শ্বেতী নিয়ে আলোচনার শুরুতেই এ কথা জানিয়ে দেয়া একান্ত ভাবে প্রয়োজন মনে করছি। যে সব রোগ নিয়ে নানা কুসংস্কার ছড়ানো হয়েছে তার মধ্যে শ্বেতী অন্যতম।
ফলে শ্বেতী রোগকে ঘিরে এক ধরণের অযথা ভয় এবং আতংক ছড়ানো হয়েছে। কিন্তু শ্বেতী কোনো ভয়ের রোগ নয়। শ্বেতী রোগের কারণ নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।
বংশগত প্রভাবে কারো কারো এই রোগ হয় বলে দেখা যায়। এ ছাড়া বর্তমানে বাজারে প্রসাধনী সামগ্রী হিসেবে কতগুলো ক্যামিক্যাল বা সিন্থেটিক জিনিস পাওয়া যায়। এগুলোর ব্যবহার বা স্পর্শ থেকে এলার্জিক প্রতিক্রিয়া ঘটার ফলে অনেকের শ্বেতী হয় বলে দেখা গেছে।
চশমার আঁটসাঁট ফ্রেম থেকে নাকের দু’পাশে বা কানের কাছে সাদা হতে দেখা যায়। কপালে পড়ার সিন্থেটিক টিপ থেকে শ্বেতীর শুরু হতে দেখা যায়।
এ ছাড়া দীর্ঘ দিন ধরে প্লাস্টিক বা রাবারের জুতা, ঘড়ির বেল্ট প্রভৃতি ব্যবহার থেকে, কারও কারও কব্জিতে বা পায়ে শ্বেতীর চিহ্ন বা অন্যান্য স্কিন ডিজিজ দেখা যায়।
শ্বেতী রোগের ফলে স্বাস্থ্যহানি হয় না, শুধু স্কিনের স্বাভাবিক বর্ণ নষ্ট হয়। এই রোগে জীবননাশের তেমন কোনো আশঙ্কা থাকে না। তবে রোগীর প্রচন্ড মানসিক কষ্ট হয়।
রোগী সাধারণ ভাবে রোদ ও আগুনের তাপ সহ্য করতে পারে না। শ্বেতী হলে সাধারণ ভাবে প্রথমে ছোট ছোট সাদা দাগ দেখা যায়।
কিছু দিনের মধ্যেই দাগগুলো মিলে বৃহদাকার ধারণ করে। কখনো কখনো মায়ের গর্ভ থেকে শ্বেতী রোগ নিয়ে শিশু জন্ম গ্রহণ করতে পারে।
শ্বেতী হলে কি হয় এবার সেদিকে নজর দেই। সাদা বা কালো সে যাই হোক না কেনো ত্বক বা চামড়ার স্বাভাবিক এই রং যখন থাকে না তখন তাকে শ্বেতী বলা হয়।
মেলানোসাইট নামে ত্বকে এক জাতীয় কোষ আছে আর এই কোষ মেলানিন নামে একটি রং উৎপাদন করে বলেই আমরা ত্বকের স্বাভাবিক রংটি দেখতে পাই।
শ্বেতী হলে রং আর উৎপাদন ঘটে না। তখন ত্বকের একটি অস্বাভাবিক রং দেখতে পাই আর একেই আমরা শ্বেতী বলে থাকি।
যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের শ্বেতী রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা বৃদ্ধি পায়। একইভাবে থাইরয়েডের রোগ থাইরোডাইটিস বিশেষ করে যাদের থাইরোডাইটিস হয় তাদেরও শ্বেতী হতে পারে। বিশেষ এক জাতের রক্তশুন্যতা থেকেও এই রোগ হতে পারে।
বাংলাদেশের ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের প্রধান অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডা. শাহাবউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী এ রোগ সর্ম্পকে আমাদের উপরোক্ত কথাগুলো বলেছিলেন।
শ্বেতী রোগ যে সংক্রামক নয় আলোচনার শুরুতেই সে কথা বলেছি। তারপরও এই রোগ নিয়ে জনমনে নানা বিভ্রান্তি বিরাজ করায় বিষয়টি আমরা বিশিষ্ট চিকিৎসক প্রফেসর ডা. শাহাবউদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর কাছে তুলে ধরি।
তিনি জানালেন, এই চর্ম রোগ মানে শ্বেতী মোটেও সংক্রামক নয়। এ ব্যাপারে তিনি একশত ভাগ নিশ্চয়তা প্রদান করেন।
তিনি আরো বলেন, অনেকেই বিভ্রান্তিবশতঃ শ্বেতী রোগকে কুষ্ঠ রোগের সাথে এক করে ফেলে যা মোটেও ঠিক নয়। কুষ্ঠ মূলত জীবাণু ঘটিত রোগ অন্যদিকে শ্বেতী হয় দেহের আভ্যন্তরীণ কারণে।
তবে কেবল শ্বেতী হলেই দেহের চামড়া বা ত্বকের রং পরিবর্তন হতে পারে তা নয়, আরো কিছু কারণে ত্বকের রং পরিবর্তন ঘটতে পারে।
এর মধ্যে রয়েছে পুড়ে যাওয়া বা রাসায়নিক বিভিন্ন পর্দাথের স্পর্শ। অন্য কোনো চর্ম রোগ শরীরে হলে তা সেরে যাওয়ার পরও ত্বকের রং পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।
ত্বকের এ অবস্থাকে চিকিৎসক’রা লিউকো ডারমা বলে থাকেন । ছলন বা ছুলি নামে পরিচিত কিছু চর্ম রোগের কারণে ত্বকের স্বাভাবিক রোগ হ্রাস পেতে পারে।
এ জাতীয় রোগের ক্ষেত্রে ত্বকের পুরো রং নষ্ট হয় না। বরং ত্বকের স্বাভাবিক রং হ্রাস পায়। আবার আমরা এক ধরণের মানুষ দেখতে পাই যাদের দেহের সম্পূর্ণ ত্বকই সাদা হয়ে যায়। এমনকি চোখের রংও বদলে যায়। এলবিজম নামে পরিচিত একটি রোগের কারণে এমনটি হতে পারে।
শ্বেতী রোগে জনসংখ্যার কত শতাংশ আক্রান্ত হয়ে থাকে এবার সে ব্যাপারে আমরা একটু নজর দেবো। চিকিৎসকদের হিসেব অনুযায়ী শুন্য দশমিক ৫ হতে এক শতাংশ পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
অর্থাৎ প্রতি একশ জনে একজন বা দুই জনের শ্বেতী হয়ে থাকে। নারী বা পুরুষ ভেদে অনেক রোগের প্রকোপের হেরফের হতে পারে।
পরিশেষে বলা যায়, শ্বেতী রোগ আমাদের দেশে প্রায়ই দেখা যায়। এ রোগ হলে বা লক্ষণ দেখা দিলে অনেকেই কবিরাজি চিকিৎসা করে। এতে ত্বকের ক্ষতি হয়। লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
আরও পড়ুন: মেয়েদের মাইগ্রেন রোগ কেন হয়? কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা জেনে নিন।