সীতাকুণ্ড বিস্ফোরণ এমন একটি ঘটনা যা ইতিহাসের পাতায় কালজয়ী হয়ে থাকবে। সাম্প্রতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এমন ঘটনা খুঁজে পাওয়া যায় না। বিশ্বের মধ্যে আগুন নিয়ে এমন নির্মম দূর্ঘটনা খুবই বিরল অথচ বাংলাদেশে তা ঘটে গেল।
ফায়ার সার্ভিস ও দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায়, এ আগুন শনিবার লেগেছে। বেসরকারি বিএম কন্টেইনার লিমিটেডের ডিপোতে এ আগুন লাগে।
ডিপোতে কতগুলো কন্টেইনার ছিল তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। তবে কিছু কিছু সুত্র জানিয়েছে যে, প্রায় ১০০০ কন্টেইনার আছে সেখানে। তবে শনিবার রাত ৩ টা থেকে সর্বশেষ যা জানা যায় তা হলো- প্রায় ৪০০ কন্টেইনারে একসাথে আগুন জ্বলছিল।
আগুন লাগার সাথে সাথে আশপাশের সমস্ত এলাকার ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের খবর দেয়া হলে তারা ছুটে আসে। প্রথমদিকে হাতে গোনা কয়েকটি ইউনিট কাজ করলেও পরবর্তীতে প্রায় ২৪টি ইউনিট কাজ শুরু করে দেয়।
অগ্নিনির্বাপণ কাজ কিছুটা বাঁধাপ্রাপ্ত হয়েছিল। যার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে যে, সেখানে থাকা ট্রাকগুলো সরাতে গিয়ে তা পানির পাইপের পানি চলাচল বাঁধাগ্রস্থ করেছে।
এ যাবতকালে যতোবার যেখানেই আগুন লেগেছে সেখানে ছুটে গিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। কিন্তু তারা কখনো মারা যাননি। যদিও সামান্য পরিসংখ্যান আছে কিন্তু সেটা বিবেচনায় আনা যায় না।
কিন্তু সীতাকুণ্ডের এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন (সর্বশেষ ৯ জন) ফায়ার সার্ভিস কর্মী নিহত হয়েছেন যা খুবই বেদনাদায়ক। আর এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত আগুন লাগার ঘটনায় মারা গেছেন মোট ৫০ জন। আহত হয়েছে অন্তত ৩০০ জন। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক।
ফায়ার সার্ভিসের ৯ জন কর্মী নিহত হলেও বেশ কয়েকজন কর্মী এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সব ধরণের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে রোগীর রাখার আর কোনো জায়গা নেই। তাদের সঠিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভবপর হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত অনেক আহত ব্যক্তিকে সিড়িতে রাখা হচ্ছে।
এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত জানা গেছে, আগুন নেভানো পুরোপুরি সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন কন্টেইনারে এখনও আগুন জ্বলছে। সেগুলোর কাছাকাছি যাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, যেকোন মুহূর্তে সেগুলোতে বিস্ফোরণ হতে পারে।
আপনি জানলে অবাক হবেন যে, কন্টেইনারগুলোতে মূলত হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড গ্যাস ছিলো। আর হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড গ্যাস হলো আসলে দাহ্য পদার্থ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হাইড্রোজেন বোমা ফেলা হয়েছিল কয়েকটি দেশে। সেই দেশগুলো শেষ পর্যন্ত বোমার আঘাতে ধ্বংস স্তুপে পরিণত হয়েছিল।
চট্টগ্রাম শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে বিএম ডিপোতে আগুন লাগার ৪০ মিনিটের মাথায় সর্বোচ্চ বিস্ফোরণটি ঘটে। আর এতেই সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটে। কাছাকাছি গিয়ে আগুন নেভানো অসম্ভব ছিল। শুরুতে কয়েকজন ফায়ার সার্ভিস কর্মী একটু কাছাকাছি ছিল। আর যখন বিস্ফোরন ঘটে তখনই তারা কন্টেইনার আর আঘাতে হয়তো মারা যান।
যদিও পরবর্তীতে আরও বিস্তারিত এবং সুক্ষভাবে আমরা খবর প্রকাশ করতে পারবো। যখন বিস্ফোরণটি ঘটে তখন আশপাশের ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়িঘর মাটিসহ কেঁপে ওঠে। দুই তিন কিলোমিটার এলাকার বাড়ি ঘরের কাচেঁর জানালা ভেঙে পড়ে।
প্রায় বড় ধরণের ভূমিকম্পের মতো অবস্থার হয়েছিল। বর্তমানে সেখানকার বাতাসে ঝাঁঝালো গন্ধ অনুভূত হচ্ছে। মানুষজনকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
আগুনের কারণে যে ধোয়া বের হচ্ছে তা আশপাশের ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়েছে। সত্যিকার অর্থে পুরো ঘটনাটাই একটি বিরাট অশনি সংকেত দিয়ে যাচ্ছে।
আপনারা যারা গুগল ম্যাপ ব্যবহার করেন বা এর ব্যবহার জানেন তারা সেখানে এর ভয়াবহতার ছবি ইচ্ছে করলেই দেখতে পারবেন। স্যাটেলাইটে এই আগুনের ভয়াবহতার ছবি প্রকাশ পেয়েছে।

সীতাকুণ্ড বিস্ফোরণ এর কারণে বর্তমানে সেখানকার কয়েক কিলোমিটারের মানুষ বর্তমানে মুখে মাস্ক পড়ে চলাফেরা করছেন। কারণ, বাতাসে সেখানকার হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ছড়িয়েছে। আর ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা অনেকেই অসুস্থ্য হয়ে পড়ছেন।
উদ্ধারকর্মীরা যাদের বের করে আনছেন তাদের অনেককেই কোনভাবে চেনার কোনো উপায় নেই। সারা শরীর আগুনে পুরে ছাই হয়ে গেছে। শরীরের সমস্ত অংশ ঝলসে গেছে। কারও হাত, পা উড়ে গেছে।
বর্তমানে সেখানে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সব বাহিনী (সেনাবাহিনী, বিজিবি, বিমান বাহিনী) সেখানে যোগ দিয়েছে এবং কাজ করছে।
বর্তমানে মেডিকেলের অবস্থা বিপন্ন। কারণ, সবাই তার নিজ নিজ আপনজনকে খুঁজে নেয়ার চেষ্টা করছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল এর আশপাশ বর্তমানে কান্নার রোলে জর্জরিত।
আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এবং ঢাকা থেকে অনেকেই বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করার জন্য সীতাকুণ্ডের ঐ স্থানে যাচ্ছেন। প্রচুর রক্তের প্রয়োজন হচ্ছে।
সব মিলিয়ে আসলে এমন এক ঘটনার জন্ম হয়েছে যেন সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো কোন দেশ সীতাকুণ্ডের ঐ জায়গায় বোমা ফেলেছে।
সীতাকুণ্ড বিস্ফোরণ মানুষকে অবাক করেছে। হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কতগুলো পরিবার নিঃশ্ব হয়েছে তা হয়তো পরে বলতে পারবো আমরা। ২৬ একর জায়গা জুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ২৪ ঘন্টা ধরে আগুন নেভানো সম্ভব হয়নি। এখনও জ্বলছে আগুন। আপনারা চোখ রাখুন করতোয়ায়। আমরা আবারও আপডেট জানাবো ইনশাআল্লাহ।
আরও পড়ুন: তেলাপোকা দূর করার কয়েকটি ঘরোয়া উপায়।