যৌন রোগ এর কারণ ও লক্ষণ:
যৌন রোগ এমন সব রোগসমষ্টি যা নারী, পুরুষ উভয়েরই হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারী-পুরুষ এই রোগগুলো গোপন রাখতে পছন্দ করে। ফলশ্রুতিতে তাদের রোগ আরও ভয়াবহ পর্যায়ে চলে যায়।
মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গেই আলাদা আলাদাভাবে রোগ হয়ে থাকে। ঠিক তেমনি যৌন রোগ সাধারণত যৌনাঙ্গে হয়ে থাকে। যৌন রোগের কারণে অনেক সময় মানুষের মৃত্যুও হয় যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা হয়।
যৌন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে কেউ গেলে অর্থাৎ তার সাথে মেলামেশা করলেও যৌন রোগ হতে পারে। নারী-পুরুষ উভয়েই সমানভাবে এসব রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। আজ আমরা তেমনি কিছু যৌন রোগের নাম ও লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করবো।
ক্ল্যামিডিয়া রোগ: পুরুষের পুরুষাঙ্গ (লিঙ্গ) এবং নারীর যোনি থেকে অস্বাভাবিক ক্ষরণই হলো এই রোগটির লক্ষণ। গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ এবং নারীর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ এই রোগে আক্রান্ত হয়।
রোগ লক্ষণ দেখা দেয়া মাত্র যদি চিকিৎসা করা হয় তবে ভালো হয়ে উঠা সম্ভব। যদি কারও শরীরে এই ক্ল্যামিডিয়া রোগটি হয় তবে অন্যান্য যৌনরোগও হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
গনোরিয়া রোগ: আপনি জানলে অবাক হবেন যে, ক্ল্যামাইডিয়া রোগটির সাথেই গনোরিয়া রোগটি হয়ে থাকে। গনোরিয়া হলেও অস্বাভাবিক ক্ষরণ হয় যোনি কিংবা পুরুষাঙ্গ থেকে। মূত্রত্যাগ করার সময় অনেক যন্ত্রণা হয়।
সময় মতো চিকিৎসা না করলে যৌন শক্তি হ্রাস সহ সারা শরীরে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। তাই এসব লক্ষণ দেখা দেয়া মাত্র সাবধান হোন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
হার্পিস রোগ: এই রোগটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। হার্পিস নামক ভাইরাস এর কারণেই এই রোগটি হয়ে থাকে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই বুঝতে পারেন না যে, তিনি এই রোগে আক্রান্ত।
আবার, হার্পিস ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি যখন তার সঙ্গিনীর সাথে মেলামেশা করছে তখন তার সঙ্গিনীর শরীরেও তা ছড়িয়ে পড়ছে।
এই রোগের মূল লক্ষণ হলো- যৌনাঙ্গে ছোট ছোট ফুস্কুরির মতো দেখা দেয়। র্যাশ হয়। চুলকানি হয় এবং চুলকানির পর ফোস্কা পড়ে। দিন বা রাতের একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর এই র্যাশগুলো দেখা দেয়।
সিফিলিস রোগ: যত যৌন রোগ রয়েছে তন্মধ্যে এটি ভয়াবহতার দিক থেকে কোনো অংশেই কম নয়। এই রোগটি অতি প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের মধ্যে দেখা যায়।
রোগ লক্ষণ দেখা দেয়া মাত্র যদি চিকিৎসা করানো যায় তবে তা সহজেই সারে। কিন্তু দেরি হয়ে গেলেই ভয়াবহতা শুরু হয়। সাধারণত রোগ বেড়ে গেলে যৌনাঙ্গ, পায়ু পথে এবং মুখে আলসার হয়। চোখ এবং মস্তিষ্কও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বিশেষভাবে মনে রাখবেন, সিফিলিস রোগ প্রাথমিক অবস্থায় প্রায় সুপ্ত অবস্থায় থাকে। তাই একটু সাবধান থাকা উচিত।
আচিল বা ওয়ার্ট রোগ: অনেকেরেই যৌনাঙ্গের আশপাশে আঁচিলের মতো র্যাশ দেখা যায়। তারা এটিকে রোগ হিসেবে ধরে নেয় না। কিন্তু এটিও আসলে এক প্রকার যৌন রোগ।
এই রোগের বাহক হলো হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস যা শুধু আচিল বা ওয়ার্ট এর জন্যই দায়ী নয় বরং সার্ভিক্যাল ক্যান্সারের মতো রোগেরও কারণ এটি। এক শরীর থেকে আরেক শরীরে যৌন মেলামেশার কারণে এটি ছড়াতে পারে।
আঁচিলগুলো ফোস্কার মতো হতে পারে এবং দীর্ঘদিন পর এগুলো আলসারে পরিণত হতে পারে। তাই যৌনাঙ্গে আঁচিল বা ওয়ার্ট হলে দ্রুত চিকিৎসা নিন।
হেপাটাইটিস বি: যৌন রোগের কারণে এই রোগটি ছড়ায়। হেপাটাইটিস এর অন্যান্য টাইপগুলোও বিশেষ করে এ এবং সি ছড়াতে পারে তবে সংখ্যায় খুব কম।
লক্ষণ হিসেবে সাধারণত দেখা যায়- লিভারের জটিলতা, প্রস্রাবের রং পরিবর্তন হয়ে যাওয়া, গা বমি ভাব সহ ইত্যাদি।
যৌনাঙ্গের কেশে উকুন: নারী এবং পুরুষ উভয়েরই যৌন কেশ থাকে অর্থাৎ নিম্নাঙ্গের চুলের কথা বলা হচ্ছে। সেখানে অপরিষ্কার থাকলে তাহলে উকুন বাসা বাঁধতে পারে। শারিরীক মিলনের সময় তা সংক্রমিত করতে পারে আপনার পাশের জনকে।
সেখানে উকুন হলে চুলকানি হতে পারে। একজিমা হয়েছে এরকম মনে হতে পারে। তাই নিম্নাঙ্গ নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করবেন।
ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস রোগ: কিছু ব্যাকটেরিয়ার কারণে যৌনাঙ্গে এই রোগ হয়ে থাকে। এটি তেমন কোনো ভয়াবহ রোগ নয়। খুব সহজেই সেরেও যায়।
এই রোগ হলে যৌন মিলনের সময় বীর্য স্খলনের সময় (নারী কিংবা পুরুষ) দুর্গন্ধ হয়। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কয়েকদিন ওষুধ খেলেই রোগ সেরে যায়। ওষুধ খাওয়ার সময় যৌন মিলন করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
এইচআইভি রোগ: এই রোগটির নাম শুনেনি এমন লোক হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। পশ্চিমা দেশগুলোতে এই রোগের বিস্তার খুব বেশি হলেও বর্তমানে এশিয়া অঞ্চলের দিকেও তা ছড়াচ্ছে।
এই রোগ হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে বিভিন্ন রোগ শরীরে খুব সহজেই বাসা বাঁধে। সাধারণত যৌন মিলন, একই সিরিঞ্জ ব্যবহার, রক্তের আদান-প্রদান ইত্যাদি কারণে এই রোগ ছড়াতে পারে।
তাই অন্যের ব্যবহৃত জিনিষ নিজে ব্যবহারের পূর্বে গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিন কিংবা পরিহার করুন। আর আপনার সঙ্গি বা সঙ্গিনীর এই জাতীয় সমস্যা থাকলে যথারীতি প্রোটেকশন (কনডম) ব্যবহার করুন।
ট্রাইকোমোনিয়াসিস রোগ: এই রোগটিও ক্যামাইডিয়া রোগের মতোই। রোগটি হলে যৌনাঙ্গ থেকে অস্বাভাবিক ক্ষরণ, যৌন মিলনের সময় ব্যথা বা যন্ত্রণা হওয়া এবং প্রস্রাবের সময় যন্ত্রণা হতে পারে। লক্ষণ দেখা দেয়া মাত্র সঠিক চিকিৎসা নিলে রোগ থেকে সেরে উঠা সম্ভব।