যে সময়-এ যে কাজটি করা উচিত সেটি যদি আমরা তখন না করি তাহলে আমাদের জীবনের স্বার্থকতা কোথায়? আসলে সময়ের ব্যাপার সময়েই শেষ করা উচিত, নইলে পরে পসতাতে হয়। আজ মূলত এমন বিষয় নিয়েই আলোচনা করা হবে। তো আর কথা নয় – চলুন শুরু করি।
লালন শাহ্-এর একটা গান আছে, ’সময় গেলে সাধন হবে না’।
যে সময়ে যেটার প্রয়োজন সেটা যদি ঐ সময়েই না পাওয়া যায়, তবে তা পরে দিয়ে কি হবে? মানুষের মন-মানসিকতা এবং চাহিদা বয়সের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়।
যে বয়সে মানুষ তার প্রিয় মানুষ কিংবা জীবন সঙ্গীর থেকে সামান্য একটু সময়, ভালোবাসা, আদর-যত্নের প্রত্যাশা করে সেই বয়সে এসব না পেলে বয়স পার হওয়ার পর তা পাওয়ার কোনো স্বার্থকতা কিংবা প্রয়োজনীয়তা আসলে নেই।
যে বয়সে এসে স্বামীর প্রেমিকা হয়ে থাকার কথা, সেই বয়সে প্রেমিকা না হয়ে বরং বৃদ্ধ বয়স অবধি তার সেবিকা হয়ে থাকার জন্য অপেক্ষা করে করে একসাথে থাকার কোনো মানেই হয় না।
যে বয়সে জীবন সঙ্গীর সঙ্গের প্রয়োজন, সেই বয়সে সঙ্গ না পেয়ে বার্ধক্যে সঙ্গ পাওয়ার কোনো স্বার্থকতা নেই। অবশ্য আমার কথার সাথে সবাই একমত নাও হতে পারে কিন্তু এটাই সঠিক।
স্বীকার করছি যে, বার্ধক্যে ভরসার হাত লাগে, লাগে মানসিক সাপোর্ট, পাশে থাকার ও সেবা করার মানুষ। কিন্তু বার্ধক্যে পৌঁছানোর আগের বয়সে যা যা লাগে তা কি অস্বীকার করা যায়? কোনোভাবেই নয়।
একটা মানুষ অসুস্থ হলে তাকে সেবা করার আগে বা অসুস্থ হওয়ার আগেই তাকে মানসিক ভরসা দেয়া যায় কিনা? তাকে মানসিক ভাবে সুস্থ রাখার চেষ্টা করা যায় কিনা?
শারীরিক ভাবে অসুস্থ হওয়ার আগেই মানুষ হাজার বার মানসিক দিক থেকে অসুস্থ হয়ে যায়। তারপর মন থেকে শুরু করে একসময় অসুখ শরীরে গিয়ে ধরা পরে। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ব্যবস্থায় এমন কথাই বলা হয়।
নির্দিষ্ট সময়ে সঙ্গীর মনের খেঁয়াল না রাখলে যখন অসুখ শরীরে গিয়ে পৌছাবে তখন তার সেবা করে কোনো লাভ হয় কিনা তা আমার জানা নেই।
মানুষের গুরুত্ব সময়ে না বুঝে অসময়ে বুঝে কোনো লাভ নেই। সময়ের কাজ সময়ে মিটিয়ে নেয়াই উত্তম। সময় কখনো কারও জন্য থেমে থাকে না।
ব্যস্ততার অজুহাতে প্রিয় মানুষটাকে তার প্রাপ্য সময়, যত্ন আর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করে বয়স পার হওয়ার পর দরদ দেখালে তার মধ্যে বিরক্তই কাজ করবে বৈকি, তবে এসবে তার আর মন গলানো বা ভরানো – কোনোটাই করা সম্ভব হবে না।
এসব কিছু না পেতে পেতে মানুষের ইচ্ছে-আকাঙ্খা একদমই ফিঁকে হয়ে যায়। আর নয়তো অভিমানে-ক্ষোভে এক সময় মানুষ এসব চাহিদা নিজের মধ্যেই দাফন করে ফেলে, নিজেকে বিরত রাখে।
বিশ্বাস করুন, একটা বয়সে এসে সত্যিই এসবের চাহিদা একদমই থাকে না। পাঁচ বছর বয়সের চাহিদা কখনোই ১৮ বছরে এসে থাকবে না – এটাই প্রকৃতিগত স্বাভাবিক।
তাই সময় থাকতে কিংবা বয়সটা থাকতেই না হয় সঙ্গীর মনের প্রতি যত্নবান হোন, তাকে সময় দিন, তার চাওয়া-পাওয়াগুলো বুঝতে চেষ্টা করুন।
শুধুই বার্ধক্যে নয় বরং যৌবনেও সঙ্গীর প্রেমিক/প্রেমিকা হয়ে জীবনটাকে উপভোগ করতে শিখুন। আর নয়তো শেষ বয়সে এসে এসবের জন্য হা-হুতাশ করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না। না সময়গুলো আর না সেই বয়সটা – কোনোটাই আর ফিরে পাবেন না, শত তপস্যায়ও না।
সময় ও বয়সের সাথে জীবনে যে ৭টি আফসোস রাখবেন না:
১. নিজের চেহারা কিংবা গায়ের রং এর জন্য আফসোস রাখবেন না।
২. অর্থবিত্ত নিয়ে আফসোস রাখবেন না বরং যা আছে তা নিয়ে সবসময় সন্তুষ্ট থাকবেন এবং কঠোর পরিশ্রম করে এগিয়ে যেতে চেষ্টা করবেন।
৩. প্রিয় মানুষ জীবন থেকে হারিয়ে গেলে আফসোস রাখবেন না। বরং এটা বিশ্বাস করবেন যে,আল্লাহ্-ই তাদেরকে আপনার জীবন থেকে সরিয়ে ফেলেছেন কারন তারা আপনার জন্য কল্যাণকর নয়।
৪. নিজের অস্তিত্ব নিয়ে আফসোস রাখবেন না। যা আছেন, যেভাবে আছেন, যেমন আছেন সেভাবেই মেনে নিন, নিজের উপর আফসোস আপনাকে মানসিক কষ্ট দিবে।
৫. নিজের পরিবার নিয়ে আফসোস রাখবেন না। পরিবার যেমনই হোক কৃতজ্ঞ থাকুন এটা ভেবে যে, আপনি এতিম নন এবং আপনার জীবন কোনো এতিমখানায় কাটেনি।
৬. মন নরম আর ইমোশনাল হয়ে থাকলে কখনোই আফসোস রাখবেন না, কারন মন নরম হওয়াটা মুমিনের গুণাবলী।
৭. ভুল মানুষদের ভালোবেসে আফসোস রাখবেন না। কেননা আপনি হারিয়েছেন খারাপ মানুষ কিন্তু তারা হারিয়েছে আপনার মতো ভালো মানুষ। বরং সবসময় আল্লাহর উপর কৃতজ্ঞ থাকুন।
পরিশেষে বলতে চাই, জীবন চলার পথে নানারকম বাধা-বিপত্তি আসতেই পারে। সেগুলো নিয়ে অগ্রিম কখনো বিমর্ষ হবেন না। সবসময় সৎ পথে থেকে সৎ কর্ম করে জীবন পরিচালনার জন্য চেষ্টা করুন।
আরও পড়ুন: দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) এ ১৬৪ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি।
আর যে কাজ যখন করা দরকার সেটি তখনই করুন। সময় গেলে আর সাধন হবে না কথাটা কিন্তু একদম সঠিক। সময়ের সাথে বয়সের এবং বয়সের সাথে কাজের গুরুত্বকে কখনো অবহেলা করবেন না। অন্যথায় জীবনে শুধু আফসোস-ই রয়ে যাবে আপনার।
উৎস: ইন্টারনেট (সামান্য পরিমার্জিত)