মৃত্যু সকলের জন্যই প্রযোজ্য। এমন কোনো প্রাণী নেই যে কিনা মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে না। আল-কোরআনে এ সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে।
আপনারা যারা নিয়মিত বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থ পড়েন তারা অবশ্যই এ ব্যাপারে জেনে থাকবেন। মূলত হাদিসগ্রন্থগুলোতে মৃত্যু সম্পর্কে অনেক কিছু লিপিবদ্ধ রয়েছে।
আমাদের মহানবী সাঃ মৃত্যু সম্পর্কে অনেক কথাই বলে গিয়েছেন। আমাদের সেই কথাগুলো জানা উচিত এবং সেখানে যা মেনে চলতে বলা হয়েছে, বিশ্বাস করতে বলা হয়েছে তা অবশ্যই আমাদের করা উচিত।
আজ আমরা ইসলামের আলোকে মৃত্যুর পরে আমাদের কি হবে সে সম্পর্কে জানবো। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় যাই।
মৃত্যু হওয়ার পরে আমাদের যা হবে:
এই প্রশ্নটা করা হয়েছিল বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখক আইজ্যাক আসিমভকে তাঁর মৃত্যুর কয়েক মাস আগে। তিনি উত্তর দিলেন- “কিছুই হবে না, আমি মরে গেলে কোন কিছুই হবে না। আমার লাশ পচে মাটিতে পরিণত হবে।”
আইজ্যাক আসিমভ এর এত জ্ঞান, তার লেখা ভুরি ভুরি বই, তার বুদ্ধি-বৃত্তি, তার সম্পদ আর খ্যাতি থাকা সত্ত্বেও তার সাথে আজ থেকে ১৪০০ বছর আগের আরবের নিরক্ষর, অজ্ঞ কাফিরদের কার্যত কোন পার্থক্য নেই।
তার তথাকথিত জ্ঞান কোনই কাজে আসেনি। কারণ আমরা একটা মানুষকে যতই বুদ্ধিমান বা জ্ঞানী মনে করি না কেন, তার বুদ্ধিমত্তা প্রকৃতপক্ষে শূণ্যের কোঠায়, যদি সে আখিরাতে বিশ্বাস না করে।
মহান আল্লাহতা‘আলা এ প্রসঙ্গে আল-কোরআনে বলছেন, “তারা আরও বলবে, হায় যদি আমরা শুনতাম অথবা বুদ্ধি খাটাতাম, তবে আমরা জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম না” (সূরা মূলক, আয়াত ১০)।
দেখুন তারা বলছে, “যদি আমরা বুদ্ধি খাটাতাম, আক্বেল খাটাতাম…”।
শেষ পর্যন্ত যদি জাহান্নামের আগুনেই পুড়তে হয়, তাহলে আমাদের এত এত মেধা, বুদ্ধিমত্তা জ্ঞান-বিজ্ঞানের কি মূল্য থাকলো? অথচ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন কেন আমাদেরকে মেধা দিয়েছেন।
“তিনি (মহান আল্লাহ) তোমাদেরকে দিয়েছেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ। (তবে আফসোস!) তোমাদের মধ্যে সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর” (সূরা আস-সাজদা, আয়াত ৯)।
অর্থাৎ, আমাদের বিবেক এজন্য দেয়া হয়েছে যেন আমরা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি। আল্লাহ আমাদেরকে চোখ এবং কান দিয়েছেন যেন আমরা সেগুলো দিয়ে দেখি, শুনি, জানি।
মন দিয়েছেন যেন আমরা চিন্তা করতে পারি এবং যে কেউ এই তিনটি নিয়ামতের সঠিক ব্যবহার করবে, সে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা বোধ করবে এবং ঈমান আনবে।
পরকাল সংক্রান্ত ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গির বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। স্বর্গের আরব্য শব্দটি হল জান্নাত এবং নরকের আরব্য শব্দটি হল জাহান্নাম । সমাধিতে তাদের স্বাচ্ছন্দ্যের মাত্রা সম্পূর্ণরূপে তাদের ঈমানের বা এক সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা এবং সর্বোচ্চ সত্তা ঈশ্বর বা আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাসের মাত্রার উপর নির্ভর করে।
সঠিক, দৃঢ় এবং সুস্থ ইমান অর্জনের জন্য একজনকে অবশ্যই ধর্ম নির্দেশিত কার্যাবলি পালন করতে হবে, অন্যথা তার ঈমান অবশেষে শ্বাসরুদ্ধ ও সংকুচিত হবে, এবং তিনি যথেষ্ট দীর্ঘ সময় ধরে ইসলাম পালন না করলে সেই ঈমান নির্জীব হয়ে যাবে।
তাই ইসলাম পালন করা পরকালে পুরষ্কৃত হবার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। কেউ আল্লাহ্র নাম জপার জন্য তসবীহ্ গ্রহণ করতে পারেন।
ইসলাম শেখায়- মানবজাতির সম্পূর্ণ সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য হল সৃষ্টিকর্তার উপাসনা করা। এখানে বলা হয়, পৃথিবীতে মানুষ যে জীবন যাপন করে সেটা তাদের জন্য একটা পরীক্ষা।
মৃত্যুর পর তাদেরকে তাদের ভাল ও মন্দ কাজের উপর ভিত্তি করে শেষ বিচারের পর জান্নাত বা জাহান্নাম দেয়া হয়। কিন্তু জাহান্নাম চিরস্থায়ী কিনা এব্যাপারে বিতর্ক রয়েছে। দেবসূত ইসরাফিলের বাঁশি বাজানোর পর শেষ বিচার শুরু হবে।
জান্নাত এবং জাহান্নাম দুটোরই বিভিন্ন স্তর রয়েছে। জান্নাতে সাতটি দরজা এবং সাতটি স্তর রয়েছে। সর্বোচ্চ স্তরটি সবচেয়ে ভাল এবং সেখানকার মানুষেরা সবচেয়ে সুখী থাকবেন।
জাহান্নামে সাতটি গভীর স্তর রয়েছে। স্তর যত নিচে যাবে তা ততই খারাপ। ইসলাম অনুসারে, মৃত্যুর পর আত্মার চিরস্থায়ী অস্তিত্ব এবং সেই সাথে পরীবর্তিত শারীরিক অবস্থাও থাকবে।
বিংশ শতকে ইসলামে পরকাল সম্পর্কিত আলোচনায় যেসব বিষয় সবচেয়ে গুরুত্ব পায় তা হল মানুষের কার্যাদি এবং স্বর্জ্ঞীয় বিচারের মধ্যবর্তী সম্পর্ক, নৈতিক সততার প্রয়োজনীয়তা এবং ইহকালে মানুষের কার্যের চিরস্থায়ী ফলাফল।
কুরআনের একটি কেন্দ্রীয় নীতি হল শেষ দিন, যখন পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে এবং আল্লাহ্ বিচারের জন্য সকল মানুষ ও জ্বিনকে মৃত অবস্থা থেকে জাগ্রত করবেন। শেষ দিনকে দাঁড়াবার দিন, বিচ্ছিন্নতার দিন, গণনার দিন, জেগে ওঠার দিন, বিচারের দিন ইত্যাদি বলা হয়।
বিচারের দিনের আগ পর্যন্ত, মৃত আত্মাগণ সমাধিতে পুনরুত্থানের জন্য অপেক্ষা করেন। কিন্তু তারা তৎক্ষণাৎ তাদের ভবিষ্যতে আসতে চলা ভাগ্যের স্বাদ পেয়ে যান। যাদের জন্য নরক নির্ধারিত তারা সমাধিতেই কষ্ট ভোগ করেন, আর যাদের জন্য স্বর্গ নির্ধারিত তারা সমাধিতেই শান্তির লাভ করেন।
শেষ দিনে যে পুনরুত্থান ঘটবে তা শারীরিক এবং ঈশ্বর সেদিন মৃতের শরীর পুনরায় সৃষ্টি করবেন (১৭:১০০ – “তারা কি দেখতে পায় না যে ঈশ্বর যিনি স্বর্গসমূহ এবং পৃথিবীকে তৈরি করেছেন তিনি তাদের একই রকম দেহও তৈরি করতে সক্ষম হবেন”?)।
শেষ দিনে পুনরুত্থিত ব্যক্তিগণ তাদের কার্যাদির ভিত্তিতে আল্লাহ্ কর্তৃক বিচারকৃত হবেন। ভাল ও মন্দ কাজের ভারসাম্যের ভিত্তিতে জান্নাত বা জাহান্নামে তাদের স্থান নির্ধারিত হবে।
মৃত্যু হওয়ার পরে ভাল কাজের জন্য জান্নাতে ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তিগণ চিরকালের জন্য আধ্যাত্মিক এবং শারীরিক প্রশান্তি লাভ করবেন, মন্দ কাজের জন্য পাপী ব্যক্তিগণ আধ্যাত্মিক ও শারীরিক কষ্ট ভোগ করবেন।
উৎস: ইসলামিক বই এবং উইকিপিডিয়া (সামান্য পরিমার্জিত)
আরও পড়ুন: রোজা রাখা বা সিয়াম সাধনার ফজিলতগুলো জেনে নিন।