সেক্স শব্দটি আসলে এমন একটি শব্দ যা আমাদের মধ্যে লজ্জার সঞ্চার করে। সেক্স মূলত ইংরেজী শব্দ (Sex). এর আভিধানিক অর্থ হলো যৌন বা যৌন বিষয়ক। আপনি জানলে অবাক হবেন যে, সেক্স শব্দটি বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা সর্বোচ্চ হারে সার্চ করে।
কেন এই সেক্স শব্দটি বাংলাদেশের মানুষ এতো বেশি ইন্টারনেটে সার্চ করে আজ আমরা সেই বিষয়ে জানবো। কি এমন গোপন তথ্য লুকিয়ে আছে এর মধ্যে যার জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন বার তা সার্চ করে মানুষ। আরও জানবো এর প্রভাব উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের উপর পড়ছে কিনা।
সেক্স শব্দটি কেন এত বেশি সার্চ হয়?
বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা সেক্স শব্দটি সর্বোচ্চ বার ইন্টারনেটে সার্চ করে। কেন সার্চ করে এর পেছনের কিছু কারণ তুলে ধরবো। নিম্নে পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হলো:
১. সেক্স শব্দটির মাধ্যমে ইন্টারনেটে মানুষ প্রথমত পর্ণোগ্রাফি খোঁজার চেষ্টা করে। বাংলাদেশ বিভিন্ন দিক থেকে পিছিয়ে থাকলেও মোবাইলের ব্যবহারে অনেক এগিয়ে রয়েছে।
বেশিরভাগ মানুষই অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ব্যবহার করে যার জন্য ইন্টারনেট সবারই প্রয়োজন হয়। যদিও ইন্টারনেট স্পীড নিয়ে নানা রকম মতভেদ রয়েছে কিন্তু মানুষ তার আপাত চাহিদা মেটাতে পারে।
সেক্স বা Sex লিখে ইন্টারনেটে যখন কেউ সার্চ করে তখন তার সামনে অনেকগুলো অপশন আসে। সে ইচ্ছে করলে ভিডিও দেখতে পারে, ছবি বা ইমেজ দেখতে পারে, নিউজ পড়তে পারে আরও কত কিছু।
কেউ যখন গুগলে ‘সেক্স’ লিখে সার্চ করে তখন গুগল সব ধরণের তথ্য দিতে কার্পন্য করে না। যা আছে সব উজার করে দেয় অর্থাৎ সামনে স্ক্রীনে প্রদর্শিত হয়। আর বাঙালিরাও মহা আনন্দে সেগুলো উপভোগ করে।
২. অনেকেই যখন গোপনে ইন্টারনেটে কোন কিছু সার্চ করে তখন সাধারণত সার্চ টার্ম টা ওদিকেই যায়। ব্যবহারকারী ভাবে যে, কি লিখে সার্চ করলে ওগুলো পাওয়া যাবে? তখন সেক্স শব্দটি খুব সহজেই মনে পড়ে যায়। গুগল অ্যানালাইটিক্স থেকে জানা যায় যে, প্রায় ১০ বছর থেকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা সেক্স লিখে সার্চ করে।
৩. যৌনতা নিয়ে আমাদের দেশের মানুষ একটু বেশিই লাজুক। তারা এ ব্যাপারটিকে খোলাসা করতে চায় না। খোলাসা করে যৌনতা বিষয়ে কিছু শিখতে আগ্রহ প্রকাশ করে না। স্কুল-কলেজগুলোতেও শেখানো হয় না যদিও বর্তমানে কিছুটা প্রাকটিস হচ্ছে।
কিন্তু গোপনে গোপনে সবাই খুবই ইচ্ছুক। গোপনে সবাই সেক্স সম্পর্কে নানারকম ধারণা নিতে চায়। অভিজ্ঞতা নিতে চায়। আর তখন কারও কাছে না বলে ইন্টারনেটে আশ্রয় নেয়। মনের মধ্যে শেখার যতোটা না আগ্রহ থাকে তন্মধ্যে বেশি থাকে মজা নেয়ার ধান্দা।
৪. কেউ কেউ খুব ভালো মানুষ। বাইরে থেকে দেখলে দেখা যাবে যে, এসব নিয়ে কিছুই জানে না। অথচ তার হাতে যখন একটি মোবাইল ফোন যায় এবং যখন গোপনীয়তার সুযোগ আসে তখন সেই ছেলে বা মেয়েটিও ইন্টারনেটে সেক্স নিয়ে সার্চ করে। মনের মধ্যে বিরাট আগ্রহ কাজ করে। কি জিনিস সেটা, কিভাবে করে, কি হয় ইত্যাদি ইত্যাদি।
৫. ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এ ব্যাপারে যে পিছিয়ে আছে তা কিন্তু নয়। গবেষনায় দেখা গেছে যে, প্রায় ৭৭% ছাত্রী স্কুলের মধ্যে মোবাইলে পর্ণ দেখে। আবার ইন্টারনেটে সার্চের বেলায় ছেলেদের থেকে সামান্য পিছিয়ে আছে মেয়েরা। কারণ, এখনও ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মোবাইল ব্যবহারের সংখ্যা কিছুটা কম।
সেক্স শব্দটি সার্চের জন্য যেরূপ প্রভাব পড়ছে?
ইন্টারনেট এমন এক মাধ্যম যেখানে অবাধ স্বাধীনতা রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে যদি ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়া হয় তবুও অভিজ্ঞ ব্যবহারকারীরা ভিপিএন ব্যবহার করে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে।
তো যে কথা বলছিলাম, সেক্স শব্দটি সার্চের মাধ্যমে বোঝা যায় যে – কোমলমতি ছাত্রছাত্রী, যুবক-যুবতী সবাই এর প্রভাবে প্রভাবিত। একটি সাধারন ছেলে ইন্টারনেটে এই শব্দটি সার্চ করে যখন কোন পর্ণ ভিডিও, অডিও বা ইমেজ পেয়ে যাচ্ছে তখন সে সেই ব্যাপারে উৎসাহী হচ্ছে।
গোপনে সেই জগতে একবার কেউ ঢুকলে তার মধ্যে আর ঐ মুহূর্তে ফিরে আসার সম্ভাবনা কাজ করে না। ন্যূনতম ৫ মিনিট হলেও সে দেখার চেষ্টা করে।
একইভাবে মেয়েরাও প্রভাবিত হয়। হয়তো সারাদিন সবার সাথে থাকছে, ইন্টারনেট ব্যবহার করে সেসব দেখতে পারছে না। কিন্তু রাতে যখন ঘরে একা, আর দেখার কেউ নেই তখন ঠিকই সে ইন্টারনেটে ওগুলো মনের আনন্দে সার্চ করছে।
এভাবে তার মধ্যে একটা অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে। রাত হলে তার মধ্যে অটোম্যাটিক রিমাইন্ডার চলে আসছে যে, ওগুলো দেখতে হবে। সেক্স কোনো ভালো শব্দ নয়, যদিও এ থেকে শেখার ও জানার অনেক কিছু আছে কিন্তু বেশিরভাগ ব্যবহারকারী কেবল কৌতুহলবশতঃ সার্চ করে। কিন্তু কৌতুহল থেকে কখন যে তার মধ্যে আসক্তি চলে আসে সে বুঝে উঠতে পারে না।
আগে বাজারে সেক্স বিষয়ক নানারকম বই পাওয়া যেত। তখন মানুষ গোপনে সেসব বই কিনে এনে পড়তো। তখন তেমন আসক্তি হতো না। কারণ, সেটা ছিল বই। সেখানে জল-জ্যান্ত কোনো মানুষের ছবি ছিলো না।
কিন্তু এখন মোবাইলে পুরো বাস্তবচিত্র দেখা যায়। সব স্পষ্টভাবে অর্থাৎ এইচডি আকারে দেখা যায়। মাথা নষ্ট হওয়ারই কথা। পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে যাচ্ছে অনেক ছাত্রছাত্রী। অল্প বয়সের যৌবন এই ইন্টারনেটে সব কিছু জানার ও দেখার প্রভাবে আর ধরে রাখতে পারছে না।
গুগল বাবাজি কখনো আপনাকে কোন কিছু সার্চ করতে বাধা দিবে না। সেখানে সবকিছুই উন্মুক্ত। কিন্তু সরকার ইচ্ছে করলে কিছু বাধ্য-বাধকতা করতে পারে।
মোট কথা, প্রভাবিত সবাই হচ্ছে। ইন্টারনেটের যথেচ্ছ ব্যবহারে দিনের দিন কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে নানারকম অশালীন আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। লজ্জা-শরম কমে যাচ্ছে। সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে। আরও নানারকম অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে। সেক্স দেখার পরে নিজেরা আবার তৈরী করে ছেড়ে দেবার চিন্তা-ধারাও করছে। সুতরাং অবিলম্বে এই ব্যাপারে যতোটা সম্ভব পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য করনীয়:
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য অনেক করনীয় আছে। মোবাইলের ব্যবহার অনেকেই সঠিকভাবে জানে না। নতুন একটি মোবাইল কিনে ছেলে বা মেয়ের হাতে তুলে দেয়ার আগে কিছু করনীয় আছে। কিন্তু দূর্ভাগ্য, এসব ব্যাপার ৮০% ব্যবহারকারীই জানে না।
এখনও বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ অশিক্ষিত। আর শিক্ষিত হলেও মোবাইল সম্পর্কে কিছুই বুঝে না এমনও হাজার হাজার মানুষ রয়েছে।
যাই হোক, ছেলেমেয়ের হাতে মোবাইল দেয়ার পূর্বে একটি ভালো মানের অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন (উদাহরনস্বরূপ- ইসেট, অ্যাভাস্ট, কার্সপার্সকি ইন্টারনেট সিকিউরিটিসহ ইত্যাদি)। এতে করে মোবাইলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোনো খারাপ সাইটে ঢোকা যাবে না।
মাঝে মাঝেই ছেলেমেয়ের ফোনটি হাতে নেয় চেক করুন। তারা কোন কোন অ্যাপস ব্যবহার করছে এবং কতক্ষণ ব্যবহার করছে সেটা লক্ষ্য রাখুন। হিস্টোরী চেক করুন। হিস্টোরী আবার ডিলেট করে রাখছে কিনা সেটাও লক্ষ্য রাখুন। রিসেন্ট অ্যাপ ব্যবহার যাতে মুছতে না পারে সেটি আপনি গোপন লক দিয়ে রাখুন।
যেসব ব্যাপার বলছি, এসব কোনো সাধারন ব্যবহারকারী এত সহজে পারবে না। অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তির (যিনি মোবাইল এক্সপার্ট) প্রয়োজন হতে পারে।
রাতে গোপনের সন্তানের কক্ষ পর্যবেক্ষণ করুন। প্রয়োজনে রাতে তার হাতে স্মার্ট ফোন দেয়া বন্ধ রাখুন। স্কুলে যাওয়ার সময় দিবেন আর চলে আসলে নিয়ে নিবেন। এই কাজ একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত আপনি করতে পারবেন। কিন্তু ছেলেমেয়ে কলেজে গেলে একাজ আপনি এত সহজে করতে পারবেন না।
তাদেরকে ধর্মের পথে চলার পরামর্শ দিন। কিভাবে ভালো থাকতে হয়, ভালো কিছু করতে হয় তা বোঝান। আপনারা আপনার সন্তানের জন্য কত কষ্ট করছেন তা বোঝান। তাহলে আপনার সন্তানের মন নরম হবে।
আরও পড়ুন: মহানবী (সাঃ) কে নিয়ে কটুক্তি – ভারতকে মুসলিম বিশ্বের হুঁশিয়ারি।
আপনার সন্তান সেক্স বিষয়ে খুব আগ্রহী হলে তাকে উপযুক্ত বয়সে বিয়ে দিয়ে দিন। তাহলে তার কোনো ক্ষতি হবে না। হঠাৎ যেকোন ধরণের শারিরীক পরিবর্তন হওয়া শুরু হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং সন্তানের দিকে ভালো মতো নজর দিন।
সর্বোপরী মোবাইল এবং ইন্টারনেট ব্যবহারে একটু সীমাবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করুন। যারা সন্তানের বাবা মা হিসেবে আছেন তারা নিজেরাও পর্ণোগ্রাফির মতো বিষয় থেকে দূরে থাকুন। কারণ, এসব কিছু কখনো জীবনে ভালো কিছু বয়ে আনে না।
সবাই ভালো থাকবেন। আর আপনার নিজের মন্তব্য জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। দেখা হবে পরবর্তী কোনো পোস্টে।