সিলেট মূলত বাংলাদেশের একটি বিভাগ। আর ঐ বিভাগের মধ্যে সিলেট হলো প্রধান শহর। বর্তমানে এই সিলেট শহর পানিতে ভাসছে। বিগত বছরগুলোতে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি কখনো এমন দেখা যায়নি। সিলেটবাসী বর্তমানে চরম ভোগান্তিতে দিনাতিপাত করছে।
কয়েকদিন আগে থেকে সিলেটে বন্যা শুরু হয়। সেই বন্যা দুই তিন দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা শেষ হয়নি বরং বেড়েছে। মানুষজন উঁচু জায়গায় অবস্থান করছেন। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব কষে শেষ করা যাবে না।
তবে আশার কথা হচ্ছে যে, গত রবিবার থেকে বন্যার পানি সামান্য কমতে শুরু করেছে। তবে সব জায়গায় নয়, কিছু কিছু জায়গায়।
সিলেটে জকিগঞ্জ নামক জায়গা রয়েছে যেখানে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর উৎপত্তিস্থল। সেখানে নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ রয়েছে যেটাকে ডাইক বলা হয়। গত শুক্রবার সেটি পাহাড়ি ঢালের ধাক্কায় ভেঙে গিয়েছিল।
স্থানীয়দের দেয়া তথ্যমতে, জকিগঞ্জে প্রায় ৩০০টির মতো গ্রাম রয়েছে তন্মধ্যে প্রায় ২০০টি গ্রাম এখনও প্লাবিত। শুধু প্লাবিত বললে ভুল হবে কেননা কিছু কিছু বাড়ি-ঘরের উপর দিয়ে পানির স্রোত যেতে দেখা যাচ্ছে।
আর তাই সিলেটের বন্যা বর্তমানে মানুষের কাছে এক মহাপ্রলয়ের নাম। খাবার পানির চরম অভাব দেখা যাচ্ছে। শুকনো খাবার এর চরম ঘাটতি। স্থানীয় প্রশাসন নানা প্রতিকূলতার কারণে সব মানুষকে সরকারি সহায়তা দিতে পারছে না।
আরও বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়, জকিগঞ্জ ছাড়াও অন্যান্য অঞ্চলে পানি বেড়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিশ্বনাথ ও ফেঞ্চুগঞ্জ। বর্তমানে পানি কোথায় বাড়ছে আবার কোথাও কমছে। সবমিলে বলা যায়, সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি এখনও শঙ্কামুক্ত নয়।
সিলেটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের যে কার্যালয় রয়েছে তাদের দেয়া সর্বশেষ তথ্যমতে, সুরমা নদীর পানি সামান্য কমেছে। আবার, কুশিয়ারা নদীতে পানি বেড়েই চলেছে। কিন্তু বিপদসীমার উপর দিয়েই পানি প্রবাহিত হচ্ছে। মানুষের ভোগান্তি সামান্যও কমেনি।
আপনারা জানলে অবাক হবেন যে, প্রায় ৯ দিন থেকে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির কেবলই অবণতি হয়েছে। আবার, কয়েক ঘন্টা পর পর ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং আশপাশের গ্রামগুলোকে প্লাবিত করছে।
ফসলের ক্ষেত, ঘরবাড়ি, পুকুরের মাছসহ সব কিছু ভেসে যাচ্ছে। সামান্য উঁচু যে বাসাবাড়িগুলো রয়েছে সেগুলোতেও পানি উঠেছে। সবমিলে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি সেখানকার মানুষের জীবনকে বিপন্ন করেছে। মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে কেবল জীবন বাঁচানোর উদ্দেশ্যে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে।
তবে, সিলেটের এমন পরিস্থিতির জন্য কেবল বৃষ্টিই দায়ী নয়, পাশের দেশ ভারতও কিছুটা দায়ী। গণমাধ্যমে বিভিন্ন জন নানাভাবে ভারতকে দোষারোপ করেছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল হিসেবে যেটার প্রচারণা চালানো হচ্ছে সেটা মূলত ভারত থেকেই আসছে।
বর্তমানে বিশুদ্ধ পানি, খাবার এবং শৌচাগারের চরম সংকটে পড়ে সিলেটের বন্যার কারণে সিলেটবাসী মানবেতর জীবনযাপন করছে। শুধু মানুষের ঘরবাড়ি নয় – সরকারি অফিস আদালতেও পানি পৌছে গেছে। বেশিরভাগ রাস্তাঘাট এখনো পানির নিচে।
সিলেটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। কোথাও সামান্য একটু উন্নতি হলেও বেশিরভাগ জায়গা এখনো পানির তলে।
অন্যদিকে, সিলেট জেলার ত্রাণ কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেছেন, বন্যা পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে তারা সবসময়ই আছেন। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে ১৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে (ছোট, বড় সব মিলে)।
সিলেট জেলায় বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ও তাৎক্ষণিক মানবিক সহায়তা হিসেবে বিতরণের জন্য সিলেট জেলা প্রশাসকের অনুকূলে ১০০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সিলেটের বন্যা ও দূর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলার স্বার্থে সরকার সিলেট জেলার জন্য ১০০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
তবে আশা করা যাচ্ছে আগামী সপ্তাহের মধ্যে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। মানুষের ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট পানিমুক্ত হবে। তবে ভারত থেকে যে পানি আসছে তা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নইলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণ এ ব্যাপারে এখন অনেকটাই সতর্ক অবস্থানে আছেন।
আরও পড়ুন: মুদ্রাস্ফীতি আসলে কি? আমাদের দেশ কোথায় যাচ্ছে?