মুখে ঘা:
মুখে ঘা হওয়া একটি বিশ্রী রোগ। মুখের সৌন্দর্য নষ্ট করে। প্রায় সময়ই বিশেষ করে শীতকালে এ রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি দেখা যায়।
বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় দুই শতাধিক রোগের প্রাথমিক লক্ষণ প্রকাশ পায় এই মুখে ঘা হওয়ার মাধ্যমে। আমরা সবাই এই সমস্যাটাকে খুব ছোট করে দেখি।
কিন্তু ঠিকভাবে চিকিৎসা না করলে হতে পারে বড় সমস্যা। তাই মুখে ঘা হলে দ্রুত চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন।
প্রাথমিক লক্ষণ:
মুখে ঘা না বোঝার কিছু নয়। মুুখের ভেতরে ঘা হয়। এটা জিহ্বায় হতে পারে। খুব ব্যথা হতে পারে। কোনো কিছু খেতে গেলে ব্যথা হতে পারে।
সাধারণত এ রোগ হলে ব্যথার সাথে সাথে জ্বলতেও পারে। তবে অনেকের মুখে ফুুলে যাওয়া, পুঁজ বের হওয়া, মাড়িতে ব্যথা হওয়ার মতো সমস্যাগুলোও দেখা দিতে পারে।
মুখের ভেতরের নরম মাংসে আঘাত পেলে, কোনো ভাবে কেটে গেলে ফলশ্রুতিতে ঘা হয়। আবার, শক্ত ব্রাশ দিয়ে দাত মাঁজতে গেলেও এরকম সমস্যা হতে পারে।
খুব বেশি গরম চা কিংবা পানি পান করলেও পরবর্তীতে মুখে ঘা হতে পারে। কোনো কিছু খাওয়ার সময় আচমকা গালের মধ্যে কামড় লাগলেও ফলশ্রুতিতে মুখে ঘা হতে পারে।
মুখে ঘা হলে করণীয়:
কোনো না কোনো কারণে যদি মুখে ঘা হয়েই যায় তবে সচেতন হোন। চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করুন। প্রচণ্ড ব্যথা হলে অবশ্যই আপনাকে ওষুধ খেতে হবে।
দাঁত ব্রাশ করার সময় সাবধানে ব্রাশ করবেন। অনেকেই সকালে দেরিতে ঘুম থেকে উঠে তাড়াহুড়ো করে দাঁত ব্রাশ করেন। তাতে আচমকা আঘাত পেতে পারেন।
দাঁত যদি আঁকাবাঁকা থাকে তবে প্রয়োজনে একজন ডেন্টাল ডাক্তারের সহযোগিতা নিয়ে তা ঠিক করে ফেলতে পারেন।
এই ধরণের সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য পরিমিত খাবার, পরিমিত ঘুম এবং মানসিকভাবে সুদৃঢ় থাকার চেষ্টা করবেন।
মুখে ঘা হলে কিছু কাজ করতে পারেন। এগুলো মূলত ঘরোয়া চিকিৎসা। আসুন জেনে নিই:
১। যষ্টিমধু: মৃুখে ঘা হলে যষ্টিমধু খুব উপকারে লাগে। মুখের ঘা দূর করতে যষ্টিমধুর জুড়ি নেই। আপনি ১ টেবিল চামচ যষ্টিমধু দুই কাপ পানিতে ভিজিয়ে নিন।
অন্তত ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর সেই পানি দিয়ে কয়েকবার কুলি করুন। ব্যথা কমে যাবে এবং আপনি সুস্থ্যতা বোধ করবেন।
২। অ্যালোভেরা জেল: এটিও খুব কাজে দেয়। অ্যালোভেরা জেল বা এর রস মুখে লাগালে মুখের ঘা কমে যায়। নিয়মিত ব্যবহার করলে ঘা ভালো হয়ে যায়।
অ্যালোভেরা মূলত প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক হিসেবে কাজ করে। আর তাই অ্যালোভেরা সাধারণত অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ফাংগাল কিংবা অ্যান্টি-ভাইরাল হিসেবে কাজ করে।
৩। নারিকেল দুধের সঙ্গে মধু’র ব্যবহার: প্রথমে ১ টেবিল চামচ নারিকেল দুধের সঙ্গে সামান্য মধু মিশিয়ে নিন। এখন দিনে তিন থেকে চার বার ঘা এর জায়গায় এই মিশ্রণ লাগান।
মধু ছাড়া শুধু মাত্র নারিকেল এর দুধ দিয়েও ক্ষত স্থানে মালিশ করতে পারেন। এতেও মুখের ঘা দ্রুত সেরে যাবে।
৪। তুলসি পাতা: সামান্য পরিমাণ পানিতে কয়েকটি তুলসি পাতা ভিজিয়ে রাখুন। তারপর ঐ পানি দিনে তিন থেকে চার বার পান করুন। তুলসি পাতার রস মুখের ঘা প্রতিরোধ করতে খুব কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
৫। টি ব্যাগ: মুখের ঘা এর ব্যথা দ্রুত উপশম করতে টি ব্যাগ এর কার্যকারিতা অনেক। একটি ঠাণ্ডা টি ব্যাগ নিন। তারপর সেটি ভিজিয়ে নিয়ে ঘা যেখানে হয়েছে সেখানে লাগান। উপকার পাবেন নিশ্চিত।
আরও পড়ুন: এলার্জি কেন হয়? প্রতিকার জেনে নিন।
৬। লবণ-পানি: দাঁত ব্যথা হলে লবণ-পানি অধিকাংশ মানুষই ব্যবহার করে। কিন্তু মুখে ঘা এর ক্ষেত্রেও লবণ-পানির যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।
মুখের সংক্রমণ প্রতিরোধে লবণ-পানি কাজ করে। তাই লবণ-পানি দিয়ে নিয়মিত কুলকুচি করুন। ঘা সেরে যেতে সময় লাগবে না।
৭। বরফের টুকরা: যখন ঘা এর মধ্যে খুব জ্বালা করবে তখন এক টুকরা বরফ সেখানে দিয়ে রাখুন। বরফ না থাকলে কেবল ঠাণ্ডা পানি দিয়ে কুলকুচি করতে পারেন। এতেও ঘা এর সংক্রমণ এবং জ্বালা দূর হয়ে যাবে।
এটি যদিও একটি সাধারণ রোগ তবুও এ ব্যাপারে সাবধান থাকা উচিত। মুখে ঘা হলে আক্রান্ত ব্যক্তির কোনো কিছু খেতে খুব কষ্ট হয়।
মানুষের সাথে কথা বলতে কষ্ট হয়। দাঁত পরিষ্কার করতে অসুবিধায় পড়তে হয়। অনেক সময়ে এই কারণে দাঁতে ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে।
তাই এরকম সমস্যায় আক্রান্ত হলে দেরি না করে ব্যবস্থা নিন। উপরে উল্লিখিত ঘরোয়া চিকিৎসাগুলো করার পাশাপাশি নিকটস্থ ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিন।