শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে এর আগেও বিভিন্ন সংবাদ পত্রিকায় খবর ছাপানো হয়েছে। দেশটির অর্থনীতি আর আগের মতো নেই। বলা চলে, অর্থনীতি ধসে পড়েছে। এই অর্থনীতি আগের অবস্থায় ফিরে যেতে লাগতে পারে কয়েক বছর।
বর্তমানে শ্রীলঙ্কার প্রতিটি পরিবারের প্রতিটি সন্তান স্কুলে যেতে পারছে না। কারণ, আর্থিক অবস্থার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পরিবারগুলো বাধ্য হচ্ছে। কোন পরিবারে যদি ৩ জন সন্তান থাকে সেখান থেকে মাত্র একজনকে স্কুলে পাঠানো হচ্ছে। বিবিসি অনলাইনে এ সম্পর্কে বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়েছে।
বিবিসি অনলাইনে আরও বলা হয়েছে যে, ছয় মাস আগে যখন অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয় তখন দেশটির রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। জনগণের চাপের মুখে সরকারও পরিবর্তনও হয়। রাজনৈতিক দিক থেকে বর্তমানে দেশটি অনেকটাই শান্ত।
কিন্তু গণবেকারত্ব ও অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে প্রায় অধিকাংশ পরিবারই দিশেহারা অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। চরম দুঃখ দুর্দশা নেমে এসেছে জনজীবনে। কোনভাবেই কমানো যাচ্ছে না কোনো পণ্যের দাম। মানুষের তিন বেলা খেয়ে পড়ে টিকে থাকায় যেন সম্ভব হয়ে উঠছে না।
মালকির মা (শ্রীলঙ্কার একটি পরিবার) প্রিয়ন্তিকা চরম অভাবের কারণে সন্তানদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। সন্তানদের নিয়ে তিনি আতশবাজি বিক্রি করেন। আতশবাজি বিক্রি করে যা আয় হয় তাই দিয়ে কোনমতে সংসার চলে। যেদিন আয় হয়না সেদিন মালকির পরিবারের সবাইকে না খেয়ে থাকতে হয়।
শ্রীলঙ্কায় মুদ্রাস্ফীতি চরম পর্যায়ে পৌছে গেছে অর্থাৎ যা প্রায় ৯৫ শতাংশ। তাই খাদ্য দ্রব্যের দামও রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে গেছে যা সাধারন জনগণের নাগালের বাইরে।
উল্লেখ্য যে, শ্রীলঙ্কায় স্কুল শিক্ষা বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। কিন্তু কোন খাবার দেওয়া হয় না। খাবার, ইউনিফর্ম ও পরিবহন খরচ হিসাব করলে বর্তমানে দেশটিতে স্কুলের পড়াশোনা একটি বিলাসী ব্যাপার যা প্রিয়ন্তিকার পরিবারের পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব নয়।
আজকের খাবার জোগাড় হয়ে গেলে আগামীকাল কি খাব, কীভাবে খাবার জোগাড় হবে তা নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে। এটাই এখন আমাদের জীবন হয়ে গেছে। (প্রিয়ন্তিকা, মালকির মা)
জানলে অবাক হবেন যে, প্রিয়ন্তিকারা এক কক্ষের বাসায় থাকা একটি বিছানায় সবাই গাদাগাদি করে ঘুমান। তিনি কান্না করে বলতে থাকেন, “যদি সন্তানদের স্কুলে পাঠাই তবে দিনে প্রতি সন্তানের জন্য ৪০০ রুপির প্রয়োজন হবে। আগে সব সন্তানই স্কুলে যেত। কিন্তু বর্তমানে তাদের সবাইকে স্কুলে পাঠানোর সামর্থ্য আমার নাই।”
মালকির আগের জুতা ও ইউনিফর্ম এখনো গায়ে বলে সে স্কুলে যেতে পারছে। কিন্তু তার ছোট বোন যদি স্কুলে যায় তবে তার জন্য সব কিছু কিনতে হবে। তার পরিবারের পক্ষে এসব কেনা কোনভাবেই সম্ভবপর নয়। তাই তার ছোট বোনের স্কুলে যাওয়া হচ্ছে না।
এখানে একটি পরিবারের কথা বলা হয়েছে। এরকম অবস্থায় হাজার হাজার পরিবার রয়েছে। বর্তমানে এসব সমস্যার সমাধানে দেশটির সরকার ব্যর্থ। কারণ, বর্তমান সরকারের তেমন কোনো রিজার্ভ নেই।
আর্থিক দুর্দশার কারণে শ্রীলঙ্কার সরকার ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে গত এপ্রিল মানে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে। তখন শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিলো ৫ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। রাজাপক্ষের পদত্যাগের পরে নতুন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহ ক্ষমতায় এসে কর ছাড়ের কিছু সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন।
আরও পড়ুন: জামিন পেলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাস