সাদা পোশাক-ধারী কিছু লোক এসে যদি আপনাকে বলে যে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, আপনাকে তাদের সঙ্গে যেতে হবে, আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তবে আপনার কিছু করণীয় আছে।
আপনি কিছু না বুঝে ওঠার আগেই তারা আপনাকে গ্রেফতার করে বসল। অথচ আপনি কোনো অপরাধই করেননি কিংবা ঘটনাটি আপনার সঙ্গে না ঘটে কোনো আত্মীয়ের সঙ্গে ঘটলো।
এ অবস্থায় কী করার আছে আপনার? আপনার কি কোনো তাৎক্ষণিক প্রতিকার পাওয়া সম্ভব কিংবা কীভাবে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন? চলুন বিস্তারিত জেনে নিই।
এমন পরিস্থিতির শিকার হলে যা করবেন:
প্রথমেই মনে রাখতে হবে যে, দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আপনার জানার অধিকার রয়েছে কেন, কী কারণে আপনাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে।
তাই প্রথমেই জানতে চাইতে হবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগটি কী? অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তাদের পরিচয় জানতে চাইবেন এবং তাদের পরিচয়পত্র দেখতে চাইবেন।
একা একা কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে পরিবার-পরিজনকে সঙ্গে সঙ্গে খবর দিন। প্রয়োজনে আশেপাশের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীদের খবর দিন এবং যত পারা যায় লোকজন জড়ো করার চেষ্টা করুন। আপনার বিরুদ্ধে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে কি না, তা দেখতে চাইবেন।
যদি তারা আপনাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যেতে চায়, তাহলে আপনি একা তাদের সঙ্গে যাবেন না বলে তাদের জানিয়ে দেন এবং পরিবারের দুই-একজনকে সঙ্গে নেবেন বলেও তাদের জানান।
প্রয়োজনে নিকটস্থ থানায় ফোন করে আপনার গ্রেফতারের বিষয়টি জানান এবং থানা এ সম্পর্কে অবগত অছে কিনা তা জানার চেষ্টা করুন।
আপনার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ দেখাতে না পারলে আপনাকে হয়তো ৫৪ ধারায় গ্রেফতার কথা বলতে পারে। ৫৪ ধারায় গ্রেফতার নিয়ে ২০১৬ সালের ২৪শে মে আপিল বিভাগ রায় দিয়েছেন এবং কিছু দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন যা ১০ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে পূর্ণাঙ্গ রায় হিসেবে প্রকাশিত হয়।
আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশ গ্রেফতারের কারণ জানাতে বাধ্য থাকবে এবং পুলিশের পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে। গ্রেফতারের স্থান ও সময় ব্যক্তির স্বাক্ষরসহ গ্রেফতারের পরপরই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এ বিষয়ে একটি মেমোরেন্ডাম তৈরি করবেন।
গ্রেফতারের সময় ও স্থান এবং আটক রাখার জায়গা গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির আত্মীয়কে জানাতে হবে। আত্মীয়স্বজন না পেলে ব্যক্তির নির্দেশনা মেনে তাঁর বন্ধুকে জানাতে হবে। এ জন্য সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টা সময় পাওয়া যাবে।
কোন যুক্তিতে, কার তথ্যে বা অভিযোগে ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে, ঠিকানাসহ তা কেস ডায়েরিতে লিখতে হবে এবং আটক ব্যক্তি কোন কর্মকর্তার তদারকিতে রয়েছেন, তাও উল্লেখ করতে হবে। বিশেষ ক্ষমতা আইনে কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা যাবে না।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির শরীরে কোনো আঘাত থাকলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যকে তা রেকর্ড করে চিকিৎসার জন্য তাঁকে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের কাছ থেকে সনদ নিতে হবে।
গ্রেফতার পরবর্তী জামিন:
গ্রেফতার হলে গ্রেফতারের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনাকে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চালান দেবেন। ২৪ ঘণ্টা সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর কোনো অবস্থাতেই (ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ছাড়া) পুলিশ আপনাকে আটক রাখতে পারবে না।
এ সময় পুলিশ আপনাকে গুরুতর কোনো অভিযোগে রিমান্ডের আবেদন করতে পারে। আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ডায়েরির অনুলিপি ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাউকে আদালতে হাজির করে আটকাদেশ চাইলে ম্যাজিস্ট্রেট, আদালত, ট্রাইব্যুনাল একটি বন্ড গ্রহণ করে তাঁকে মুক্তি দেবেন।
আটক থাকা কোন ব্যক্তিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অন্য কোনো সুনির্দিষ্ট মামলায় যদি গ্রেফতার দেখাতে চায়, সে ক্ষেত্রে যদি ডায়েরির অনুলিপিসহ তাঁকে হাজির না করা হয়, তাহলে আদালত তা মঞ্জুর করবেন না। কোনো কারণে নিম্ন আদালতে জামিন না হলে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়, বর্তমান যুগে সাদা পোশাক পরে বিভিন্ন অঘটন ঘটাচ্ছে কিছু দুষ্কৃতিকারীরা। আবার সাদা পোশাক পরে পুলিশের পরিচয় দিয়ে ধরে এনে মেরেও ফেলছে।
বিভিন্নভাবে মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। তাই কোন সময় এরকম পরিস্থিতির স্বীকার হলে অবশ্যই পুলিশের পরিচয় নিন এবং লোকজন জড়ো করুন।
আরও পড়ুন: থানায় কোনো বিষয়ে মামলা নিতে না চাইলে যা করবেন।
