বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সময় নানারকম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। প্রয়োজনে সেগুলোর বাস্তবায়নও করে। ঠিক এমনই একটি সিদ্ধান্ত ছিলো মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে বিনামূল্যে ফ্রি ল্যাপটপ প্রদান।
যেই কথা সেই কাজ। ২০১৮ সালের দিকেই বাংলাদেশের বহু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ বিতরণ শুরু হয়। টিচার সংখ্যা অনুযায়ী ল্যাপটপগুলো দেয়া হয়। অর্থাৎ যে বিদ্যালয়ে যতো জন শিক্ষক সেই বিদ্যালয়ে ঠিক ততোটি ল্যাপটপ দেয়া হয়।
এ সংখ্যা হয়তো কোনো কোনো বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সঠিক নাও হতে পারে। যাই হোক, ল্যাপগুলোর মান খুব একটা খারাপ নয়। সাধারণ সব কাজের জন্য এটা পারফেক্ট। সরেজমিনে দেখার পরই এই প্রতিবেদন তৈরী করা হয়েছে।
সরকার যে কারণে ল্যাপটপগুলো বিদ্যালয়গুলোতে দিয়েছে হয়তো তা বাস্তবায়ন পুরোপুরি হচ্ছে না। কারণ, ল্যাপটপগুলোর সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না।
এর পেছনে কিছু কারণ রয়েছে। কিছু কিছু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বেশ কিছু বয়স্ক শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন। তাদের নেই কোনো কম্পিউটার প্রশিক্ষণ। তারা ল্যাপটপ এর ব্যবহার সম্পর্কে কিছুই জানে না।
ঠিকমতো তারা ল্যাপটপের স্ক্রীনের লেখাগুলোই দেখতে পায় না। তারা কিভাবে এটা থেকে কোনো কিছু শিখবে কিংবা কিভাবেই বা ছাত্রছাত্রীদের জন্য ক্লাস তৈরী করবে?
আবার কোনো কোনো শিক্ষক এটা নিজের মনে করে বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যাচ্ছে। নিজেরাই ব্যবহার করছে। ছাত্রছাত্রীদের স্পর্শ পর্যন্ত করতে দেয় না।
বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক কোনো ক্লাস করায় না। দেখা যাচ্ছে, তিনি কেবল ধরাবাধা নিয়মে বইটিই মাঝে মধ্যে একটু পড়াচ্ছেন। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের সরাসরি কম্পিউটার শিখাচ্ছেন না।
আবার, ব্যবহার করতে করতে কোনো ল্যাপটপ একটু খানি খারাপ হতেই পারে। সেদিকে কেউ নজর দেন না। নষ্ট ল্যাপটপটিকে ওভাবেই ফেলে রাখা হচ্ছে।
ফলশ্রুতিতে সামান্য সমস্যা থেকে ল্যাপটপটিতে বড় ধরণের সমস্যা হচ্ছে। কোনো কোনো বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ল্যাবের মধ্যে থাকা ল্যাপটপগুলোর কোনো খোঁজই রাখেন না।
একটি ল্যাপটপকে ভালো রাখতে গেলে সেটার সব কিছু আপডেট রাখতে হয়। বিশেষত, সফটওয়ারগুলোর কথা বলা হচ্ছে। এই ব্যাপারগুলোর গুরুত্ব হয়তো একেবারেই দেয়া হয়না।
এর ফলে ল্যাপটপগুলোর মধ্যে ভাইরাসের আক্রান্তের হার বেড়ে যাচ্ছে। ব্যবহৃত ভালো ডকুমেন্টস বা বিভিন্ন প্রকার ফাইলগুলো হয়তো নষ্ট হওয়ার পথে।
আবার কোনো কোনো বিদ্যালয়ে যত্রতত্রভাবে ছাত্রছাত্রীদের হাতে ল্যাপটপগুলো দিয়ে রাখা হয়েছে। যেমন তেমনভাবে ব্যবহারের কারণে খুব সহজেই ল্যাপগুলোতে নানাবিধ সমস্যা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
উপরে যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলো এগুলো আসলে কোনো একটি বিশেষ বিদ্যালয়ের ঘটনা নয়। সমষ্টিগতভাবে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে দেয়া ল্যাপটপগুলোর ক্ষেত্রে এমন ঘটনা হচ্ছে।
যদি সরকারের পক্ষ থেকে সরেজমিনে তদন্ত করা হয় তবে উপরোক্ত বিষয়াবলীর বাইরেও আরো অনেক কিছু উঠে আসবে। তদন্ত জরুরী করা দরকার। নচেৎ সরকার এর লোকসান হওয়াটাই স্বাভাবিক।
আমরা করতোয়া কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করলে নির্দিষ্ট করে কিছু বিদ্যালয়ের পরিস্থিতি তুলে ধরতে পারতাম। কিন্তু তাতে আমাদের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
তাছাড়া বিষয়টি যেহেতু কোনো থানা বা জেলা নির্ভর নয়, পুরো বাংলাদেশের বেশিরভাগ মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর ব্যাপার তাই দুই একটি হাতে গোনা বিদ্যালয়ের পরিস্থিতি তুলে না ধরাই ভালো।
আরও পড়ুন: ল্যাপটপ কেন গরম হয়? সমাধান জেনে নিন।
সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে, ল্যাপটপগুলোর তদারকি করুন। বিদ্যালয়গুলোতে থাকা শিক্ষকদের সচেতনতার সাথে ল্যাপটপগুলো ব্যবহার করতে বলুন। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নিন।
এতে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা একটু হলেও কম্পিউটার শিখতে পারবে এবং যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে তারা ভূমিকা রাখতে পারবে।