নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করলে শরীর অনেক ভালো থাকে। শারিরীক ব্যায়ামও হয়ে যায়। আমাদের মস্তিষ্কও সুস্থ্য থাকে।
সাধারণত প্রতিদিন সকালে ৩০ মিনিট ও বিকেলে ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করা জরুরী। অবশ্যই জোরে জোরে হাঁটতে হবে।
নিয়মিত হাঁটলে মনে রাখার ক্ষমতা তথা স্মৃতিশক্তি তীক্ষ্ম নয়। প্রতিদিন না পারলে সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন ২০ মিনিট করে হাঁটুন।
খাবার: স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাধারণত চিকিৎসকগণ বিভিন্ন প্রকার খাবারের কথা বলে থাকেন। তন্মধ্যে আখরোটের পলিফেনলস বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়াও নিয়মিত খেতে পারেন সামুদ্রিক মাছ, পালংশাক, গ্রিন টি, অলিভ অয়েল, ডার্ক চকলেট এবং সবুজ শাকসবজি। স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এসব খাবারের জুড়ি নেই।
আরও পড়ুন: বুক জ্বালাপোড়া রোগের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা।
পায়ের আঙুল ম্যাসাজ: প্রতিদিন অন্তত ৫ মিনিট করে পায়ের আঙুলের ম্যাসাজ করুন। পায়ের আঙুলের উপর থেকে টিপা শুরু করে নিচের দিকে যান। সাধারণত বলা হয়, এ ধরণের ম্যাসাজ মস্তিষ্কের সাথে যোগাযোগ রক্ষার্থে ভূমিকা পালন করে।
ঠাণ্ডা শোবার ঘর ব্যবহার: ঠাণ্ডা ঘর শরীরের জন্য খুবই ভালো। বলা হয়ে থাকে যে, গরমের চেয়ে শীতের দিনে মানুষের স্মৃতিশক্তি প্রখর থাকে।
তাই যে ঘরে ঘুমাবেন সেই ঘরের তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর মধ্যে রাখার চেষ্টা করবেন। ঠাণ্ডা ঘর মস্তিষ্ক’কেও ঠাণ্ডা রাখে।
গল্প শেষ থেকে শুরু করা: আপনি নিয়মিত গল্প পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। তারপর গল্পটি শেষ দৃশ্য থেকে প্রথমে দৃশ্যের দিকে মনে করতে থাকুন। এভাবে মস্তিষ্কের কোষগুলো খুব বেশি সচল হয় এবং স্মৃতিশক্তি ত্বরান্বিত হয়।
উল্টো উপায় ব্যবহার করে কাজ করা: ব্যাপারটি হাস্যকর মনে হতে পারে। কিন্তু কিছু বিজ্ঞানী এমনটাই দাবি করেছেন অর্থাৎ আপনি সপ্তাহে অন্তত ডান হাতের সমস্ত কাজ বাম হাতে করার চেষ্টা করুন।
আর যদি বাম হাতের কাজগুলো ডান হাত দিয়ে করার চেষ্টা করুন। এতে স্মৃতিশক্তির উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
যোগাযোগ ঠিক রাখুন: নিশ্চয়ই আপনার পরিবার-পরিজন সহ বন্ধু-বান্ধব হয়েছে। তাদের সাথে দিনে অন্তত ১০ মিনিট কথা বলুন। তাহলে আপনার স্মৃতিশক্তি বেশ জোড়ালোভাবে জেগে উঠবে।
একই কাজ অন্যভাবে করা: এখানে মূূলত রুটিন মাফিক কাজের কথা বলা হয়েছে। যে রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন বাজার যান মাঝে মাঝে সেই রাস্তা বাদ দিয়ে অন্য রাস্তায় যান।
রেস্তোরায় প্রতিদিন যা খান তা চেঞ্জ করুন। মাঝে মাঝে ভাষা চেঞ্জ করে কথা বলার চেষ্টা করুন। যে কাজটি পারেন না সেটা করার চেষ্টা করুন কোন কারণ ছাড়াই। এতে স্মৃতিশক্তির বিকাশ ঘটে।
লিখিত বিষয় থেকে বেরিয়ে আসা: আপনি বাজারে যাওয়ার আগে নিশ্চয়ই খরচ-পাতির লিষ্ট করে থাকেন। তো, ইচ্ছে করেই সেই লিস্ট পকেট থেকে বের না করে বাজার শেষ করুন।
এরপর মিলিয়ে নিন কতোটা ভুলে গেছেন আর কতোটা মনে রাখতে পেরেছেন। এভাবে কয়েকদিন পরপর ট্রাই করতে থাকুন। একটা সময় আপনাকে আর লিখে নিয়ে বাজারে যেতে হবে না।
স্মৃতিশক্তি সবার সমান থাকে না। আর এই সমান না থাকার পেছনে কিছু বাহ্যিক কারণ দায়ী থাকে। কিছু অভ্যাস দায়ী থাকে। ইচ্ছে করলে অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব।
উপরে উল্লিখিত বিষয়গুলো ছাড়াও আপনাকে সর্বোপরি সচেতন হতে হবে। নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। জীবন-শৈলীতে পরিবর্তন আনতে হবে।
ক্যালকুলেটর ব্যবহার কম করবেন। স্মৃতি মনে করার চেষ্টা করবেন। নিয়মিত পড়াশোনা করবেন। তাহলে আপনার মনে রাখার ক্ষমতা বেড়ে যাবে।