বাংলাদেশে বর্তমানে সবকিছুর দাম বাড়ছে। কেন বাড়ছে সেটা আমরা সবাই বুঝি না। আসলে জানা দরকার। আজকে এমন বিষয় (মুদ্রাস্ফীতি) নিয়েই আলোচনা করবো। তো আর কথা নয় – সরাসরি যাচ্ছি মূল আলোচনায়।
জিনিসপত্রের দাম কেন বাড়ছে জানতে চান? আসুন একটু জেনে নেয়া যাক। মুদ্রাস্ফীতির সাথে খেলাপী ঋণ সরাসরি জড়িত।
প্রথমেই বুঝতে হবে মুদ্রাস্ফীতি জিনিসটা আসলে কি? খুব সহজভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি। একটু মনোযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করবেন তাহলে খুব সহজেই বুঝতে পারবেন।
মুদ্রাস্ফীতি কি?
কোন দেশে সর্বোপরি যতটুকু সম্পদ আছে তার মূল্য ওই দেশের বর্তমানের মোট মুদ্রামাণের (টাকা) সমান। মনে করুন, বাংলাদেশে সর্বমোট ১৫ টাকা আছে এবং এই দেশের সম্পদ বলতে সর্বসাকুল্যে আছে ৫ টি কমলা। আর কিছুই নেই।
যেহেতু দেশের মোট সম্পদের মূল্য মোট মুদ্রামানের সমান, সেহেতু এই ৫ টি কমলার মূল্য ১৫ টাকা। অর্থাৎ, প্রতিটি কমলার মূল্য ৩ টাকা। এখন যদি আরো ৫ টা ছাপানো হয়, তাহলে মোট মুদ্রামান হয়ে যাবে ১৫+৫ = ২০ টাকা।
কমলা কিন্তু বাড়েনি। তার মানে এখন [নতুন করে ৫ টাকা ছাপানোর পর] ৫ টি কমলার মোট মূল্য হয়ে গেল ২০ টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি কমলার বর্তমান মূল্য ৪ টাকা।
এই যে সম্পদ না বাড়িয়ে অতিরিক্ত টাকা ছাপানোর ফলে কমলার দাম ৩ টাকা থেকে ৪ টাকা হয়ে গেল, এইটাই সহজ ভাষায় “মুদ্রাস্ফীতি”। একই পণ্য আগের থেকে বেশি দামে ক্রয় করা মানেই মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে।
অর্থাৎ আমরা বলতে পারি “কোন দেশের সম্পদের পরিমাণ না বাড়িয়ে টাকা ছাপালে মুদ্রাস্ফীতি হবে।”
এবার আসি খেলাপী ঋণের প্রসঙ্গে। সহজ ভাষায় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করলে সেই ঋণ কে খেলাপী ঋণ বলা যায়। আবার সেই ১৫ টাকা এবং ৫ কমলায় ফিরে আসা যাক।
মনে করুন, এই ১৫ টাকা থেকে এক ব্যক্তি ৫ টাকা ঋণ নিল। যতক্ষণ পর্যন্ত ঋণের ৫ টাকা দেশের মধ্যেই থাকছে, ততক্ষন দেশের মোট মুদ্রামান ১৫ টাকাই থাকে। মানে প্রতিটি কমলার মূল্য ৩ টাকাই থাকে অর্থাৎ মুদ্রাস্ফীতি এখন পর্যন্ত ঘটেনি।
এইবার ধরুন ওই ব্যক্তি ঋণের ৫ টাকা ডলারে কনভার্ট করে বিদেশে গিয়ে খরচ করে ফেলেছে এবং সে ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম। ডলারে কনভার্ট করার মানে হচ্ছে ওই ৫ টাকা এখন আর টাকা নাই।
ধরুন ১ ডলার হয়ে গেছে [ধরি, ১ ডলার = ৫ টাকা]। এখন ওই ১ ডলার কিন্তু আর বাংলাদেশে ব্যবহার করা সম্ভব নয়। যে দেশের মুদ্রা শুধুমাত্র সে দেশেই ব্যবহার করা যায়। মানে ওই ৫ টাকা বাংলাদেশের মধ্যে আর নাই।
অথচ খাতা কলমের হিসাবে বাংলাদেশের মোট টাকার মান এখনো ১৫ ই আছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আছে ১০ টাকা। ওই খেলাপী ৫ টাকার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আবার ৫ টাকা অতিরিক্ত ছাপানো হয়। অর্থাৎ খাতাকলমে মোট মুদ্রামান হয়ে যায় ২০। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ১৫ টাকা থাকে।
মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবে এইখানে দুইটা ভয়কংর ঘটনা ঘটে:
১. যেহেতু টাকা ছাপানো হয় নতুন করে, সেহেতু মুদ্রাস্ফীতি হবে। অর্থাৎ একই কমলার দাম আগে ছিল ৩ টাকা। এখন হয়ে যাবে ৪ টাকা।
২. উপরের সমস্যাটাও খুব একটা প্রভাব ফেলত না যদি সত্যি সত্যি দেশে ২০ টাকা থাকত। তাহলে পণ্যের দাম বাড়ার সাথে সাথে মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বাড়ত। কিন্তু সেটা তো হচ্ছে না।
কারন দেশে তো ২০ টাকা নাই। আছে ১৫ টাকা। ৫ টাকা গায়েবুল হাওয়া হয়ে গেছে। মানে আমাদের কাছে আছে ১৫ টাকা। কিন্তু পণ্য কিনতে হচ্ছে এমন দামে যেন আমাদের ২০ টাকা আছে।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর এর পর মোট খেলাপী ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এর অর্থ এই হিউজ পরিমাণ টাকা আমাদের দেশে নাই।
অথচ আমাদের পণ্য ক্রয়ের সময় এমন দাম দিতে হচ্ছে যেন ওই এক লাখ এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা। আমাদের মুদ্রামাণে যুক্ত আছে। কি ভয়ংকর! এইসব হিসাবেই গ্যাসের সিলিন্ডার আজ ১৪০০ টাকা অথচ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা সেই ৭০০ টাকা-ই আছে।
ভয়ংকর ব্যাপার। আপনাকে টাকা না দিয়ে বলা হচ্ছে টাকা দিয়েছি, আছে তোমার পকেটে, বেশি দাম দিয়ে চাল, ডাল, তেল কিনবা। নাহলে না খেয়ে মরবা। আশা করি, পুরো বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।
আরও পড়ুন: সময় এর সাথে বয়সের গুরুত্ব – সময় গেলে সাধন হবে না।