শিশুর স্মরণশক্তি বৃদ্ধির বেশ কিছু উপায় রয়েছে। ছোটবেলা থেকেই যদি ওসব যত্ন করা হয় তাহলে বড় হলে শিশুটির মেধা হবে প্রখর। আজ আমরা আলোচনা করবো কিভাবে শিশুর স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে। তো আর কথা নয় – সরাসরি যাচ্ছি মূল আলোচনায়।
১. ছোট শিশুদের জন্য মায়ের দুধ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ, মায়ের দুধ শিশুর স্মরণশক্তি বৃদ্ধির জন্য এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, এর বিকল্প আর কিছুই নেই। এটা আল্লাহর নেয়ামত।
২. কিশোর-কিশোরীদের জন্য পুষ্টি ও সুষম খাদ্য শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য একান্ত দরকার । অনেক টিনএজ মেয়েরা ডায়েটিং করে থাকে। এতে স্মরণশক্তি (মেমোরি) বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অন্তরায় হতে পারে। এ ব্যাপারে সাবধান থাকা উচিত।
৩. অনেক গবেষক মনে করেন, বাদাম দুধের সঙ্গে মিশিয়ে সকালে খাওয়ানো যেতে পারে। এতে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ নিশ্চিত হয়।
৪. তাজা বা ফ্রেস ফলমূল যেমন- আম, পেঁপে, পেয়ারা, তরমুজ ইত্যাদি বেশি বেশি খাওয়ানো উচিত। কারণ, পৃথিবীতে যতো খাবার আছে তন্মধ্যে বিভিন্ন ভিটামিনের একমাত্র বড় উৎস হলো ফলমূল।
৫. শিশুর আয়রণ ও জিংক ঘাটতি থাকলে স্মরণশক্তির সমস্যা থাকতে পারে। সেদিকে খেয়াল রেখে জিংক ও আয়রন চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে নিয়মিত খাওয়ানো যেতে পারে।
৬. ওমেগা ও ফ্যাটি এসিড বুদ্ধি ও স্মরণশক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে বলে বিশ্বাস করা হয়। অতএব ওমেগা ও ফ্যাটি এসিড বেশি খাওয়ানো উচিত। সাগরের মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়।
ব্রিটেনে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কম মনোযোগী বাচ্চাদের (Fish Oil) খাওয়ানোর পর তাদের বিহেভিয়ার ও স্কুল Performance এর উন্নতি হয়েছে। তাই এগুলো পরিমাণে সামান্য কম, ভাত, সবজি ও মাছ খাওয়াই ভালো।
৭. স্বাস্থ্য ভালো রাখার সাথে সাথে শিশুর মানসিক বিকাশ ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য পরিমিত ঘুম খুবই দরকার। এইজন্য পরীক্ষার আগে সারারাত জেগে পড়ার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে মনে হচ্ছে না। রুটিন মাফিক পড়াই উত্তম। পড়ার পর বিশ্রাম স্মরণশক্তি বাড়ায় অর্থাৎ ঘুম স্মরণশক্তি বাড়ায়।
৮. ব্যায়াম স্মরণশক্তি বাড়ায়। বড় বড় করে বাচ্চাকে শ্বাস নিতে বলুন। পেট ভরে শ্বাস নিলে তাতে ব্রেনের থিটা ওয়েব বেশি হবে। ব্রেনে অক্সিজেন বেশি সঞ্চালন হবে। স্মরণশক্তি বাড়বে।
৯. সুগার ছাড়া চুইংগাম চিবাতে দিতে হবে। এতে কিছুক্ষণের জন্য ব্রেনে অক্সিজেন সঞ্চালন বেশি হতে পারে। তবে খুব বেশি পরিমাণে চুইংগাম চিবানো ঠিক নয়।
১০. যদি খুব টেনশন লাগে তাহলে নিয়মিত মেডিটেশন করা যেতে পারে। মেডিটেশন স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।
১১. পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে হলে প্রয়োজন পড়াশুনা, বেশিদিন মনে রাখা এবং বেশি সময় স্মরণ থাকা। তাই শিশুর মেধা বিকাশে অবশ্যই মা-বাবাকে সজাগ থাকতে হবে।
তাই, প্রত্যেক পিতা-মাতার শিশুর মানসিক বিকাশ তথা স্মরণশক্তি বৃদ্ধির জন্য নিম্নোক্ত কাজগুলো করা উচিত। যেমন-
১. কফি, কেনডি ও বিভিন্ন ধরণের ড্রিংক না খাওয়াই ভালো। একেবারে খেতে দিবেন না এমন নয়, পরিমিত পরিমাণে খাওয়ান।
২. ছোট ছোট শিশুদের বলুন- এই ছড়াটা মনে রাখতে পারলে এই উপহারটা পাবে। তাহলে তারা সেটা মনে রাখার ক্ষেত্রে মনোযোগী হবে।
৩. আমি পারবো- এই ধারণা শিশুকে আরো সামনে নিয়ে যেতে উৎসাহ জোগাবে। তাই যেভাবেই হোক তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ান।
৪. এতোটুকু সময়ে এই পরিমাণ পড়বে এই জন্য টাইমবক্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পড়াশোনার জন্য সময় নির্ধারণ করে দেন। এতে তারা ঐ সময়টুকুর জন্য মনোযোগী হবে।
৫. মনে মনে ওই পড়াটা আবার স্মরণ করা। অর্থাৎ প্রতিদিনই পূর্বেকার দিনের পড়াগুলো রিপিট করান।
৬. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির প্রধান শর্ত হলো শিক্ষণ। শিশুকে যতোটুকু পড়াবেন তা যেন শিশু বুঝে বুঝে পড়ে এবং পড়ার সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকে এমন কিছু মিলিয়ে উদাহরণ দিয়ে কোনো ক্ষেত্র তৈরি করে পড়ানো উচিত।
৭. ছন্দ ও সুর করে পড়া ভালো।
৮. মৃদু জোরে জোরে পড়লে দুটি ইন্দ্রীয় কাজ করে থাকে বিধায় মনোযোগ বেশি থাকে শিশুর জন্য এটি দরকারি। তাদেরকে প্রাথমিকভাবে এভাবে পড়া শিখান।
৯. প্রতিদিন নিয়মিত পড়লে খুব অল্পতে পরীক্ষার প্রস্তুতি হয়ে যায়। এই বিষয়গুলো শিশুদের মাথায় ঢোকানোর চেষ্টা করবেন।
১০. পরীক্ষার আগে অনেক মানসিক চাপ থাকে। এই চাপের কারণে পড়া শেষ হয় না। অতএব রুটিন অনুযায়ী পড়া উচিত।
১১. একটানা দীর্ঘ সময় পড়ার পর মাঝখানে একটু বিশ্রাম নেয়া ভালো। তাতে আবার পূর্ণ শক্তি পাওয়া যায়। কখনো একটানা দীর্ঘ সময় পড়তে দেবেন না।
১২. পড়ার পর, মাঝখানের থেকে প্রশ্ন করতে হবে কি পড়লাম। তাহলে শিশুদের মাথায় সব কিছু ঠিকভাবে সংযুক্ত হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, শিশুর স্মরণশক্তি বিকাশে মা-বাবার অনেক দায়িত্ব রয়েছে। কারণ, শিশুরা নিজের যত্ন নিজে নিতে পারে না। তাই তাদের যতোটা যত্ন করে গড়ে তোলা হবে তাদের স্মৃতিশক্তি ততোটাই প্রখর হবে।
আরও পড়ুন: টুথপেস্ট দিয়ে করা যায় এমন ১০টি দুর্দান্ত কাজ সম্পর্কে জেনে নিন।