রক্ত দান এক মহান দান। জীবন পাওয়ার এক উৎসব। রক্তদান উৎসব মাঝে-মধ্যেই পাড়ার ক্লাবে হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, অনেক সংস্থাও এই ধরনের সমাজসেবা মুলক কাজ কর্ম করে থাকেন।
এতে, যোগদানও করে বহু মানুষ। মানুষের মনে শুভ চেতনার আত্মপ্রকাশ যে ঘটছে, তারই প্রমাণ হল, মানুষ আজও জাত-পাতের বিচার না করে, সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে রক্তদানের উৎসবে সামিল হচ্ছে।
এখন জেনে নেওয়া দরকার, কারা রক্ত দিতে পারবেন:
শারীরিক এবং মানসিক ভাবে সুস্থ নিরোগ ব্যক্তি রক্ত দিতে পারবেন। রক্ত দাতার বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে।
শারীরিক ওজন ৪৫ কেজি বা এর বেশি হতে হবে। উচ্চতা অনযায়ী ওজন ঠিক আছে কিনা অর্থ্যাৎ বডি মাস ইনডেক্স ঠিক আছে কিনা দেখে নিতে হবে।
রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ, পালস এবং শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকতে হবে। শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ এ্যাজমা, হাপানি যাদের আছে তারা রক্ত দিতে পারবেন না।চর্মরোগ থেকে মুক্ত থাকতে হবে।
রক্তদানের আগে, রক্তদাতার যে সমস্ত টেস্ট করা প্রয়োজন:
এনিমিয়া বা রক্ত স্বল্পতা, জন্ডিস, পালস রেট, রক্ত চাপ, শরীরের তাপমাত্রা, ওজন, হিমোগ্লোবিন টেস্ট, ব্লাড সুগার বা চিনির মাত্রা পরিমাপ করা, ইসিজি।
পরীক্ষাগুলো খুব সাধারণ। তাই রক্ত দাতাদের আগে থেকে টেস্ট করে রাখা উচিৎ। বিপদের সময় যাতে বিলম্ব না হয়।
রক্তদানে বিশেষ সতর্কতা:
১. রক্তদানের ৪ ঘন্টা আগে ভালোভাবে খাদ্যগ্রহণ করতে হবে। খালি পেটে রক্ত দান করা ঠিক নয়।
২. অ্যাসপিরিন ও এ জাতীয় ওষুধ খাওয়া অবস্থায় রক্ত দেয়া যাবে না। রক্তদানের ৪৮ ঘন্টা আগে এমন ওষুধ বন্ধ করতে হবে।
৩. কোনরূপ এনার্জি ড্রিংকস রক্ত দানের ২৪ ঘন্টা আগে সেবন করা যাবে না।
৪. শরীরে কোন উল্কি বা ট্যাটু করানো হলে বা নাক কান ফুটো করানো হলে দুই থেকে চার সপ্তাহ পর রক্ত দিতে হবে।
৫. অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা অবস্থায় রক্ত দেওয়া উচিৎ নয়।
বিষয়গুলো জরুরী তাই রক্তদাতা কে অবশ্যই এগুলো মানতে হবে। একই সাথে রক্ত দেওয়ার সময় যে সুঁচ ব্যবহার করা হচ্ছে তা নিশ্চিত হয়ে নেবেন যে নিরাপদ কিনা।
আপনার একটু অসাবধানতায় রক্তে বাসা নিতে পারে কোন মরণব্যাধির। তাই রক্তদান করতেও রাখা উচিৎ অতিরিক্ত সতর্কতা।
যারা রক্ত দিতে পারবেন না:
ক্যান্সারের রোগী, হিমেফিলিয়াতে যারা ভুগছেন, যারা মাদক গ্রহণ করেছেন, গর্ভবতী মহিলা, অতিরিক্ত শ্বাস কষ্ট যাদের আছে, যাদের এইচআইভি পজেটিভ তথা এইডস আছে, যাদের ওজন গত দু’মাসে চার কেজি কমে গেছে এমন ব্যক্তিরা কাউকে রক্ত দিতে পারবেন না।
একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ চার মাসে অন্তত একবার রক্ত দিতে পারেন। রক্তদাতা একবার রক্ত দিলে তার শরীরের ১০ ভাগের মাত্র এক ভাগ রক্ত কমে।
কিন্তু এই পরিমাণ রক্ত অল্প সময়েই আগের মত হয়ে যায়। শরীরে সাধারণ পাঁচ থেকে ছয় লিটার রক্ত থাকে। রক্তদাতা সাধারণত এক দফায় ৪০০-৪৫০ মিলিলিটার রক্ত দিয়ে থাকেন।
এই পরিমাণ রক্ত দেওয়াতে দেহের উপর তেমন কোন প্রভাবই পড়ে না। তাই রক্ত দাতার অযথা ভয় ভীতির কোন কারণ নেই।
তবে রক্ত দানের আগে এবং পরে বিশেষ কিছু সতর্কতা পালন করলে দশেরও ভাল হবে, নিজেরও ভাল হবে। রক্তদানের পরে কয়েকদিন বিশ্রাম নেয়া উচিত এবং নিয়মিত ফলমূল ও কচি মুরগী খাওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: রূপ চর্চায় বেসন ও লেবুর ফেইসপ্যাক ব্যবহার করুন – প্রাকৃতিকভাবে হয়ে উঠুন সুন্দরী।