বেশিরভাগ মানুষের বাথরুমেই স্ট্রোক বেশি হয়ে থাকে। এর নেপথ্যে অবশ্যই কারণ রয়েছে। আজ হয়তো সেই কারনগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে।
তবে প্রথমে জানা দরকার, স্ট্রোক কি? স্ট্রোক হলো- মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে রক্ত সরবরাহের ব্যাঘাত ঘটলে দ্রতাবস্থায় যে জটিলতার সৃষ্টি হয় সেই অবস্থা।
একজন মানুষ যখন স্ট্রোক করে তখন রক্তনালী ছিড়ে যেতে পারে। দেহের এক পাশ বা উভয় পাশ প্যারালাইসিস এর মতো হয়ে যেতে পারে।
মুখ বেঁকে যেতে পারে। জিহবার শক্তি থাকে না। চোখে দেখার শক্তি হারিয়ে যেতে পারে। তবে প্রথমবার স্ট্রোকে এতোটা সমস্যা নাও হতে পারে।
অনেকেই আছে, প্রথমবার স্ট্রোক করার পরে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য স্বাভাবিক জীবন-যাপন করে। তবে দ্বিতীয় বার স্ট্রোক করলে নানা ধরণের বিরূপ পরিস্থিতির স্বীকার হতেই হয়।
মূল আলোচনায় যাই। বাথরুমে স্ট্রোক বেশি হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
১. গোসলের পদ্ধতিগত ভুলের কারণে: সাধারণত বাথরুমে ঢুকে আমরা প্রথমে মাথায় পানি ঢালি এবং চুল ভেজাই। এটাই প্রধান ভুল। পানি সাধারণত ঠান্ডা হয়। ঠান্ডা পানি মাথায় দেয়ার ফলে রক্ত দ্রুত মাথায় উঠে আসে।
ফলে মাথার নালীগুলোতে (কৈশিক নালী ও ধমনী) দ্রুত রক্ত সঞ্চালন হতে থাকে। এতে করে নালী ছিড়ে যেতে পারে। আর নালী ছিড়ে যাওয়াটাই হলো স্ট্রোক।
অনেক চিকিৎসকগণ কারন হিসেবে মাথায় প্রথমে পানি ঢালাকেই দায়ী করেছেন। তাই গোসলের সময় শুরুতেই মাথায় পানি ঢালা থেকে বিরত থাকুন। ধীরে ধীরে মাথার চুল ভেজান।
খুব সহজভাবে যদি বলি, প্রথমে পায়ের গোড়ালি ভেজান। তারপর কোমর ও বুক পর্যন্ত ভেজান। তারপর ধীরে ধীরে মাথায় পানি ঢালুন। তবে হঠাৎ করে মাথায় খুব ঠাণ্ডা পানি ঢালতে যাবেন না।
২. ঘুম থেকে তাড়াহুড়ো করে উঠা: ঘুম থেকে তাড়াহুড়ো করে উঠে ওয়াশ রুমে যাওয়াও স্ট্রোক হওয়ার একটি কারণ। বিভিন্ন গবেষকদল এটিই বলেছেন। ঘুম থেকে তাড়াহুড়ো করে উঠে আমরা যদি দাড়াই তবে আমাদের মাথায় রক্ত সঞ্চালনের প্রবাহ কমে যেতে পারে।
অথবা যতোটুকু দরকার ততোটুকু রক্ত পায় না। রক্ত দ্রুত গতিতে মাথার দিকে ছুটতে থাকে। এতেই হতে পারে দূর্ঘটনা। ঘুম থেকে ওভাবে উঠলে আমাদের শরীরের ইসিজি প্যাটার্নও বদলে যায়।
তাড়াহুড়ো করে উঠে দাড়িয়ে পড়লে ব্রেইনে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন পৌছায় না। তাই স্ট্রোক থেকে বাঁচতে ভুল করেও এমন কাজ করা যাবে না। ঘুম থেকে উঠার সময় স্বাভাবিকভাবে উঠুন।
৩. কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে: গবেষণায় দেখা গেছে যে, কোষ্ঠকাঠিন্য হলেও ফলশ্রুতিতে স্ট্রোক হতে পারে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হয় তারা ওয়াশ রুমে গিয়ে স্বাভাবিক টয়লেট করতে পারেন না। শরীরের ওপর বাড়তি প্রেসার পড়ে।
আর শরীরের ওপর বাড়তি প্রেসারের কারণেই স্ট্রোক হয়ে থাকে। আর ভুল করেও ওয়াশ রুমে গিয়ে টয়লেটের জন্য চাপ দিবেন না। স্বাভাবিকভাবে টয়লেট হতে যতোটুকু সময় লাগে ততোটুকুই দিন। কিন্তু অনেক জোরে চাপ দিতে যাবেন না। এতে করে শুধু স্ট্রোক নয় – আরো জটিল রোগে আপনি আক্রান্ত হতে পারেন।
৪. রক্তচাপের কারণে: উচ্চ রক্তচাপ এবং নিম্ন রক্তচাপ দুটোই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। রক্তচাপের মাত্রা কম বেশি হলে স্বাভাবিক রক্তচাপ ব্যাহত হয়। সাধারণত যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা নিম্ন রক্তচাপ রয়েছে তারা বাথরুমে সাধারণত বেশি স্ট্রোক করেন।
তাই রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন, ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনে ওষুধ সেবন করুন।
৫. অস্বাভাবিক কোলেস্টেরলের মাত্রা: কোলেস্টেরল এর মাত্রা বেড়ে গেলে তা হতে পারে স্ট্রোকের কারন। কোলেস্টেরল হলো এক প্রকার চর্বি জাতীয় পদার্থ বা রক্তনালীর ভেতরে গায়ের সাথে জমা হতে থাকে। বেশি হয়ে গেলে তখন রক্ত সঞ্চালন ঠিক মতো হতে পারে না। উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল জীবনের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
বছরে অন্তত এক থেকে দুই বার শরীরের কোলেস্টেরল এর মাত্রা পরীক্ষা করুন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করুন ও ওষুধ সেবন করুন।
আরও পড়ুন: মোবাইল কেনার আগে যে বিষয়গুলোতে নজর দেয়া উচিত।
পরিশেষে বলবো, স্ট্রোক কারও জীবনের জন্যই কাম্য নয়। কিন্তু তারপরেও হয়ে যায়। কখন কার কি হবে বলা মুশকিল। কিন্তু সাবধানতা অবলম্বন করলে নিজেকে ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা যায়।
তথ্যসূত্র: ড. এম ইয়াছিন আলী (বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকা)