মোবাইল ফোন বর্তমানে খুব দরকারি একটি জিনিস। মোবাইল ছাড়া একদিনও চলা মুশকিল। প্রথমদিকে মোবাইল দিয়ে কথা বলাই ছিল প্রধান কাজ কিন্তু বর্তমানে এর মাল্টি ব্যবহার হয়।
কথা বলা, ভিডিও দেখা, গেম খেলা, পড়াশোনা করা, বিভিন্ন টেস্ট করা, সংরক্ষণ করা ইত্যাদি সকল কাজ বর্তমানে মোবাইল দিয়ে করা হয়। মোবাইল আধুনিক যুগের এক শুভ বার্তার মতো।
আমাদের দৈনন্দিন জীবন ব্যবস্থাকে পুরোপুরি চেঞ্জ করে দিয়েছে মোবাইল ফোন। আমাদের সাথে আর কিছু থাকুক বা না থাকুক মোবাইল ফোনটি সবসময়ই থাকে।
তো এতো দরকারি একটি জিনিস যখন কিনবেন তখন তো একটু দেখে শুনেই কেনা উচিত। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানীর বিভিন্ন রকমের মোবাইল ফোন পাওয়া যায়।
সবার সাধ্য সমান নয়। সবাই চাইলেও সব প্রকার ফোন কিনতে পারবে না। তাই সাধ্যের মধ্যে একটি মোবাইল যখন কিনতে যাবেন তখন ভেবে-চিন্তে ও জেনে বুঝেই কিনতে হবে।
নতুন একটি মোবাইল কেনার কয়েকদিন পরেই যদি নানারকম সমস্যা দেখা দেয় তবে মন মেজাজ ঠিক না থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই সাবধানে কিনতে হবে যদিও ইলেকট্রনিক্স জিনিসের কথা বলা যায় না কিন্তু সাবধানে ও দেখে শুনে কেনা তো দোষের কিছু নয়।
আজ আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে তেমনই কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানাবো। একটি মোবাইল ফোন কেনার পূর্বে কোন কোন বিষয়ের উপর লক্ষ্য রাখবেন তা বিস্তারিত বলবো। তো আর দেরি নয় – মূল আলোচনায় যাচ্ছি।
মোবাইল কেনার পূর্বে যা যা দেখবেন:
১. ক্যামেরা: শুরুতেই আমরা ক্যামেরার কথা বলছি। কারণ, ক্যামেরা মোবাইল ফোনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ফাংশন। যে মোবাইলের ক্যামেরা খুব ভালো সেটার অন্যান্য দিকও ভালো থাকে। এটা বিভিন্নভাবে প্রমাণিত।
তাই নতুন ফোন কেনার আগে ফোনের ক্যামেরা অন করে কয়েকটি ছবি তুলুন। তারপর সেটি জুম করে দেখুন। কতোটা পিক্সেল নিচ্ছে সেটা বুঝা যাবে। যদি সহজেই ছবি ফেটে যায় তবে সেই ফোন কিনতে আমরা রিকোমেন্ড করি না।
অতঃপর ফোনটি দিয়ে একটু ভিডিও করুন। ভিডিও করার সময় ফোনটি ডান থেকে বামে বা বাম থেকে ডানে ঘোরান। যদি সব ঝাপসা উঠে বা কেঁপে কেঁপে উঠে তাহলে সেটি ভালো ফোন নয়। যদি আপনি খুব কম দামের অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনেন সেক্ষেত্রে আলাদা কথা।
কিন্তু মাঝারি আকারের ফোনগুলোতে (৮০০০ থেকে ১০,০০০ টাকার মধ্যে) ক্যামেরার মান অবশ্যই ভালো থাকবে। ক্যামেরা কতো মেগা পিক্সেল সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। যেমন, শাওমির ১০৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরার চেয়ে অ্যাপলের ১২ মেগা পিক্সেল ক্যামেরার ছবি উন্নত ও ভালো। তাহলে কি বুঝলেন?
২. টাচ কনফিগারেশন: মোবাইল কেনার পূর্বে অবশ্যই মোবাইলের টাচ কনফিগারেশন ভালোভাবে দেখে নিবেন। মোবাইলের জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত ভিজুয়াল কনফিগারেশন উন্নত হলে মোবাইলও গুণগতমানে উন্নত হয়।
চেষ্টা করবেন Amoled Display ওয়ালা মোবাইল কিনতে। অন্যান্য ডিসপ্লের তুলনায় এটি মানে উন্নত ও ভালো। বেশিদিন টেকসই হয়। রোদে দাড়ালেও মোবাইলের স্ক্রীন পরিষ্কার দেখতে পারবেন।
আর ফোনের রেজ্যুলেশন যেন অন্তত ১২৮০ x ৭২০ আকৃতির হয়। তাহলে যেকোন সময় মুভি বা নাটক দেখে সুবিধা পাবেন।
৩. সাউন্ড চেক করুন: ভালো মোবাইলের সাউন্ডও ভালো হবে এটাই স্বাভাবিক। তাই কথা বলে টেস্ট করুন যে ভালো মতো আপনি শুনতে পাচ্ছেন কিনা কিংবা যাকে কল দিয়েছেন সে আপনার কথা পরিষ্কার করে শুনতে পাচ্ছে কিনা?
৪. র্যাম: র্যাম আসলে এক প্রকার মেমোরি। এই মেমোরিতে কিন্তু গান থাকে না। এটা ইন্টারনাল মেমোরী। আমরা যে সফ্টওয়ারগুলো ব্যবহার করি সেগুলোর কোর ভার্সন থাকে র্যাম এ। তাই অন্তত ২ জিবি র্যামের মোবাইল কেনার চেষ্টা করুন।
মনে রাখবেন, র্যামের উপর আপনার ফোনের স্পীড নির্ভর করে। র্যাম ভালো হলে বেশি সফ্টওয়ার সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন। আর গান, ভিডিও, নাটক, মুভি ইত্যাদি সংরক্ষণ করার জন্য আলাদা মেমোরী কার্ড ব্যবহার করবেন।
৫. জেনারেশন সাপোর্ট: আপনি যে মোবাইলটি কিনবেন তা যেন থ্রিজি এবং ফোরজি সাপোর্ট করে। থ্রিজি বা ফোরজি সাপোর্ট করে না এমন মোবাইল দিয়ে আপনি এই যুগে কিছুই করতে পারবেন না।
৬. ব্যাটারী: অ্যাটাচ ব্যাটারীওয়ালা ফোনগুলোই বর্তমানে সেরা। ব্যাটারী কত অ্যাম্পিয়ার সেটি একটু দেখবেন। অন্তত ৫০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারী দেখে মোবাইল কিনবেন। আর যদি আপনার বাসায় বিদ্যুৎ থাকে তবে কিছুটা কম হলেও সমস্যা নেই।
৭. আইএমইআই (IMEI): অবশ্যই মোবাইল কেনার পূর্বে আইএমইআই ভালো মতো চেক করবেন। মোবাইলের পেছনের দিকে স্টিকারযুক্ত আইএমইআই এর সাথে মোবাইলের মিল আছে কিনা তা চেক করুন। এই জন্য *#০৬# কোডটি যে ফোনটি কিনবেন সেটাতে উঠিয়ে ডায়াল করুন।
তারপর ভেসে ওঠা আইএমইআই নাম্বারের সাথে মোবাইলে থাকা আইএমইআই নাম্বার মিল করুন। না মিললে ঐ ফোন কখনোই কিনতে যাবেন না। কারণ, চোরাই ফোনগুলোর আইএমইআই নাম্বারের সাথে মোবাইলে দেয়া আইএমইআই নাম্বারের মিল থাকে না।
আরও পড়ুন: প্রাইমারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় সহজে পাশ করার উপায়।
পরিশেষে বলতে চাই, একটি অ্যান্ডুয়েড ফোন কিনতে গেলে অন্তত ৭ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে। তাই টাকা খরচ করে মোবাইল কেনার পূর্বে অবশ্যই উপরে উল্লিখিত বিষয়গুলো দেখুন।
প্রয়োজনে মোবাইল সম্পর্কে ভালো জানে এমন কাউকে সাথে নিয়ে যান। আর পারলে বিশ্বের মধ্যে যে কোম্পানীর ফোনগুলো মোটামুটি সেরা (গুগল, স্যামসাং, অ্যাপল, হুয়াওয়ে ইত্যাদি) সেগুলো কেনার চেষ্টা করুন। আশা করি, আপনি ঠকবেন না।