শরীর ও মন ভালো রাখার উপায়:
আমরা সবসময়ই সুস্থ্য থাকতে চাই। শরীর ও মন ভালো রাখতে চাই। কিন্তু নানা কারণে আমরা প্রায়শঃই অসুস্থ্য হয়ে যাই। কিন্তু কিছু নিয়ম-কানুন ও করণীয় সম্পর্কে সচেতন থাকলে সুস্থ্য থাকা সম্ভব। আজকের এই নিবন্ধে এমন কিছু বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করবো।
শরীর ও মন ভালো রাখার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গবেষণাপত্র পর্যন্ত বের হয়েছে। বিভিন্ন জার্নালে বিভিন্ন তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। সেই সব তথ্যের আলোকে সন্নিবেশিত কিছু তথ্য নিম্নে তুলে ধরা হলো:
১। বেশি করে ফলমুল খেতে হবে: শরীর ও মন ভালো রাখার স্বার্থে নিয়মিত বিভিন্ন ধরণের কাঁচা-পাঁকা ফলমুল খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। সবার সাধ্য সমান নয়। তবে অল্প পরিমাণে হলেও খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
শরীর ভালো থাকলে মনও ভালো থাকে। শরীরের সাথে মনের একটি আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। আর ফলমুলে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রকার প্রয়োজনীয় ভিটামিন রয়েছে।
২। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা: শরীরের জন্য পানি খুবই অত্যাবশ্যকীয় একটি উপাদান। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করা প্রয়োজন। আর শরীরের পয়ঃনিষ্কাশন পদ্ধতিকে সচল রাখতে ও ভালো রাখতে পানি অতুলনীয়।
সুতরাং সুস্থ্য থাকার তাগিদে প্রতিদিন অবশ্যই অন্তত ৮ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করুন। মনে রাখবেন, পানির অপর নাম জীবন।
৩। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম: সারাদিন পরিশ্রম করার পর শরীরে খুব ক্লান্তি চলে আসে। আর এই জন্য প্রয়োজন হয় ঘুমের। কিন্তু পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে শরীরে নানা রকম রোগ বাসা বাঁধে।
ঘুম কম হলে সাধারণত একজন ব্যক্তি মানসিকভাবে বিভিন্ন অবসাদে ভুগেন। সুতরাং শরীর ও মন সুস্থ্য রাখার জন্য প্রতিদিন অন্তত ৮ ঘন্টা ঘুমানোর অভ্যাস করুন। অসময়ে বেশি ঘুমানোর অভ্যাস আপনার ঘুমের তৃপ্তি আনবে না বরং আপনার ক্ষতি হবে।
৪। মনের ইচ্ছেকে গুরুত্ব দেয়া: মনের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কোনো কিছু করে কখনো সফল হওয়া যায় না তো বটেই আবার সুস্থ্যও থাকা যায় না। তাই নিজের মনের ইচ্ছেকে গুরুত্ব দিন। মন যা চায় তা করুন। তাই বলে যাচ্ছে তাই অবস্থা যাতে না হয়।
আর মনের মধ্যে প্রশান্তি থাকলে শরীরও ভালো থাকে। মনের বিপরীতে কাজ করা যায় কিন্তু তা বেশিদিন টেকসই হয় না এবং সুস্থ্যও থাকা যায় না।
৫। অতিরিক্ত ওষুধ না খাওয়া: অসুস্থ্য হলে ডাক্তারের পরামর্শ মতো ওষুধ খাবেন – এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু খুব বেশি পরিমাণে খেতে যাবেন না। ডোজ পূর্ণ করার পর ওষুধ খেতে যাবেন না।
মনে রাখবেন, পৃথিবীতে যতো ওষুধ রয়েছে সব ওষুধের সাইড ইফেক্ট রয়েছে। ওষুধের মাধ্যমে যেমন সুস্থ্য হওয়া যায় তেমনি অতিরিক্ত খেয়ে ফেললে বিভিন্ন ক্ষতির সাথে অসুস্থ্য হওয়াটাই স্বাভাবিক।
৬। মাদক পরিহার করুন: মাদক কখনো জীবনের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনে না। যারা মাদক সেবী তারা অল্প সময়ের জন্য এক ধরণের সুখ উপলব্ধি করে। আর জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা থেকে অনেকেই মাদক সেবী হয়ে যায়।
যাইহোক, সুস্থ্য ও ভালো থাকার জন্য অবশ্যই সব ধরণের মাদক, অ্যালকোহল এবং ধুমপান পরিহার করতে হবে। বিভিন্ন গবেষণাপত্রে মাদক দ্রব্যের ভয়াবহতা সম্পর্কে প্রায়ই তথ্য প্রকাশিত হয়।
৭। সূর্যের আলোতে সময় কাটান: সকালবেলা সূর্যের আলোতে কিছুক্ষণ বসে থাকার অভ্যাস করলে শরীরের জন্য তা খুব ভালো কিছু বয়ে আনে। সূর্যের আলোতে রয়েছে ভিটামিন ডি। বিভিন্ন গবেষণাপত্র অনুযায়ী, সূর্যের আলোতে রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপাদান।
তাই ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে সকালের রোদ পোহানোর অভ্যাস করুন। এতে মন-মানসিকতাও চাঙা হয়ে উঠেবে। তবে প্রখর রোদ শরীরের জন্য ক্ষতিকর – মনে রাখবেন।
৮। দূশ্চিন্তা দূরে রাখুন: কথায় বলে, চিন্তা রোগ নাকি কোনদিন সারে না। সত্যিই তাই। আপনি যদি সুস্থ্য থাকতে চান তবে খুব বেশি চিন্তা বা টেনশন করবেন না। চিন্তু বা টেনশন মানুষকে আস্তে আস্তে নিস্তেজ করে ফেলে। মানুষ তার কর্মচাঞ্চলতা হারিয়ে ফেলে।
চিন্তা মানুষের স্নায়ুতন্ত্রকে দূর্বল করে দেয়। কখনো কখনো অতিরিক্ত চিন্তায় মানুষ মদ্যপান শুরু করে যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই শরীর ও মন ভালো রাখতে যতোটুকু সম্ভব চিন্তা বা টেনশন করা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন।
আরও পড়ুন: দাঁত ব্যথা হওয়ার কারণ এবং নিরাময়ের উপায়।
৯। মিশুক হওয়ার চেষ্টা করুন: আপনার চারপাশের মানুষের সাথে মেশার চেষ্টা করুন। সবার সাথে কথা বলুন। কোনো কিছু শুরুর পূর্বে বিভিন্ন জনের কাছে পরামর্শ নিন। তাহলে আপনি যদি ঐ কাজে বিফলও হন তবুও আপনার মনে শান্তি থাকবে।
আপনি কারও দ্বারা আঘাত পাবেন না। আপনাকে কেউ দোষ দেবে না। আর একাকীত্ব মানুষের মনকে পঙ্গু বানিয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, একাকীত্ব মানুষের আয়ু পর্যন্ত কমিয়ে দেয়। সুতরাং পরিবেশ ও পরিবেশের মানুষের সাথে মিশুক হওয়ার চেষ্টা করুন।
১০। অপরের জন্য কিছু করুন: পৃথিবীটা শুধু নিজের বিচরণের জন্য নয়। চারপাশে কষ্টে থাকা অনেক মানুষ রয়েছে। প্রয়োজনে তাদের পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করুন। কিছুটা সহযোগিতা করার চেষ্টা করুন। আপনি নিজেও ভালো থাকবেন, আপনার পাশের মানুষটিও আনন্দিত হবে। ত্যাগেই প্রকৃত সুখ নিশ্চয়ই কথাটি শুনেছেন।
১১। পরিবারকে সময় দিন: আমরা আমাদের পরিবারকে সময় দিতে চাই না। কিন্তু হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও পরিবারের জন্য একটু সময় বের করা কিন্তু কঠিন কিছু নয়। পরিবারে সময় দিলে মন-মেজাজ ভালো থাকে। ভালোবাসা অটুট থাকে। আপনার স্বাস্থ্যের দিকে তাদের চোখ থাকে।
সুতরাং মন ও শরীর সুস্থ্য এবং ভালো রাখার তাগিদে সব কাজের মধ্যেও পরিবারে একটু সময় দেয়ার চেষ্টা করুন।
পরিশেষে বলবো, সুস্থ্য থাকার অনেকগুলো উপায় আছে। মানুষ হয়ে যখন আমরা জন্ম নেই তখন থেকেই আমাদের উপর বিভিন্ন দায়িত্ব অর্পিত হতে থাকে। সুস্থ্য অবস্থায় আমরা সবসময় সব দায়িত্ব পালন করতে চাই।
কিন্তু যদি মনের সাথে শরীরের সামঞ্জস্য না থাকে তবে কোনোমতেই আপনি সুস্থ্য থাকতে পারবেন না। নিজের মনের দিকে একটু নজর দিন। নিজেকে সময় দিন। নিজেকে নিয়ে ভাবুন। অন্যদের সাথে ভালো আচরণ করুন।
আর উপরে বর্ণিত পয়েন্টগুলো মাথায় রেখে চলার চেষ্টা করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি সুস্থ্য এবং ভালো থাকবেন।