এত বছরে ভক্ত ও সহশিল্পীদের কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছি তা অতুলনীয়। আমার সহ-অভিনেতারা যখন আমাকে মা বলে ডাকে তখন আমি গর্বিত এবং আবেগপ্রবণ বোধ করি,” শর্মিলী আহমেদ মে মাসে বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য পত্রিকা “ডেইলি স্টার” এর সাথে তার শেষ সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন।
শর্মিলীর উত্তরার বাড়িতে তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে গোটা বিনোদন ইন্ডাস্ট্রিতে শোকের ছায়া নেমে আসে।
৭৫ বছর বয়সী এই শিল্পী, যিনি ক্যান্সারে ভুগছিলেন, তিনি নৈপুণ্যকে খুব পছন্দ করতেন – অভিনয় থেকে খুব কমই বিরতি নিতেন। অভিনয়ের প্রতি তার ভালোবাসা শুরু হয় চার বছর বয়সে, মঞ্চে তার প্রথম নাটকে।
১৯৪৭ সালের মে মাসে মাজেদা মল্লিক হিসাবে তিনি জন্মগ্রহণ করেন, তিনি ১৯৬২ সালে রেডিওতে, ১৯৬৪ সালে চলচ্চিত্রে এবং ১৯৬৮ সালে টেলিভিশনে তার কর্মজীবন শুরু করেন।
তিনি বাংলাদেশী টেলিভিশনের প্রথম নাটক সিরিয়াল “দম্পতি” এর অংশ হিসাবে ইতিহাস রচনা করেন। সেসময় এই নাটক সিরিয়ালটি খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবন জুড়ে, শর্মিলী প্রায় ৪০০টি চলচ্চিত্র এবং ১৫০টি টেলি-কল্পকাহিনীতে অভিনয় করেছেন। পরবর্তীতে তিনি পর্দায় একজন মায়ের ভূমিকায় চিত্রিত করেছে।
তিনি একজন এমন মা ছিলেন যার উষ্ণতা, করুণা এবং সরলতা প্রত্যেকের হৃদয় জয় করেছিল। যারা দেশের চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন অনুষ্ঠান সম্পর্কে খুব বেশি সচেতন ছিলেন তিনি ছিলেন তাদেরই একজন।
তার শত শত সূক্ষ্ম টিভি এবং চলচ্চিত্রের কাজগুলোর মধ্যে, তিনি “মালঞ্চ”, “আগুন”, “আবির্ভাব”, “পৌষ ফাগুনের পালা”, “মেহেরজান”, “আবার হাওয়া বদল”, “বৃষ্টির পোড়া”, “আমাদের” সহ আরো অনেক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
দুর্ভাগ্যবশত, প্রবীণ অভিনেত্রী তার এতসব প্রচেষ্টার জন্য একটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাননি। ” এই বিষয়টি আমাকে মোটেও বিরক্ত করে না,” তিনি একটি স্বনামধন্য পত্রিকাতে এমন কথাই বলেছিলেন।
আরও বলেছিলেন তিনি “মানুষ আমাকে যে স্নেহ ও শ্রদ্ধা দেখায়, আমি যেখানেই যাই, সেটাই আমার পুরস্কার।”
অনেক খ্যাতিমান অভিনেতা মহান অভিনেত্রীকে শ্রদ্ধা জানাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক কথা লিখেছেন।
প্রখ্যাত অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা ফেসবুকে লিখেছেন, “পুরো অভিনয় ভ্রাতৃত্ব তার মাকে হারিয়েছে।” ঢালিউড ‘বাদশা’ শাকিব খান লিখেছেন, “তার আন্তরিক হাসি এবং করুণা ছিল মায়ের মতো – শর্মিলী আহমেদ আন্টি সত্যিকারের পর্দার ‘মা’ ছিলেন”।
গতকাল জুমার নামাজের পর উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের মসজিদে শর্মিলির নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বনানী কবরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
আরও পড়ুন: ইলন মাস্ক টুইটার কেনা থেকে সরে আসলেন যেকারণে।