মানুষের নানা ধরণের যৌন রোগ হয়ে থাকে। তন্মধ্যে যৌনাঙ্গে চুলকানি হওয়া একটি রোগ। অনেকেই এটিকে যৌন উত্তেজনার পূর্ব লক্ষণ মনে করে। কিন্তু কথাটি সঠিক নয়। আজ আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলবো। তো আর কথা নয় – মূল আলোচনায় যাচ্ছি।
যৌনাঙ্গে চুলকানি হওয়া সেক্স করতে চাওয়ার পূর্ব লক্ষণ না, এটি একটি অসুখ। অনেকের মাঝেই এই ভ্রান্ত ধারণাটি আছে যে, যৌনাঙ্গে চুলকানি (বিশেষ করে মেয়েদের) হওয়া মানে সেক্স করতে চাওয়া।
কিন্তু এটি কখনই সত্য না। শারীরিক মিলনে আগ্রহী হওয়ার অন্য ধরনের লক্ষণ দেখা যায় যেমন- যৌনাঙ্গ গরম হয়ে যাওয়া ও ফুলে যাওয়া, শারীরিকভাবে উত্তেজনা অনুভব করা, যৌনাঙ্গে চুলকানি হওয়া নয়।
আসুন জেনে নেই যৌনাঙ্গে চুলকানি হওয়ার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে। প্রথমেই কারণগুলো সম্পর্কে জানবো।
১. ইস্ট বা ছত্রাকের আক্রমণ:
এটি যৌনাঙ্গের চুলকানি বা ইচিং হওয়ার অন্যতম কারণ। সাধারণত Candida Albicans, এই ছত্রাকের কারণে যোনিতে চুলকানি হয়। এই ছত্রাক নরমালি মেয়েদের যৌনাঙ্গে পরজীবী হিসেবে থাকে।
কিছু ল্যাকলোব্যাসিলাস নামে উপকারী ব্যাকটেরিয়া এই ছত্রাকের বংশবিস্তারকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক খেলে, গর্ভাবস্থায়, দুশ্চিন্তাগ্রস্থ থাকলে, হরমোনাল ইমব্যালেন্স থাকলে ও খাদ্যাভাসের কারণে এই উপকারী ব্যাকটেরিয়া মরে যায়।
এর ফলে ঈস্টগুলো তাদের জন্মের জন্য অনুকূল পরিবেশ পায়। এর কারণে যোনিতে ইনফেকশন হয়।
উপসর্গ: যোনি পথ দিয়ে ঘন, সাদা তরলের নির্গমন হয়। চুলকানি, ব্যথা ও প্রদাহ হয়। যৌন মিলনের সময় ব্যথ্যা হয়।
২. ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিসের সংক্রমণ:
এটি ভ্যাজাইনা বা যোনিতে চুলকানি হওয়ার অন্যতম কারণ। যোনিতে নরমালি কিছু ব্যাকটেরিয়া থাকে। যখন কোন কারণে এই ব্যাকটেরিয়া গুলোর অনেক বেশি বংশবিস্তার ঘটে তখন যোনিতে ইনফেকশন হয়।
উপসর্গ: গন্ধযুক্ত ও মাছের আশঁটে গন্ধযুক্ত তরল নির্গত হয় যোনি দিয়ে। চুলকানি হয় প্রচুর। প্রসাবের সময় জ্বালাপোড়া হয়।
৩. ট্রাইকোমোনিয়াসিস এর আক্রমণ:
এটি একটি প্যারাসাইট। এটির আক্রমণে যোনিতে চুলকানি হয়।
উপসর্গ: হলুদ, সবুজ রঙের ও খুব তীব্র বাজে দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব হয়। তলপেটে ব্যথ্যা হয়। যোনিতে চুলকানি হয়।
৪. এছাড়াও যৌনাঙ্গে উকুন, খোসপাচড়া ও মাইকোপ্লাজমা জেনেটালিয়াম এর সংক্রমণ হলে যোনিতে চুলকানি হয়।
৫. কিছু সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ যেমন – সিফিলিস, গনোরিয়া, এইডস ইত্যাদির কারণে যৌনাঙ্গে ইচিং বা চুলকানি হতে পারে।
৬. বিভিন্ন বিরক্তিকর পদার্থ যেমন – বিভিন্ন ডিটারজেন্ট, কেমিক্যাল, সুগন্ধিযুক্ত সাবান, রঙ ওয়ালা টিশ্যু পেপার, ফেমিনিন হাইজেনিক স্প্রে, ডুশ ব্যবহার করলে যোনিতে চুলকানি হতে পারে।
৭. মেনোপোজের পর মহিলাদের ইস্ট্রোজেন নামক হরমোন কমে যায়। ফলে যোনি শুকিয়ে যায়। এর ফলে বিভিন্ন পরজীবীর সংক্রমণ হয়। ফলে যোনিতে ইচিং হয় ।
৮. ডায়াবেটিস, রেনাল ডিজিজ, একজিমা ও রক্তে কোন রোগ থাকলে ও অন্যান্য কোন রোগ থাকলেও যৌনাঙ্গে চুলকানি হয়।
৯. মাসিকের সময়, অস্বাস্থ্যকর প্যাড ও কাপড় ব্যবহার করলে। যৌনকর্মীদের এই রোগগুলো বেশি হয়। তাই অবাধ যৌন আচরণের কারণে হয়ে থাকে।
১০. যৌনাঙ্গ সবসময় গরম ও আর্দ্র রাখলে। অপরিষ্কার থাকলে।
চিকিৎসা ও প্রতিকার:
এ সমস্যার জন্য হোমিওপ্যাথি একমাত্র চিকিৎসা, দ্রুত কোনো ভালো হোমিওপ্যাথি ডাক্তারের পরার্মশ নিন। রঙিন ও বেশি সুগন্ধিযুক্ত টয়লেট টিস্যু ও সাবান যৌনাঙ্গে ব্যবহার করবেন না।
ফেমিনিন হাইজিন স্প্রে ও ডুশ ব্যবহার করবেন না। ভেজা কাপড় পরে বেশিক্ষণ থাকবেন না। গোসল বা ব্যায়ামের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভেজা কাপড়টি পাল্টে নিবেন।
যারা সুইমিং পুলে সাঁতার কাটেন তাদের ক্লোরিনের কারণেও ইচিং হতে পারে , তাই সাবধান হন। আপনার যৌনাঙ্গ পরিষ্কার রাখুন সবসময়।
আর প্রসাব বা পায়খানা করার সময় হাত দিয়ে সামনে থেকে পেছনে এই নিয়মে পরিষ্কার করতে হবে। খেয়াল রাখবেন পায়খানার রাস্তার জীবাণু যেন যোনিতে না লাগে।
দই খান, এতে ল্যাকটোব্যাসিলাস নামক উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে। সুতির কাপড় দিয়ে তৈরি অন্তর্বাস বা পেন্টি পরুন। সিনথেটিক পেন্টি পরবেন না।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ওজন কমান। সহবাসের সময় কনডম ব্যবহার করুন। যোনি আর্দ্র ও ভেজা রাখবেন না। মাসিকের সময় নোংরা কাপড় ব্যবহার করবেন না।
পরিষ্কার প্যাড ব্যবহার করুন। সহবাসের পর যৌনাঙ্গ ভাল ভাবে পরিষ্কার করুন। ধুয়ে ফেলুন। সহবাসের পর প্রসাব করুন। নিয়মিত গোসল করুন। তাহলে দ্রুতই এমন সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
আরও পড়ুন: ভ্যাজাইনাল ইচিং হওয়ার কারণ ও চিকিৎসা জেনে নিন।