সবাই তার নিজস্ব স্মার্টফোন খুব যত্ন সহকারে ব্যবহার করতে চায়। মোবাইল ফোনটি বহুদিন টিকে থাকুক এটা সবাই চায়। কিন্তু তারপরেও দূর্ঘটনা ঘটে যায় অনেক সময়।
যতোগুলো মোবাইল দূর্ঘটনা রয়েছে তন্মধ্যে সবচেয়ে কমন বা পরিচিত হলো স্মার্টফোন পানিতে পড়ে যাওয়া। পানিতে পড়ে গেলে আমরা মোবাইলের আশা সাধারনত বাদ দেই।
কিন্তু পানি থেকে মোবাইলটি উঠানোর পরেই এমন কিছু নির্দেশনা রয়েছে যা করলে স্মার্টফোনটি ঠিক হয়ে যেতে পারে। আজ সে বিষয়েই আলোচনা করা হবে। তো আর কথা নয় – সরাসরি যাচ্ছি মূল আলোচনায়।
নিম্নোক্ত ধাপগুলো অনুসরণ করুন এবং আপনার মোবাইল ভিজে গেলে একে বাঁচানোর চেষ্টা করুন:
আপনার মোবাইল ফোন যদি ভূলক্রমে বা কোনভাবে পানিতে পড়ে যায় তাহলে নিম্নোক্ত নির্দেশনাবলী অনুসরণ করুন:
১. মোবাইলটি যত দ্রুত সম্ভব পানি থেকে বের করে ফেলুন। মোবাইল এর প্লাস্টিক কভারটি মোটামুটি শক্ত হয়ে থাকে, কিন্তু এতে পানি ঢুকতে খুব বেশি সময় লাগে না, খুব বেশি হলে ২০ সেকেন্ড।
মোবাইলটি তাড়াতাড়ি ধরে নিন। একে ভুলেও চালু করবেন না, কারণ এতে খুব সহজেই শর্ট সার্কিট হতে পারে (যদি চালু থাকে, তবে তৎক্ষণাৎ বন্ধ করে দিন)। পানিতে পড়লে প্রথমত শুকানো অপরিহার্য, কাজ করুক বা না করুক।
২. যদি পানি থেকে তুলতে দেরি করে ফেলেন, তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যাটারি খুলে ফেলুন। এতে মোবাইল এর মধ্যে সকল বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধের নিশ্চয়তা দেওয়া যায়।
মাথা ঠাণ্ডা রাখুন। আপনার ফোনটি যদি দ্রুত পানি থেকে উঠাতে পারেন তবে হয়তোবা তেমন ক্ষতি হবে না। আর যদি দেরি হয়েও যায়, মনে হয় না যে আপনার মাথা গরম করে ফোনটিকে শুকাতে পারবেন। হাল ছেড়ে দেওয়ার আগে আরও অনেক কিছু করার আছে।
৩. মোবাইলের ব্যাটারি খুলে ফেলুন। এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপের একটি। বিদ্যুৎ আর পানির মধ্যে কেমন বিক্রিয়া হচ্ছে সেটা না ভাবলেও চলবে, মদ্দা-কথা এরা দুজন কখনও এক সাথে থাকতে পারে না।
মোবাইলের ভিতরে অনেক বিশেষ বিশেষ অংশ আপনি ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে পারেন যদি আপনি এর শক্তির উৎস (ব্যাটারি) টিকে বিচ্ছিন্ন করে দেন।
৪. সিম কার্ডটি খুলে ফেলুন। এতে অনেক প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী থাকতে পারে। অনেকের কাছে ফোনটির চেয়ে সিম কার্ডের ওই তথ্যগুলোর মূল্যই বেশি।
যদিও সিম কার্ড খুব সহজে নষ্ট হয় না, তবে ফোনটি বাঁচাতে পরবর্তী কয়েকটি ধাপ হয়ত সিমের জন্যে সহায়ক হবে না। খুলে শুকনো করে এক পাশে রেখে দিন, যতক্ষণ আপনার ফোন ব্যবহার উপযোগী না হয়।
৫. স্মার্টফোন ব্যবহৃত অন্যান্য জিনিসগুলোও আলাদা করে দিন। যেমন- কভার, হোল্ডিং ইত্যাদি।
৬. মোবাইল ফোনটি ভালভাবে শুকান। এক ফোঁটা পানিও মারাত্মক হতে পারে ফোনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশে প্রবেশ করে। তাই আপনাকে অবশ্যই দ্রুত এবং সতর্কতার সাথে শেষ বিন্দু পরিমাণ পানিও মুছে ফেলতে হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: হালকা ভাবে মোবাইলটি মুছবেন। অতিরিক্ত ঝাঁকালে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অংশে পানি ঢুকে যেখানে এখনও পর্যন্ত পানি প্রবেশ করেনি। এক্ষেত্রে, হিতে বিপরীত হয়ে যাবে।
টিস্যু পেপার বা সুতির কাপড় ব্যবহার করুন। হালকা ভাবে প্রতিটি কোণা মুছে ফেলুন। ফোনের যেসব অংশে ছিদ্র বা গর্তের মত আছে (যেমন- কী-প্যাড), সেখানে টিস্যুর শুকনো অংশই ব্যবহার করুন।
কারণ, ভাজ অংশের পানি ভিতরে চলে যেতে পারে। ব্যাটারি খুলে অভ্যন্তরীণ অংশ মুছতে ভুলবেন না যেন।
৭. সম্ভব হলে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করুন। আপনার ফোনের বিভিন্ন অংশের মধ্যে থেকে একদম ক্ষুদ্র পানির বিন্দু টেনে বের করতে এর জবাব নেই। তাই, যদি বাসায় ভ্যাকুয়াম ক্লিনার থেকে থাকে তবে একে ব্যবহার করুন।
ফোনটির প্রতিটি সম্ভাব্য অংশে এর ব্যবহার করুন। এতে আপনার ফোনটি অনেকাংশেই শুকিয়ে যাবে, কিন্তু এখনও এটি চালু করা মোটেও নিরাপদ নয়। তাই, তাড়াহুড়ো করবেন না।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: ভ্যাকুয়াম ক্লিনার এর পরিবর্তে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করবেন না (Cold Mode সিস্টেমেও নয়)।
এতে অনেক অংশের পানি ভিতরে ঢুকে যেতে পারে। আর যদি ড্রায়ার খুব গরম হয়, তবে আপনার ডিভাইসটির ক্ষতি হতে পারে। তাই ভুলেও হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করবেন না।
৮. মোবাইলটি শুকাতে চাল ব্যবহার করুন। শুকনো চাল খুব ভাল কাজ করে থাকে। এর মধ্যে এক রাতের জন্য আপনার মোবাইলটি রেখে দিন। এতে, মোবাইলে এক কণা পানিও বাকি থাকবে না।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: ঘুমোতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় ফোনটি উল্টে দিন। দ্রুত শুকানোর জন্য এটি একটি কার্যকরী প্রক্রিয়া।
৯. চাল থেকে বের করার পরে শুকনো একটি তোয়ালেতে ফোনটি রাখুন। মনে রাখবেন, এই সব কিছুর উদ্দেশ্যই হচ্ছে ফোনটিকে পুরোপুরি ভাবে শুকানো। তাই ভেজা তোয়ালে বা অন্য কিছু ব্যবহার করে এতক্ষণের সকল মেহনত নষ্ট করে দিবেন না।
১০. সময় হয়েছে ফোনটি টেস্ট করার। আপনি যদি অন্তত ২৪ ঘণ্টা বা এর চাইতে বেশি সময় (সম্ভব হলে) অপেক্ষা করে উপরের ধাপগুলো পূর্ণ করে থাকেন, তাহলে এখন ফোনটি চালু করতে পারেন। ভালভাবে পরিষ্কার করে ব্যাটারিটি লাগান এবং ফোনটি চালু করুন।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস (১):
যদি ফোনটি এখনও কাজ না করে তবে একে ব্যাটারি ছাড়া চার্জারে লাগিয়ে দেখতে পারেন। যদি দেখেন কাজ হচ্ছে তাহলে আপনাকে একটি নতুন ব্যাটারি কিনতে হবে।
আর যদি তা না হয় তবে সময় হয়েছে এটিকে একজন প্রফেশনাল মেকানিক এর কাছে নেওয়ার। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল হবে যদি আপনি ফোনটিকে ফোনের ব্র্যান্ড অনুযায়ী ডিলারের কাছে বা সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে যান।
যেমন- নকিয়ার জন্য নকিয়া কেয়ার সেন্টার। তাদের কাছ থেকে পানিতে পড়ার বিষয়টি লুকানো খুব ভাল আইডিয়া হবে না। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে মোবাইল ভিজলে একে বিশেষ ভাবেই ঠিক করতে হবে, নতুবা সার্ভিস কোন কাজে দিবে না।
১১. শুকানোর পরেও যদি ফোনটি চালু না হয়, আপনি একে পুরোপুরি ভাবে খুলতে পারেন (যদি আপনার প্রাথমিক ধারণা থেকে থাকে)। এর কেসিং এবং অন্যান্য সকল অংশ সাবধানতার সাথে খুলে টিস্যু পেপার দিয়ে মুছুন।
আপনি আবার ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন যাতে কোন ঢিল অংশ যেন এর ভেতরে চলে না যায়।
আর আপনি যদি স্মার্টফোন খুলতে সাহস না পান, তবে আপনার কোন বন্ধু বা পরিবারের অন্য কারও কাছে সাহায্য চাইতে দ্বিধা বোধ করবেন না। তেমনটি সম্ভব না হলে, প্রফেশনাল ব্যক্তির সাহায্য নিন।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস (২):
যদি দেখেন ফোন চালু হয়েও উল্টো পাল্টা আচরণ করছে, তাহলে বুঝবেন ভিতরে আপনি কিছু পানি মিস করে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে আবার খুলে ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করে দেখুন।
অথবা, মোবাইল ফোনের প্রফেশনালের সাহায্যে এমন ত্রুটি খুবই সহজে দূর করতে পারেন। আপনি যদি অ্যাপলের আইফোন ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন, তবে আপনি আপনার স্মার্টফোনটিকে পেপার তাওয়াল দিয়ে মুছে খুব সহজেই ব্যবহার উপযোগী করে তুলতে পারেন।
এছাড়া আপনি আপনার আইফোনের জন্য ওয়াটারপ্রুফ কভার কিনতে পারেন যদি আপনার আইফোন 4 বা 4S থাকে। আর যদি আইফোন 3GS বা পূর্বের ভার্সন থাকে, কভারের সুবিধাটা আপনার কপালে নেই তাহলে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস (৩):
মোবাইল ফোনের সকল অংশ খুলে শুকনো জায়গায় রাখুন। মোবাইলটি যদি একই সময় বাজে এবং চালু থাকে, এটা মারাত্মক হয়ে থাকে।
যদি আপনি ভিতরের পার্টস জ্বলে যাওয়ার আগেই এটিকে বন্ধ করতে পারেন, আপনার মোবাইল হয়তো বেঁচে যাবে।
অতিরিক্ত তাপমাত্রা মোবাইলের জন্য ক্ষতিকর। ধৈর্য্যের সাথে ফোনটি শুকান। অধৈর্য্য হয়ে অতিরিক্ত তাপ প্রয়োগ করবেন না। মনে রাখবেন, মোবাইল ফোন ভেজে ফেলা আপনার উদ্দেশ্য নয়।
ফোনেটির ভিতরের কিছু অংশে আপনি বিশেষ ভাবে তাপ দিতে পারেন। যেমন- টেবিল ল্যাম্প বা হিটার এর সাহায্যে।
আমি এই টিপসগুলো বর্ষাকালের আবহাওয়া এবং এর সমস্যাকে মাথায় রেখে করেছি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আপনার পক্ষে সম্ভব নয় বৃষ্টির পানিতে ভিজে যাওয়া কোন মোবাইল সার্ভিস করতে দোকানে নিয়ে যাওয়া যখন বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে বা অন্য কোন জরুরি অবস্থায়।
হাত পা গুটিয়ে বসে না থেকে উপরের ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনি নিজেই মোবাইল টিকে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে তুলতে পারেন।
সতর্কতা:
ফোনটিকে ভেজা অবস্থায় ফেলে রাখবেন না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুকাতে শুরু করুন। ফোনটি কোনভাবেই শুকানোর আগে চালু করার চেষ্টা করবেন না। এতে শর্ট সার্কিট হয়ে পুরো ফোনটিই বাতিল হয়ে যাবে।
আমি একবার এভাবে চালু করায় ফোনের ডিসপ্লে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। যদিও আমি সারাদিন শুকিয়ে ছিলাম।
মোবাইল ফোন শুকাতে ওভেন ব্যবহার করতে যাবেন। যেমনটি আগে বললাম, আপনি মোবাইলটি ভাজতে বা গলাতে এসব করছেন না।
ব্যাটারিটি অতিরিক্ত তাপ থেকে দূরে রাখুন। খুব সহজেই আগুন লেগে যেতে পারে। আজকালকার অধিকাংশ আধুনিক মোবাইল ফোনের ব্যাটারির নিচেই একটি থাকে যা পানি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে রঙ পরিবর্তন করে (যেমন- লাল থেকে গোলাপি হয়ে যায়)।
যাতে করে স্মার্টফোন টেকনিশিয়ানরা বুঝতে পারেন আপনি কি ঘটনা ঘটিয়েছেন। আমার জানামতে, কোন ওয়ারেন্টই “Water Damage”সাপোর্ট করে না।
এজন্য যদি মিথ্যা বলে ফ্রি সার্ভিস করাতে চান, স্রেইফ বোকা হয়ে যাবেন। তৎক্ষণাৎ পানি থেকে বের করে ব্যাটারি খুলে ফেললে, আপনার মোবাইল টি বাঁচার সবচেয়ে বেশি আশা থাকবে।
পরিশেষে বলা যায়, মোবাইল ফোন বা স্মার্টফোন পানিতে পড়ে গেলে তাড়াহুড়ো করবেন না। সাবধানে মোবাইলটি পানি থেকে দ্রুত তুলবেন।
তারপর উপরে যেসব প্রক্রিয়ায় ঠিক করার বলা হয়েছে তা করবেন। আর নিকটেই প্রফেসনাল কোন মোবাইল মেকার থাকে তবে নিজে নিজে এসব না করে সরাসরি মেকারের কাছে নিয়ে যাবেন। কাজটি যদি দ্রুত করতে পারেন তবে আপনার স্মার্টফোনটি ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
আরও পড়ুন: অনলাইনে আয় করার জন্য নির্ভরযোগ্য উপায়গুলো থেকে আপনারটা বেছে নিন।