সঠিকভাবে রোগ নিরূপণ না করে কখনও চিকিৎসায় অগ্রসর হওয়া উচিত নয়। কাজেই চিকিৎসকের জন্য জানা উচিত রোগীর দেহের কি কি জিনিস পরীক্ষা করতে হয়। রোগী পরীক্ষা পদ্ধতি সবক্ষেত্রেই খুব গুরুত্বপূর্ণ।
সাধারণত রোগী পরীক্ষা করার সময় রোগীর দেহের তাপ, নাড়ি, শ্বাস-প্রশ্বাস, জিহবা, টনসিল, চোখ, লিভার, প্লীহা ইত্যাদি দেখতে হয়। প্রস্রাব পায়খানায় রোগীর কোন কষ্ট আছে কিনা কিংবা রোগীর দেহে কি কষ্ট হচ্ছে ও কি কি লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে তা ভালোভাবে জানা ও দেখা উচিত।
প্রয়োজনবোধে চিকিৎসককে ল্যাবরেটরীতে রোগীর রক্ত, মূত্র, থুথু ইত্যাদি পরীক্ষা করতে হবে। কারণ, রোগীর বিভিন্ন তথ্য জানার জন্য এ তথ্যগুলোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গায়ের তাপ:
একজন নিরোগ লোকের শরীরের তাপ যা হয় জিহবার নিচে তার চেয়ে এক ডিগ্রী তাপ বেশি হয়। বৃদ্ধ ব্যক্তির সামান্য কম ও শিশুদের সামান্য বেশি হয়।
যদি ৯৯.৪ ডিগ্রীর চেয়ে শরীরের তাপ বেশি হয় তবে জ্বর হয়েছে বুঝতে হবে। কারও কারও শরীরের তাপ ৯৬ ডিগ্রী থাকলেও তা জ্বর বলে মনে করা হয় না। আবার তাপ খুব কম হলে রোগীর কোলাপ্স হবার সম্ভাবনা থাকে।
জিহবার বিশেষ পরীক্ষা:
জিহবা দেখে সকল রোগ নির্ণয় করা যায় না তবে কতকগুলো বিশেষ রোগ জিহবা পরীক্ষা করে বুঝতে পারা যায়। যেমন-
ক. অতিরিক্ত স্নায়ুবিক দূর্বলতায় কিংবা জ্বরে জিহবা শুকনা হয়।
খ. অতিরিক্ত ফ্যাকাসে জিহবায় রক্তহীনতা বুঝায়।
গ. অতিরিক্ত লাল জিহবায় পাকস্থলীর রোগ বুঝায়।
ঘ. জিহবা সাদা লেপাবৃত হলে কোষ্ঠবদ্ধতা বুঝায়।
ঙ. জিহবা সাদা লেপাবৃত হলে কোষ্ঠবদ্ধতা ও পিত্ত সংক্রান্ত রোগ বুঝায়।
চ. জিহবা সাদা লেপাবৃত হলে লিভারের কঠিন রোগ বুঝায়।
ছ. জিহবা লেপাবৃত তবে কিনারা লালচে হলে টাইফয়েড বা প্যারা টাইফয়েড বুঝায়।
জ. জিহবায় ছোট ছোট লাল দাগ থাকলে স্কারলেট জ্বর বুঝায়।
ঝ. জিহবা একদিকে পড়ে থাকা স্নায়ুবিক দূর্বলতা ও ব্রেনের দূর্বলতা বুঝায়।
ঞ. জিহবায় ঘা হলে ভিটামিনের অভাব বুঝায়।
ট. জিহবার ভিতরে শুকনো, সামনের দিক আর্দ্র হলে রোগ ভালোর দিকে বুঝায়।
যা হোক, জিহবা হলো একটি মাত্র লক্ষণ। কাজেই জিহবা ছাড়াও অন্যান্য লক্ষণ দেখে বিচার সাপেক্ষে সব সময় রোগ নিরূপণ করতে হবে।
মূত্র পরীক্ষা:
সাধারণত একজন সুস্থ্য ব্যক্তি দিবা-রাত্রিতে (২৪ ঘন্টায়) ৪/৫ বার প্রস্রাব করে থাকে, প্রস্রাবের রং সামান্য পীতাভ রং যুক্ত হয়।
ক. লিভারের রোগ বা জন্ডিস প্রভৃতি রোগে প্রস্রাব হলুদ রং হয়।
খ. কৃমি রোগে চুনের পানির ন্যায় সাদা রঙের প্রস্রাব হতে দেখা যায়।
গ. ডায়াবেটিস রোগে ঘন ঘন ও পানির মত প্রস্রাব হয়ে থাকে।
ঘ. জননযন্ত্রের রোগ বা প্রস্রাব যন্ত্রের রোগে বা জননযন্ত্রে ঘা প্রভৃতি রোগে প্রস্রাবের সাথে রক্ত পড়তে দেখা যায়।
ঘাম পরীক্ষা:
সাধারণত শরীর সুস্থ্য থাকলে গ্রীষ্মকালে ঘাম হয়, শীতকালে বিশেষ হয় না।
ক. যদি কোন লোকের অতিরিক্ত ঘাম হয় তবে বুঝতে হবে তার শরীর ও স্নায়ু দূর্বল আছে।
খ. প্রত্যহ জ্বরসহ রাত্রে অধিক ঘামা টিবি রোগের লক্ষণ।
গ. দূর্গন্ধযুক্ত ঘাম লিভার অসুস্থ্যতার লক্ষণ।
ঘ. আবার, অনেক সময় ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে ঘাম কোন রোগের লক্ষণ প্রকাশ করে না।
মল পরীক্ষা:
বাইরের মল দেখে বিভিন্ন প্রকার রোগ সম্পর্কে জানা যায়। মল দেখতে দেখতে অভ্যস্থ হলে সব রকম মলের বিষয়ই পরীক্ষা দ্বারা জানা যায়।
সাধারনত একজন সুস্থ্য ব্যক্তির মলের রং হলুদ। এটা কিছু শক্ত ও ভিজা ভিজা অবস্থায় কিছুটা নরম হয়। স্বাভাবিকভাবে প্রত্যহ ১ থেকে ২ বার মলত্যাগ হয়।
ক. কাদার ন্যায় মল আমাশয় রোগ বুঝায়।
খ. শ্লেষ্মাযুক্ত মল আমাশয় রোগ বুঝায়।
গ. রক্ত মিশ্রিত মল রক্ত আমাশয় রোগ বুঝায়।
ঘ. পাতলা মল উদরাময় (ডায়রিয়া) রোগ বুঝায়।
ঙ. চাল ধোয়া জলের ন্যায় মল কলেরা রোগ নির্দেশ করে।
চ. সবুজ রঙের মল পেটে অধিক অম্ল হয়েছে বুঝায়।
ছ. মল মেটে বা বেশি হলুদ হলে তাতে পিত্তরস বেশি আছে বুঝায়।
পরিশেষে বলা যায়, রোগী পরীক্ষা পদ্ধতিগুলো হিসেবে উপরের পদ্ধতিগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, জিহবা, মল, ঘাম, মূত্র ইত্যাদি পরীক্ষা করে খুব সহজেই একজন রোগীর রোগ সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। সত্যিকার অর্থে, এই বিষয়ে যারা অভিজ্ঞ চিকিৎসক তাদের খুব একটা কাঠ-খড় পোহাতে হয়না রোগীর রোগ নির্ণয় করার জন্য।
আরও পড়ুন: হেপাটাইটিস রোগ কি এবং কেন হয়? জেনে নিই বিস্তারিত।