রসুন:
মানবদেহের বিভিন্ন উপকারে রসুন একান্ত প্রয়োজনীয়। সাধারণত মসলা হিসেবে রসুন ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন প্রকার আচার ও মুখরোচক খাবার তৈরীতেও রসুনের ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ করা যায়।
ভেষজ চিকিৎসায় রসুনের ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ করা যায়। গ্রামে-গঞ্জে রসুনের ব্যাপক চাষ হয়। আজ আমরা রসুনের ভেষজ ব্যবহারগুলো সম্পর্কে জানবো।
রসুনে রয়েছে ভিটামিন A, B, C, ও D, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রণ, আয়োডিন এবং উগ্রশক্তির জীবাণুনাশক ৬টি শক্তি।
কয়েক বছর পূর্বে রসুনকে কেন্দ্র করে একটি সিমপোজিয়াম বা আলোচনা চক্রের আয়োজন করা হয়েছিল ক্যালিফোর্নিয়া শহরে। এই আলোচনা চক্রে বিশ্বের রসুন বিশেষজ্ঞ বৈজ্ঞানিকরা উপস্থিত ছিলেন।
এক এক দেশে তারা এক এক রোগের উপর বিশেষ পরীক্ষা-নীরিক্ষা চালাচ্ছেন। তাতে জানা যায়- বাহ্য প্রয়োগে সর্বপ্রকার ফোঁড়ায়, হাতে-পায়ে খিল ধরায়, বোলতা এবং বিছার কামড়ের ক্ষেত্রে, কোষ্ঠবদ্ধতায়, ইনফ্লুয়েঞ্জায়, সর্দি-কাশির প্রবণতায় খুব ভালো কাজ করছে।
আরও জানা যায়, হাঁপানিতে, গলা-বুক জ্বালায়, অগ্নিমান্দ্যে, অস্ত্রপ্রদাহে, পিত্তথলির পাথুরী রোগে, উচ্চ রক্তচাপে, অর্শ রোগে, যকৃত দোষে, ক্ষয়রোগে, কৃমিতে, হুপিংকাশিতে, গলগণ্ডে, বুক ধরফরানি ও বমিতে খুব কার্যকর ফলাফল দেয়।
রসুন খাওয়ার নিয়ম:
- ঘিয়ে বা তেলে ভেজে শাক কিংবা তরকারীর সাথে খাওয়া যায়।
- আটা বা ময়দার সাথে রসুন বেটে রুটি বা লুচি করে খাওয়া যায়।
- ছাতুর সাথে রসুনের বাটা খাওয়া যায়।
- গরম দুধের সাথে রসুন বাটা খাওয়া যায়।
- কাঁচা রসুন বা রসুন সিদ্ধ করে আহারের প্রথমে খেয়ে নেয়া যায়।
রসুনের গন্ধ দূর করার উপায়:
রসুনের খোসা ছাড়িয়ে টুকরো করে দই এর মধ্যে ডুবিয়ে রেখে পরের দিন খাবার পূর্বে পানিতে ধুয়ে নিলে গন্ধ লাগবে না। আর খাদ্যগুণও বজায় থাকবে।
বিভিন্ন রোগে রসুনের ব্যবহার:
বাতের বেদনায়:
প্রতিদিন ১ কোয়া রসুন গরম ভাতের সঙ্গে চিবিয়ে খেতে হবে। এছাড়া ৫০ গ্রাম সরিষার তেল ১০ কোয়া রসুন ভেজে সেই তেল দিনে ২ বার মালিশ করতে হবে আক্রান্ত জায়গায়।
অকাল বার্ধক্য রোধে:
প্রতিদিন ২ কোয়া করে রসুন ভেজে বা বেটে তরকারীর সাথে বা আটা, ময়দা কিংবা ছাতুর সাথে মিশিয়ে খেতে হবে।
যৌবন শক্তি ধরে রাখার ক্ষেত্রে:
প্রতিদিন ২ চামচ আমলকির রস এবং ২ কোয়া রসুন বাটা একত্রে মিশিয়ে খেতে হবে অন্তত দুই মাস। এই ব্যবস্থা স্ত্রী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
পেটের বায়ুতে:
১ কাপ ঠাণ্ডা পানিতে ৩/৪ ফোঁটা রসুনের রস মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খেতে হবে অন্তত সাত দিন। তাহলে পেটের বায়ু দূর হয়ে যাবে।
শরীর ক্ষয়ে:
এক কাপ দুধে ২ কোয়া রসুন সিদ্ধ করে সেই দুধ খেতে হবে প্রতিদিন। এতে শরীরের ক্ষয় বন্ধ হয়ে শক্তি ও ওজন দুই-ই বৃদ্ধি পায়।
শুক্রতারলে:
এক কাপ গরম দুধের সাথে দুই কোয়া রসুন বাটা নিয়মিত খেলে শুক্রতারল্য দূর হয়। অস্থির বল বাড়ে। অস্থির ক্ষয় বন্ধ হয়ে যায়।
পুরনো ঘা বা ক্ষতে:
পরপর কয়েকদিন দুই থেকে তিন কোয়া রসুন বেটে ক্ষতে লাগাতে হবে কয়েকদিন। তাহলে এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
অপরদিকে, গরু বা মহিষের ঘা/ক্ষত এর ক্ষেত্রে পাঁচ থেকে ছয় কোয়া রসুন বেটে লাগিয়ে দিতে হবে কয়েকদিন।
পায়ের তলায় গুপো বা কড়া হলে:
রসুনের একটি কোয়া আধ খানা করে কেটে কড়ার উপর লাগিয়ে লিউকোপ্লাস্ট দিয়ে আটকে দিতে হবে। এভাবে পরপর কয়েকদিন করলে কড়া সেরে যাবে।
পুরাতন জ্বরে জ্বর বাড়ছে কমছে কিন্তু সারছে না এমন ক্ষেত্রে:
চার থেকে পাঁচ ফোঁটা রসুনের রস ঘিয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। প্রতিদিন একবার করে অন্তত তিন দিন খেতে হবে। এতে জ্বর ভালো হয়ে যাবে।
মাথা ধরা:
বায়ু বা গ্যাসের জন্য মাথা ধরলে ১/২ ফোঁটা রসুনের রস নস্যির মতো করে নাকে টানলে মাথা ধরা সেরে যাবে।
মদ খাওয়ার জন্য পেট ব্যথায়:
মদ খাওয়ার জন্য পেট ব্যথা হলে এবং মদ খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতে না পারলে মদের সঙ্গে ২ কোয়া রসুন চিবিয়ে খেতে হবে। তবে মদ খাওয়া ভালো নয়। শরীরের অনেক ক্ষতি করে। এই অভ্যাস থাকলে আজই ত্যাগ করুন।
টি,বি রোগ প্রতিরোধে:
প্রতিদিন ১ কোয়া করে বেটে নিয়ে গরম দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে টি,বি রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
কুকুর/বিড়াল কামড়ালে:
প্রতিদিন ৫/৬ ফোঁটা রসুনের রস গরম দুধের সঙ্গে খেলে উপকার হয়। তবে অবশ্যই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
রুগ্ন শিশুর জন্য:
শরীরে কোনো রোগ নেই। অনেক ভালো ভালো খাবার খাচ্ছে। কিন্তু তবুও স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে না। এমন অবস্থায় আধ কোয়া রসুনের রস বেটে টাটকা ঘোলের সাথে খেতে হবে প্রতিদিন ১ বার করে।
এমফাইসিসো:
এক ধরণের হাঁপানি রোগ যাতে রোগীর নিঃশ্বাস ছাড়তে কষ্ট হয়। এমন ক্ষেত্রে ৪/৫ ফোঁটা রসুনের রস জ্বাল করা ঠাণ্ডা দুধের সাথে মিশিয়ে রোজ একবার করে খেলে উপকার হয়।
আর্টারিও স্ক্লেরোসিস:
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সুক্ষ্ম ধমনীর স্থিতিস্থাপকতা কমে যাওয়ার জন্য রক্তের চাপ বা প্রেসার বৃদ্ধি পায়। এই অবস্থায় রোজ ১ কোয়া করে রসুন যেকোন খাবারের সাথে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: তুলসী পাতার উপকারিতাগুলো জেনে নিন।
এই মসলাটি সাধারণত আমরা প্রতিদিনই খাই। তরকারিতে রসুন খেতেই হয়। তাই আলাদাভাবে খুব বেশি পরিমাণ খাওয়া উচিত নয়।
অতিরিক্ত রসুন খেলে কিছুটা ক্ষতিও হতে পারে। উপরে যেসব সমস্যার ক্ষেত্রে যতটুকু পরিমাণ রসুনের রস/কোয়া খাওয়ার কথা বলা হয়েছে তার বেশি খেতে যাবেন না।
আর উপরোক্ত সমস্যা বা রোগগুলোর মধ্যে কোনটা প্রকট আকার ধারণ করলে শুধু রসুনের উপর ভরসা করে থাকবেন না। অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন।
তথ্যসূত্র: ডা. এম এস সরকার (আদি ও আসল গাছ-গাছড়া ও লতা-পাতার হাজারগুণ রোগ-মুক্তি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নামক বই)।