শিশুদের কোন রোগ হলে মা-বাবা অস্থির হয়ে যায়। হওয়ারই কথা কারণ শিশুরাই একটি পরিবারের হাসি এবং আনন্দ। সেই শিশুদের যদি রোগ হয় এবং তারা যদি তাতে কষ্ট পায় তবে এটা খুবই কষ্টদায়ক।
শিশুদের রোগ হলে তারা সাধারনত প্রকাশ করতে পারে না। লক্ষণ দেখে বুঝে নিতে হয়। কাজটি করতে হয় মা-বাবা এবং প্রয়োজনে ডাক্তারকে।
আজ আমরা শিশুদের রোগের ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করবো। আশা করি, তথ্যগুলো সবার উপকারে আসবে। তো আর কথা নয় – সরাসরি যাচ্ছি মূল আলোচনায়।
১. ঘুমের মধ্যে শিশুদের দাঁত কটমট করার জন্য Cina অথবা Cannabis Indica প্রতিদিন দুইবার করে তিন দিন খাওয়ান; (মোটা শিশুদের অথবা পেট মোটা শিশুদের বেলায় Calcarea carb একই নিয়মে খাওয়ান)।
২. শিশুদের শরীর বৃদ্ধি না হয়ে বামন হতে থাকলে Thyroidinum অথবা Aurum Metallicum (শক্তি ৩০, ২০০) নামক ঔষধটি সাতদিন পরপর একবার করে দুই-তিন মাস খাওয়ান।
যথেষ্ট উন্নতি না হলে প্রয়োজনে ছয় মাস পর আবার খাওয়াতে পারেন। এতে করে শরীর অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে। হোমিওপ্যাথি ঔষধ শরীরে দীর্ঘদিন কাজ করে মনে রাখবেন।
৩. শিশুরা বুকের দুধ খাওয়ার সময় যদি স্তনের বোটায় কাপড় দেয়, তবে শিশুকে কিউপ্রাম মেট (Cuprum Metallicum) খাওয়ান। যদি তাতে কাজ না হয়, তবে পোডোফাইলাম (Podophyllium) ঔষধটি খাওয়াতে পারেন।
৪. শিশুর হাঁটা শিখতে বা দাঁত ওঠতে দেরী হলে Calcarea carb (শক্তি কিউ, ৩,৬,১২, ৩০) সপ্তায় একমাত্রা করে তিনমাস খাওয়ান।
৫. পক্ষান্তরে কথা শিখতে বা পড়াশোনা শিখতে দেরী হলে Natrum mur সপ্তায় একমাত্রা করে তিনমাস খাওয়ান (বিশেষত যাদের পা মোটা কিন্তু ঘাড় চিকন এবং লবণযুক্ত খাবার বেশী খায়)।
৬. শিশু জন্ম থেকেই বোকা হলে Calcarea phos এক সপ্তাহ পরপর একমাত্রা- এভাবে তিনমাস খাওয়ান। এতে কাজ না হলে বিশেষজ্ঞ হোমিও ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৭. পক্ষান্তরে শিশু গোঁয়ার্তুমী এবং দুষ্টুমিতে ওস্তাদ হলে Medorrhinum (শক্তি ১০,০০০) একমাত্রা খাওয়ান। পরবর্তীতে শক্তি বাড়িয়ে খাওয়াতে পারেন।
৮. যেসব শিশুরা ঘরের ভেতর স্বৈরাচার কিন্তু বাইরে গেলে ভদ্রলোক তাদেরকে Lycopodium (শক্তি ১০,০০০) মাসে একমাত্রা করে তিনমাস খাওয়ান। পরবর্তীতে শক্তি বাড়িয়ে খাওয়াতে পারেন।
৯. পক্ষান্তরে যে-সব শিশু ঘরে-বাইরে সর্বত্র সমান দুষ্টুমি এবং শয়তানী করে, তাদেরকে Bacillinum (শক্তি ১০,০০০) দুইমাস পরপর একমাত্রা করে ছয়মাস খাওয়ান। পরবর্তীতে শক্তি বাড়িয়ে খাওয়াতে পারেন।
১০. যেসব শিশু সর্বদা মায়ের আচল ধরে থাকে অর্থাৎ হাত ধরে থাকে, তাদের যেকোন পেটের রোগে Bismuthum ঔষধটি খাওয়াতে ভুলবেন না।
১১. যেসব শিশু দেখতে বৃদ্ধদের মতো দেখায়, তাদের চিকিৎসায় প্রায়ই Argentum Nitricum (মিষ্টি খাবার বেশী পছন্দ), Calcarea Carbonica (থলথলে স্বাস্থ্য) অথবা Natrum Muriaticum (লবণ বেশী পছন্দ) দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে হয়
(শক্তি কিউ, ৩,৬,১২, ৩০)।
১২. যেসব শিশু অপরিচিত মানুষের সামনে পায়খানা করতে পারে না, তাদের অধিকাংশ রোগ-ব্যাধি Ambra Grisea ঔষধটি ব্যবহারে সেরে যাবে।
এমনকি তাদের এই অদ্ভুত স্বভাবটি পযর্ন্ত দূর হয়ে যাবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব শিশুদের মধ্যে কোষ্টকাঠিন্য, পাইলস প্রভৃতি রোগের উৎপাত বেশী দেখা যায়।
১৩. শিশুর দুধ সহ্য হয় না, খেলেই বমি করে দেয় লক্ষণে Silicea বা Aethusa cynapium (শক্তি কিউ, ৩,৬,১২, ৩০) তিনবেলা করে খাওয়ান।
১৪. যে শিশু সারাক্ষণ ঘ্যান ঘ্যান করে আর কোলে ওঠে থাকতে চায়, তাকে Chamomilla (শক্তি ৩০, ২০০) পাঁচ দশটি বড়ি রোজ দুইবেলা করে এক সপ্তাহ খাওয়ান।
১৫. মায়ের দুগ্ধ গাঢ়, নোনতা, বিস্বাদ প্রভৃতি হওয়ার কারণে শিশু না খেতে চাইলে Calcarea carb অথবা calcarea phos অথবা Phytolacca (শক্তি কিউ, ৩,৬,১২,৩০) তিনবেলা করে পনেরদিন খাওয়ান।
১৬. শিশু ক্রমশ শুকিয়ে গেলে কিংবা ভাল খেয়েও শুকিয়ে গেলে Calcarea phos (শক্তি ২০০) চারদিন পরপর একমাত্রা করে দুইমাস খাওয়ান।
১৭. শিশু অন্ধকারকে ভয় পেলে Medorrhinum (শক্তি ১০,০০০) একমাত্ৰা খাওয়ান।
১৮. শিশু সর্বদাই ক্রুদ্ধ থাকে, মাত্রাতিরিক্ত ক্ষুধা লক্ষণে Staphisagria (শক্তি ২০০) রোজ দুইবেলা চারদিন খাওয়ান।
১৯. গোসল করানোর সময় শিশু কান্নাকাটি করলে Sulphur (শক্তি ২০০১ সপ্তাহে একমাত্রা করে একমাস খাওয়ান।
২০. শিশু ঘুমের মধ্যে দাঁত কটমট করলে Argentum Nitricum অথবা Calcarea Carbonicum (শক্তি ২০০) সপ্তাহে একমাত্র করে একমাস খাওয়ান।
২১. শিশুদের শরীর থেকে টক গন্ধ বের হলে Magnesium carbonium (শক্তি ২০০) আর দুর্গন্ধ বের হলে Psorinum (শক্তি ২০০) সপ্তাহে একমাত্রা করে একমাস খাওয়ান।
২২. শিশু বা বয়ষ্ক যে কোনো লোক কুকুরকে খুব ভয় পেলে Bacillinum (শক্তি ১০,০০০) দুইমাস পরপর একমাত্রা করে ছয় মাসে তিন মাত্রা খাওয়ান।
পরিশেষে বলা যায়, শিশুদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথির মতো নিরাপদ আর কোনো চিকিৎসা হয় না। এখানে মৃত্যুর কোনো ঝুঁকি নেই। আর অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে সামান্য এলোমেলো হলেই ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
কিন্তু তাই বলে নিজের ইচ্ছে মতো শিশুদের হোমিওপ্যাথিক ঔষধ খাওয়ানো যাবে না। যেকোন সমস্যার ক্ষেত্রে আপনার নিকটস্থ অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ খাওয়ান।
আরও পড়ুন: ডা. টিমোথি ফিল্ড এলেন এর হোমিওপ্যাথিক মর্মবানী জানুন।