যৌন রোগ এমন সব রোগ যা মূলত কেউ-ই প্রকাশ করতে চান না। এই রোগগুলোকে গোপন রোগ বলে অভিহিত করাটাই বোধ হয় ভালো। তাই যৌন মিলন এর প্রতি নজরদারি রাখা উচিত। অর্থাৎ আপনার পার্টনারের যদি যৌন রোগ থাকে তাহলে নিরাপদ যৌন মিলন করুন।
যৌন রোগের লক্ষণগুলো আসলে আমাদের মধ্যে অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতার তৈরী করে। কিন্তু যৌন রোগের মধ্যে এমন কিছু রোগ রয়েছে যা বন্ধ্যাত্ব তৈরী করতে সক্ষম। অনেক সময় হয়ে যেতে পারে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতি কিংবা মৃত্যু।
আসুন এখন জেনে নিই কোন যৌন রোগগুলো সবচেয়ে বেশি হয়। বাংলাদেশী একটি হাসপাতালের একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বলেছেন যে, “যৌন সঙ্গী যদি আক্রান্ত থাকেন তাহলে তার যৌনাঙ্গের তরল পদার্থ এবং মুখের লালায় উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করতে পারে।”
তিনি আরও বলেছেন, “বাংলাদেশে একসময় পাওয়া যেত সবচেয়ে বেশি গনোরিয়া রোগ এবং সিফিলিস রোগ। তবে বর্তমানে ভাইরাসজনিত রোগই বেশি পাওয়া যাচ্ছে।”
এছাড়াও অন্যান্য যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ বলেছেন যে, ইদানীং আমরা হারপিস অনেক পাচ্ছি। এটা একবার শরীরে প্রবেশ করলে সহজে দূর করা যায় না। শরীরে ঘাপটি মেরে বসে থাকে।
কিন্তু যৌন মিলনের সময় সঙ্গীর শরীরে প্রবেশ করে। কোন কোন সময় সহজে লক্ষণ প্রকাশ পায় না। লক্ষণ প্রকাশ পেতে দীর্ঘদিন সময় লাগে। চিকিৎসা করে এটা থামিয়ে রাখা যায়। কিন্তু অবশ্যই নিয়মিত ঔষধের উপর থাকতে হয়। কিন্তু শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই ধ্রুব সত্য যে, এই রোগ কখনো পুরোপুুরি সেরে যায় না।
আমাদের দেশে সাধারনত ৭টি যৌন রোগ সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। সেগুলো হলো: গনোরিয়া, সিফিলিস, জেনিটাল হারপিস, ক্লামাইডিয়া, যৌনাঙ্গে আঁচিল, ট্রাইকোমোনিয়াসিস এবং হেপাটাইসিস বি।
যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণা সংস্থা বলছে, গর্ভাবস্থায় কোন নারীর সিফিলিস থাকলে রোগটি সন্তানের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত অন্য কেউ নিলেও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
অন্যদিকে, ট্রাইকোমোনিয়াসিস রোগটি প্রায়শই পুরুষের হয় কিন্তু কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। কিন্তু আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে তা সহজেই সঙ্গীর শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
অনেকেই বলেন যে, যৌন রোগ রয়েছে এমন ব্যক্তির কাপ, গ্লাস, প্লেট, চামচ এবং রেজার ব্যবহার করলে তা ছড়াতে পারে বা নিজের হতে পারে। এমনকি টয়লেট সিট থেকেও নাকি ছড়াতে পারে। কিন্তু এমনটা আসলে সঠিক নয়। এভাবে যৌন রোগ ছড়ায় না।
ওরাল সেক্সের কথা কমবেশি সবাই জানি এবং বুঝি। এই মাধ্যমে যৌন রোগ ১০০% ছড়াতে পারে। সমকামী নারী পুরুষের যৌন রোগ হতে পারে।
জেনে রোখা ভালো, মাত্র দুই ধরণের যৌন রোগের কার্যকরী ভ্যাক্সিন রয়েছে। সেগুলো হলো- হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস ও হেপাটাইটিস।
যেসব লক্ষণ দেখে বুঝবেন আপনার যৌন রোগ হয়েছে এবার তা নিয়ে আলোচনা করবো। ঢাকার হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগের অধ্যাপক কিশওয়ারা সুলতানা বলেছেন, “প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, তলপেটে ব্যথা হলে কেউ খুব একটা গুরুত্ব দেয় না।
মনে করে হয়তো ইউরিনারী ট্রাক্ট ইনফেকশন হয়েছে। পানি বেশি খেলে ঠিক হয়ে যাবে। বিশেষ করে নারীরা মনে করে যে, এটা হয়তো মাসিকের সাথে সম্পর্কিত। কিন্তু এই বিষয়গুলোও যৌন রোগের সাথে সম্পর্কিত।”
তিনি আরও বলেছেন যে, যৌনাঙ্গ থেকে রক্ত বের হওয়া, কোন ধরণের অস্বাভাবিক ক্ষরণ, যৌনাঙ্গ এবং তার আশপাশে গোটা, ফুসকুঁড়ি, র্যাশ, আঁচিল, চুলকানি, ঘা, জ্বালাপোড়া অনুভূতি, দুর্গন্ধ, যৌন মিলনের সময় ব্যথা ও রক্তক্ষরণ – এগুলোই হলো যৌন রোগের মূল লক্ষণ।
এসব লক্ষণের সাথে থাকতে পারে জ্বর। সব ধরণের যৌন রোগে একই লক্ষণ থাকতে নাও পারে। তবে মোটা দাগে এসব লক্ষণ থাকলে অবশ্যই একজন বিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ও চিকিৎসা নেয়া জরুরী।
“অনেকেই ভাবেন হেপাটাইটিস বি একটা লিভারের অসুখ। এটি যে যৌনরোগও বটে তার ধারনাই নেই বেশিরভাগ মানুষের। এটি একধরনের ভাইরাসজনিত যৌনরোগ। এটা হলে যৌনাঙ্গে কিছু প্রকাশ পায় না। এর লক্ষণগুলো অন্য যৌনরোগের চেয়ে আলাদা। যেমন বমি ভাব ও পেট খারাপ হবে, খাবার রুচি চলে যাবে, ক্লান্ত লাগবে, পেশাব ও ত্বকের রঙে পরিবর্তন হবে”, বলছিলেন অধ্যাপক সুলতানা।
যৌন রোগ শুধু অস্বস্তিকর বিষয় তা নয়। এটি আরো অনেক ধরনের অসুখের কারণ হতে পারে। এনএইচএস বলছে, যৌনাঙ্গে আঁচিলের উপস্থিতি নারীদের সার্ভিকাল ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে। ক্লামাইডিয়া ও গনোরিয়া থেকে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।
সিফিলিস মারাত্মক গুরুতর পর্যায়ে গেলে একজন ব্যক্তি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হতে পারেন। যকৃতের কার্যক্ষমতা, দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হতে পারে। এমনকি মস্তিষ্কেও ছড়িয়ে পড়তে পারে যাতে মানসিক বিকার তৈরি হতে পারে।
এনএইচএস বলছে, একের অধিক সঙ্গীর সাথে যৌন সংসর্গে অভ্যস্ত নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে এর ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।
সাবধান হওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্রতিবার কনডম ব্যবহার করা। একাধিক যৌন সঙ্গী নয় নির্দিষ্ট একজনের সাথে যৌনমিলনে আবদ্ধ হওয়া।
কিছুদিন পরপর নিজের এবং সঙ্গীর পরীক্ষা করিয়ে নেয়া।
কোন লক্ষণ থাকলে সঙ্গীর কাছ থেকে বিষয়টি না লুকিয়ে তা প্রকাশ করার পরামর্শ দিচ্ছেন ডা. কামরুল আহসান।
“কোন লক্ষণ প্রকাশ পেলে শুধু নিজে গেলাম ডাক্তারের কাছে কিন্তু সঙ্গীকে না জানালে নিজের সেরে গেল কিন্তু সঙ্গী আক্রান্ত থেকে গেল। অতএব দুজনেই একসাথে চিকিৎসকের কাছে আসবেন। আমরা লক্ষণ শুনে, চোখে দেখে এবং রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হবার পর চিকিৎসা দেব।”, বলছিলেন তিনি।
পরিশেষে বলা যায়, যৌন রোগ হলে তা গোপন রাখা যাবে না। রোগ লক্ষণ প্রকাশ পেলে কিংবা নিজে বুঝতে পারলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।
রোগ পুষে রাখার জন্য নয়। আপনার সামান্য লজ্জা এবং গোপন রাখার ইচ্ছা আপনার জীবনের জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই রোগ নিয়ে কোন লজ্জা নয় বরং আজ থেকেই সাবধান হোন।
আরও পড়ুন: যৌন রোগ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার কয়েকটি জটিল টিপস।