বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অর্থাৎ ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজ়েশনের মতে, সারা পৃথিবী জুড়ে দশ লক্ষেরও বেশি মানুষ যৌন রোগ বা সংক্রমণে আক্রান্ত হন প্রতিদিন।
এসটিডি বা সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ বা যৌনরোগ মানে শুধু এইচআইভি বা এইডস নয়। এই তালিকায় রয়েছে গনোরিয়া, ক্ল্যামাইডিয়া, সিফিলিসের মতো আরও অনেক রোগ যা অসুরক্ষিত যৌন সংসর্গ থেকে ছড়ায়।
যথাসময়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না হলে এ সব সংক্রমণ শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে দিতে পারে। অথচ এইডস বা এইচআইভি সম্পর্কে যতটুকু সচেতনতা গড়ে উঠেছে, সে তুলনায় প্রায় কিছু আলোচনাই হয়নি বাকি যৌন রোগগুলো নিয়ে।
আজ তেমন বিষয় নিয়েই আলোচনা করা হবে অর্থাৎ কিভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন বিভিন্ন যৌন রোগ থেকে। তো আর কথা নয় – সরাসরি যাচ্ছি মূল আলোচনায়।
১. সুরক্ষিত রাখুন যৌন সম্পর্ক:
যে কোনও ধরনের এসটিডি এড়াতে হলে অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্কে কখনও জড়াবেন না। ওরাল, ভ্যাজাইনাল বা অ্যানাল, যেকোন ভাবেই যৌন রোগ ছড়াতে পারে।
শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের সময় কনডম ব্যবহার করুন। কনডম থাকলে যৌনরোগ সংক্রমণের আশঙ্কা 97% কমে যায়। অন্যান্য নিরাপত্তার দিক থেকেও কনডম সেরা।
২. নিজের ও পার্টনারের রক্ত পরীক্ষা করান:
অনেক সময় যৌন রোগ হলেও তার কোনও লক্ষণ শরীরে ধরা পড়ে না। অজান্তেই যৌন রোগ শরীরে বাসা বাঁধছে কিনা জানার জন্য নিয়মিত নিজের ও পার্টনারের চেকআপ করান।
প্রাথমিক অবস্থায় সংক্রমণ ধরা পড়লে তা অ্যান্টিবায়োটিকেই সেরে যায়। অতিরিক্ত ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ, যৌনাঙ্গে আলসার, বাথরুমে যাওয়ার সময় বা ইন্টারকোর্সের সময় ব্যথা, এ সবই যৌনরোগের সাধারণ লক্ষণ।
৩. কিছু সংক্রমণ বা রোগ প্রাণঘাতীও হতে পারে:
কিছু যৌন রোগ চিকিৎসায় কমে গেলেও এমন অনেক রোগ আছে যা ধরা না পড়লে বা চিকিৎসা না হলে শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে জখম করে দিতে পারে, এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
যেমন ক্ল্যামাইডিয়ার চিকিৎসা না হলে তা থেকে প্রচণ্ড পেটে ব্যথা হতে পারে এবং মেয়েদের বন্ধ্যাত্বও দেখা দিতে পারে।
মনে রাখবেন, যৌন সংক্রমণ হয়েছে কিনা জানতে যদি আপনি শারীরিক পরীক্ষা করান, তাতে লজ্জার কিছু নেই। আপনার স্বাস্থ্যের দায়িত্ব আপনারই এবং সুরক্ষিত থাকার জন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাতে দ্বিধা করবেন না।
৪. কী কী সংক্রমণের পরীক্ষা করানো উচিত:
কোনও নতুন সম্পর্কে জড়ানোর আগে দুজনে মিলে বেশ কিছু সাধারণ পরীক্ষা করিয়ে নিন। এর মধ্যে পড়ে ক্ল্যামাইডিয়া, গনোরিয়া, এইচআইভি, সিফিলিস, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, হেপাটাইটিস এ, হারপিস টাইপ ১, হারপিস টাইপ ২, এইচআইভি টাইপ ১ এবং টাইপ ২।
চিকিৎসকের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলুন। আপনি যদি বিশেষ কোনও রোগের জন্য টেস্ট করাতে চান, সেটাও বলুন। কীভাবে ভবিষ্যতে সংক্রমণ এড়ানো যায়, তা চিকিৎসক আপনাকে বলে দেবেন।
পরিশেষে বলা যায়, কোনো রোগকেই ছোট করে দেখা উচিত নয় হোক সেটা যৌন রোগ বা অন্য কোন রোগ। আর বেশিরভাগ মানুষই যৌন রোগের ব্যাপারে অসচেতন।
কারণ, এটাকে তারা গোপণ বিষয় মনে করে। সহজে প্রকাশ করতে চায় না। অথচ এই যৌন সমস্যার কারণে হাজার হাজার সংসার ভেঙে যাচ্ছে।
সুতরাং যদিও লজ্জার বিষয়, কিন্তু তবুও শরীরে কোনো যৌন সমস্যা পরিলক্ষিত হলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আরও পড়ুন: যৌন টিপস – আপনার মনের মধ্যে থাকা যৌনতা বিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্নোত্তর জানুন।