বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশ একটি কঠিন সময় পার করছে। হয়তো আমরা সাধারন মানুষ মনে করছি না যে, আমরা খারাপ আছি। কিন্তু মন থেকে চিন্তা করলে কঠিন সত্যটা সামনে এসে দাড়িয়ে যায়।
রাশিয়ার সাথে ইউক্রেনের যুদ্ধ সেই কবে থেকেই শুরু হয়েছে। এখনও তা চলছে। কবে শেষ হবে কে জানে? চিন্তা করে দেখুন যে, ইউকেক্রেনের মত একটি দেশ কিন্তু ধ্বংসের পথে। অন্যদিকে, আমেরিকার মতো দেশ চায় রাশিয়া যুদ্ধ ইস্যুতে শেষ হয়ে যাক। কিন্তু রাশিয়া তা কখনোই হতে দেবে না।
অন্যদিকে, শ্রীলঙ্কাসহ বেশ কয়েকটি দেশ অর্থনৈতিকভাবে ধ্বংসের পথে। সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে, শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হওয়ার পথে। শ্রীলঙ্কার সাধারন মানুষ এখন সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে।
আপনি হয়তো চিন্তা করবেন, বাংলাদেশের অবস্থা তো ভালো। তাহলে বাংলাদেশ নিয়ে আমরা এতো চিন্তা করবো কেন?
মনে রাখবেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর বাইরের কোনো দেশ নয়। অন্য দেশে সমস্যা হলে সেগুলোর প্রভাব কিছুটা হলেও বাংলাদেশে পড়বে। আর সেই প্রভাবের বেশিরভাগই পড়বে সাধারন মানুষ এর উপর।
কেননা অনেক জরুরী পণ্য আমাদের আমদানি করতে হয়। আমরা ১০০% নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারবো না যে, অন্য দেশ থেকে আমদানি করা ছাড়া আমরা চলতে পারবো।
সুতরাং অন্যদেশে সমস্যা হলে আমাদের দেশে তার প্রভাব পড়বে সেটাই স্বাভাবিক। আর প্রতিটি প্রভাবই সবার আগে জীবন-যাত্রার মানে আঘাত হানে।
বর্তমানে যে হারে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ছে তাতে আমরা নিরাপদ নই। যেকোন মুহূর্তে শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থা জরুরী অবস্থা বাংলাদেশে হতে পারে। আমরা আয় করছি সীমিত কিন্তু খরচ হয়ে যাচ্ছে বেশি। আর সাধারন মানুষ তো খরচই করতে পারছে না।
যারা অর্থনৈতিকভাবে খুব সচ্ছল তাদের কথা না হয় বাদ দিলাম। বাংলাদেশে খাদ্যাভাব দেখা দিলে তারা টাকা খরচ করে অন্য দেশে পাড়ি জমাবে। কিন্তু আমাদের মত সাধারণ মানুষের কি হবে?
তাই বর্তমানে আমাদের মত সাধারণ মানুষের কি করা উচিত সেই ব্যাপারে নিম্নে কিছু পরামর্শ উল্লেখ করা হলো:
এর বাইরেও আপনার কিছু পরামর্শ থাকলে আপনি অনুগ্রহ করে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে যাবেন আশা করছি।
১. পারিবারিক ব্যয় একেবারে সর্বনিম্নে নিয়ে আসা। যেটুকু খরচ না করলেই নয় সেটুকু কেবল করুন।
২. যদি ভাড়া বাসায় থাকেন তাহলে পরিবার নিয়ে আরো ছোট এবং কম খরচ হয় এমন বাসায় শিফট করুন।
৩. শহরে যদি কোনভাবেই টিকতে না পারা যায় তবে গ্রামে চলে যাওয়া।
৪. পণ্য দাসত্ব কমানোর চেষ্টা করা । অপ্রয়োজনীয় কোন কিছু কিনে অর্থের অপচয় না করা।
৫. খাদ্য বিলাসিতা একেবারে ত্যাগ করা। খাদ্য বিলাসিতা আপনার শারিরীক দিককেও অনেকটা ক্ষতি করে।
৬. গ্রামের খালি জায়গায় শাক-সবজির চাষ করা, এটা অবশ্যই করতে হবে। শহরে বোতল, টবে ফুলের চারা বাদ দিয়ে প্রত্যেকের সবজির চারা রোপণ করা উচিত।
৭. ঘরে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়া। সব কিছুর ব্যাপারে অর্থাৎ তেল সাবান থেকে শুরু করে যা লাগে। প্রয়োজনের বাইরে কেনা যাবে না।
৮. শিশুদের খাদ্য নিরাপত্তার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করা। যতোটা সম্ভব শিশুদের খাবারে পুষ্টি নিশ্চিত করা। সরকারের এদিকে সুনজর দেয়া উচিত।
৯. পোশাক হিসেব করে পরিধান করা। অপ্রয়োজনীয় পোশাক ক্রয় না করা।
১০. কারো ধুমপান বা মদ্যপান কিংবা অন্য কোন আসক্তি থাকলে সেগুলো চিরতরে বন্ধ করে দেয়া।
১১. গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি হিসেব করে খরচ করা। কোনভাবেই যাতে অপচয় না হয় সেদিকে নজর দেয়া।
১২. হিসেব করে রান্না করা। যতোটুকু খাব ততোটুকুই রান্না করা। প্রয়োজনের বাইরে রান্না করে পরে যাতে ফেলে দিতে না হয়।
১৩. হাতে অল্প কিছু পরিমাণ টাকা-পয়সা সঞ্চয় হিসেবে জমিয়ে রাখা।
১৪. হাতে বেশি টাকা থাকলে গ্রামে কম দামের মধ্যে চাষ উপযোগী জমি কিনে রাখা অথবা গরু, ছাগল কিনে রাখা।
১৫. যারা গ্রামে আছেন তাদের উচিত সরকারের “একটি বাড়ি একটি খামার” প্রকল্পের অনুকরণে ঘরের আশেপাশের খালি জায়গায় বারোমাসি সবজির খামার করে ফেলা।
হাঁস-মুরগির খামারও করা যেতে পারে। আর যদি পুকুর থাকে তবে মাছের চাষ করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: ফারজানা ব্রাউনিয়া সম্পর্কে কঠিন কিছু সত্য কথা।
পরিশেষে বলবো যে, সময়ের প্রয়োজনে উপরের কথাগুলো উল্লেখ করা হলো। আপনার মনের মধ্যে আরও কোনো পরামর্শ থাকতে পারে। সেটা নিয়ে মন্তব্য করার অনুরোধ রইলো।
সূত্র: ডা. ফাইজুল হক (কিছুটা পরিমার্জিত)