সংসার জীবন নিয়ে আমরা অনেকেই অনেক কথা বলি। কেউ সুখের কথা বলি আবার কেউ দুঃখের কথা বলি। কেউ কোটি টাকার মালিক হওয়া সত্ত্বেও নিজ স্ত্রী নিয়ে সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে না আবার কারও কিছু না থাকা সত্ত্বেও নিজ স্ত্রী সারাজীবন ভালোবেসে আকড়ে রাখে স্বামীকে।
সত্যিকার অর্থে, সংসার মানে আইনের দ্বারস্ততায় একজন মেয়েকে নিজের কাছে শুধু রাখা নয়, সামান্য কিছু চাওয়া পাওয়া নয়, আরো অনেক কিছু। আজ সংসার সম্পর্কে তেমনই কিছু বিষয় তুলে ধরা হবে। সময় নিয়ে পুরো পোস্ট পড়ুন। আশা করি, অনেক কিছুই বুঝতে পারবেন।
বছরের পর বছর একই ছাদের নিচে থেকেও অনেক সময় একজন অন্যজনের ভালোবাসার মানুষ হয়ে উঠতে পারে না। পাশের বালিশে প্রতিরাতে ঘুমিয়েও অনেক সময় অত’টা কাছে আসা যায় না।
রোজ রাতে নিয়ম করে স্ত্রীর বুকে-পিঠে নিঃশ্বাসের আর্দ্রতা ঢেলে দেওয়া স্বামীও মাঝে মাঝে টের পায়না নিজেদের ভেতরের দুরত্ব। ৩০ বছর ঘর করার পরেও একে অন্যের প্রেমিক-প্রেমিকা হয়ে উঠতে পারে না।
অথচ, অনেকেই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত একটা ভালোবাসাহীন মানুষের সেবা-যত্ন করতে করতে সময় কাটিয়ে দেয়।
পৃথিবীতে সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো অভ্যাস। শুধুমাত্র অভ্যাসের দোহাই দিয়েই অনেকে সংসারের ডেফিনেশন বোঝাতে চায়।
সংসার মানে আসলে কি?
সংসার মানে কি রোজ দু’বেলা ভাত রান্না করে, স্বামীর প্লেটে মাছের বড়ো পিসটা তুলে দেওয়া?
সংসার মানে কি বাচ্চা উৎপাদনের প্রসিডিউর?
সংসার মানে কি মধ্যরাতে শরীর বিনিময়ের মহা উৎসব?
নাহ, সংসার মানে আসলে একটা নির্ভরশীলতা।
একজনের খারাপ লাগাতে অন্যজনের কষ্ট হওয়া।
সংসার মানে আসলে, জীবনের প্রতিকূলতাগুলোকে শেয়ার করা।
সংসার মানে জীবনটাকে উপভোগ করা।
সংসার হলো আরেকটা জীবন মানুষটার সাথে কাটানোর প্রবল আকাঙ্খা।
সংসার মানে ভীষন মন খারাপের রাতে কেউ এসে বলুক “মন খারাপ করো না, আমি আছি তো”!
সংসার মানে সমস্ত অপ্রাপ্তির পরও মনে হোক, আমার একটা ব্যক্তিগত মানুষ আছে! আমার আলাদা একটা অস্তিত্ব আছে!
সংসার মানে অভ্যাস ভাবতে ভাবতে অনেকেই অনেক সময় ভুলে যায়, বিপরীত মানুষটার গুরত্ব।
প্রেমিকার জ্বর হলে হৃদয় জ্বলে যায়, সারাদিন খোঁজ নিতে ইচ্ছে হয়, প্রচন্ড টেনশন হয়।
অথচ স্ত্রীর জ্বর হলে মনে হয় জ্বর খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়। এটাকে অত’টা গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই।
আমি বলছিনা, জ্বরকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হোক। আমি বোঝাতে চেয়েছি, প্রচন্ড জ্বরের ঘোরে মানুষটার হাতের আঙুল ধরে তাকে তার গুরুত্বটা বোঝানো হোক।
হুট করে একদিন স্ত্রীর হাত ধরে তাকে জিজ্ঞেস করা হোক, তুমি ভালো আছো তো? অভ্যাস ব্যাপারটা মস্তিষ্কে প্রবেশ করানোর পর আমরা আসলে ভুলে যাই, অভ্যাস আর ভালোবাসা এক জিনিস নয়।
নিকোটিন গ্রহণের অভ্যাসের মতো, পৃথিবীর সমস্ত অভ্যাস ক্ষতিকর হতে পারে!
আমরা যারা সংসারকে শুধুমাত্র অভ্যাস বলে চালিয়ে দিই, তারা আসলে নিজেদের চিন্তার গভীরে একটা অসুস্থ্য চেতনা ধারণ করে আছি!
ভালোবাসায় অভ্যাস আসবে ঠিকই, তবে অভ্যাস থাকলেই যে ভালোবাসা আসেনা এটাও আমাদের মাথায় প্রোগ্রামিং করে রাখা উচিত!
সংসার মানে আসলে, বিপরীত মানুষটার যত্ন নেওয়া। সে যত্ন নেওয়ার মানষিকতা যাতে দুজন মানুষের ভেতরই জন্ম নেয়।
শুধু অভ্যাস না, মাঝে মাঝে মানুষটার মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করতে হয় “তুমি ঠিক আছো তো”?
যে সর্ম্পকে একজন অন্যজনকে কানের কাছে গিয়ে বলতে পারেনা, “একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে? মন ভালো লাগছেনা!” সেটা কিসের সম্পর্ক?
অথচ অনেকেই এই অভ্যাসকেই আঁকড়ে থাকে, ভুলে যায় ভালোবাসা, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই অভ্যাসের বশে থাকে।
কেউ আগে থেকে জানেনা এইরকম একটা ভালো থাকার অভ্যাস করে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে হবে। একবার এই অভ্যাসময় জীবনে পা রাখলে বের হবারও পথ থাকেনা কোনো। অনুভূতি গুলোও বদলানো যায় না। শুধু ভালো থাকার অভিনয় করে যেতে হয়।
আরও পড়ুন: আম কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে এবার দেবীগঞ্জে।
অভ্যাস একটা দীর্ঘশ্বাসের নাম। মৃত্যুর আগে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ না করে, আমরা ত্যাগ করি শেষ দীর্ঘশ্বাস।
পরিশেষে বলতে চাই, অভ্যাস দিয়ে জীবনকে সুন্দর করা যায়। কিন্তু মনের কষ্টগুলোকে দূর করা যায় না। আপনি যদি ভালো থাকতে চান তবে সংসার জীবনে আপনাকে সুখী হতে হবে।
নইতোবা কেবল অবহেলার পাত্র হয়ে অভ্যাসের বশবর্তী হয়ে বুক চাপা কষ্ট নিয়ে সারাটা জীবন পার করতে হবে। সময় থাকতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন।
উৎস: ইন্টারনেট (সামান্য পরিমার্জিত)