যৌন সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকেন। সেটা পুরুষের ক্ষেত্রেও হতে পারে আবার নারীর ক্ষেত্রেও হতে পারে। বিষয়টিকে এড়িয়ে যাবার কোনো মানে হয় না।
যৌন বিষয়ক সমস্যা মানুষ এত সহজে প্রকাশ করতে চায় না। যখন বিয়ে করে তখন আবার মহা বিপদে পড়ে এবং এক পর্যায়ে সবাই জেনে যায়।
যাই হোক, আজ আমরা যৌন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবো। যৌন বিষয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য উল্লেখ করা হলো। অনুগ্রহ করে সময় নিয়ে ধীরে-সুস্থ্যে পুরো পোস্ট পড়ুন।
যৌন সমস্যা নিয়ে আলোচনা দুভাবে হতে পারে। সেগুলো হলো-
১. শালীনতা বজায় রেখে মানে আরকি ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’ এরকমটা বজায় রেখে।
২. যৌন সমস্যাগুলো নিয়ে সহজ করে আলোচনা করা। এতে অবশ্য কেউ কেউ আলোচনায় যৌনতার আঁশটে গন্ধ পেতে পারেন। বিষয়টিকে সহজভাবে নিন, তাহলে অনেক সমস্যার বা প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’ মার্কা আলোচনার একটা বিপদ আছে। এমনটাই বিপদে নাকি পড়েছিল ভারতের সঞ্জয় গান্ধীর পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি।
উত্তরপ্রদেশের পরিবার পরিকল্পনা কর্মীরা গ্রামের মানুষদের কনডম ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালালেন এবং ফ্রি কনডম বিলি করলেন। বছর দেড়েক পরে কর্মীরা গ্রামগুলোতে সার্ভে করতে গিয়ে অবাক। জন্মহার একটুও কমেনি। আগে যেমন ছিল তেমনই।
আবার গ্রামে গ্রামে গিয়ে কর্মীরা জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কনডম ব্যবহার করোনি? গ্রামের লোকেরা সমস্বরে জানালেন, হ্যাঁ, যেভাবে বলেছিলেন সেভাবেই আঙুলে কনডম পরে করেছি।
এই হল অস্বচ্ছতা রেখে বোঝাবার বিপদ। আমরা সহজ করে স্বচ্ছতার সঙ্গে সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনায় যাবো। তাহলে সমস্যার অনেক সমাধানই পাবেন।
যৌন সমস্যাগুলোকে আমরা দু’ভাগে ভাগ করতে পারি। সেগুলো হলো-
১. যৌন অক্ষমতা (Sexual Dysfunction) &
২. বিকৃতকাম (Sexual Deviation )।
আমরা এখানে যৌন অক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করব। আশা করি, পুরো আলোচনাটি সবার কাজে লাগবে।
যৌন অক্ষমতা প্রধানত দু’রকম। সেগুলো হলো-
১. ছেলেদের ক্ষেত্রে ধ্বজভঙ্গ (লিঙ্গ শক্ত না হওয়া) বা (Impotence) এবং
২. দ্রুত বীর্য পতন এবং মেয়েদের বেলায় কামশীতলতা (Figidity)।
অন্যদিকে, ধ্বজভঙ্গ দুটি কারণে হতে পারে। সেগুলো হলো-
১. শারীরিক কারণে এবং
২. মানসিক কারণে।
শারীরিক কারণগুলো হতে পারে:
১. ডায়াবেটিস
২. থাইরয়েড সমস্যা
৩. কিডনির সমস্যা
৪. রক্তহীনতা
৫. হার্টের বা লিভারের সমস্যা
৬. হাই ব্লাডপ্রেশারের ওষুধ খাওয়া
৭. টেনশনের ওষুধ খাওয়া
৮. স্টেরয়েড গ্রহণের অভ্যাস
৯. বার্ধক্যের কারণে এবং
১০. নানা ধরনের হরমোনের সমস্যার কারণে।
এইসব শারীরিক কারণে ও উল্লিখিত ওষুধ গ্রহণের কারণে ধ্বজভঙ্গের সম্ভাবনা থাকে শতকরা প্রায় ১০ ভাগ রোগীর। চিন্তা করে দেখলে বিষয়টি সত্যিই অনেক জটিল বিষয়।
আর মানসিক কারণে ধ্বজভঙ্গ হয় শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ রোগীর। এটা বাইরের কেউ এত সহজে বুঝতে পারে না।
১. কিছু কিছু ধর্মগুরুদের ও হাতুরেদের ইউটিউব ভিডিওতে ও লেখাপত্তরে আছে – চল্লিশ দিনে এক ফোঁটা বীর্য তৈরি হয়। হস্তমৈথুন ধ্বজভঙ্গ ঘটায় ইত্যাদি।
কিন্তু এমন ভুল ও মিথ্যে কথায় বিশ্বাস করার কারণে কোনো বিবাহিত যদি বীর্যস্খলনের ভয়ে ভীত হয়ে পড়ে, তবে তার ধ্বজভঙ্গ হতে পারে। সুতরাং সাবধান হোন।
২. স্ত্রীর তুলনায় নিজেকে খুব ছোট এবং হীন মনে করলে স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার সময় লিঙ্গ উত্থিত নাও হতে পারে অথবা দ্রুত পতন হতে পারে।
৩. মিলন স্থায়িত্ব যেখানে ১০-১৫ মিনিট হওয়াটা স্বাভাবিক সেখানে ২-৩ মিনিটে স্খলনকে দ্রুত পতন বলা হয়।
৪. পায়ুমৈথুন প্রিয় পুরুষ বা সমকামী স্ত্রীযোনির প্রতি আকর্ষণ অনুভব না করতে পারার কারণে ধ্বজভঙ্গের শিকার হতে পারে। ভিনদেশে এমনটা অহরহ হচ্ছে।
৫. পশুদের সঙ্গে সঙ্গম – প্রিয় মানুষ নারীর প্রতি আকর্ষণ অনুভব না করতেই পারে।
৬. বয়স ৫০ বছর পার হলে ধ্বজভঙ্গের সম্ভাবনা থাকে। কারণ, শরীরের সব অঙ্গই ধীরে ধীরে ড্যামেজ হতে থাকে। ৬০ বছর বয়সের পর থেকে এই সম্ভাবনা বাড়ে।
নারীর কামশীলতার কারণগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো:
১. পুরুষ সঙ্গীকে কুৎসিৎ দর্শন মনে করলে
২. মনের মিল এবং রুচির মিল একটুও না থাকলে
৩. মিলনকালে যন্ত্রণার পূর্ব অভিজ্ঞতা
৪. গর্ভবতী হওয়ার ভয়
৫. থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা
৬. যোনির প্রদাহ
৭. কিডনি, হার্ট এবং লিভারের সমস্যা থাকলে
৮. উচ্চ রক্তচাপ থাকলে
৯. বিষন্নতার ওষুধ বেশি পরিমাণে খেয়ে ফেললে
১০. কোন ধরণের ড্রাগের নেশা থাকলে
১১. পুরুষসঙ্গী যদি সঙ্গমের ১/২ মিনিটের মধ্যেই বীর্যপাত করে ফেলে প্রতিবারই, তবে নারী সঙ্গম সুখ লাভ থেকে বঞ্চিত হতে হতে কামশীতল হয়ে পড়ে।
১২. নারী সক্রিয় সঙ্গমে ইচ্ছুক কিন্তু পুরুষসঙ্গী একতরফাভাবে নিজের কাজটি করেই নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলে নারী কামশীতল হতে পারে।
১৩. আদর – শৃঙ্গারের আগেই পুরুষ এক তরফা সঙ্গম করতে থাকলে নারী আবেগহীন, কামশীতল হয়ে পড়ে।
১৪. নানা ধরনের হরমোনের সমস্যার কারণে।
যৌন সমস্যার বহু কারণে রয়েছে। তন্মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ এখানে তুলে ধরা হয়েছে। আশা করছি, বুঝতে পেরেছেন।
আর আপনার যদি কোন ধরণের যৌন সমস্যা থাকে তবে দেরি না করে নিকটস্থ অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
আরও পড়ুন: যৌনশক্তি ফিরিয়ে আনতে হলে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাই যথেষ্ট।