মুখের রোগ যে কারও হতে পারে। যেমন- মুখে দুর্গন্ধ, মুখে ঘা, মুখে প্রদাহ, মুখে বিস্বাদ, মুখ ফোলা, জিভের নানা রোগ, দন্তশূল প্রভৃতি।
এসব রোগ হলে রোগী কিছু খেতে পারে না, সব সময় অস্থিরতা অনুভব করে, কোনো কাজে মন বসাতে পারে না। এ ধরনের রোগ হলে প্রথম থেকেই চিকিৎসা করানো দরকার। শুরুতেই চিকিৎসা করালে খুব অল্পতেই সেরে যায়।
মুখে ঘায়ের চিকিৎসা: সাধারণত পেটের গোলমাল থাকলে এ রোগ হয়। মুখ অপরিষ্কার থাকার জন্যও রোগটা হতে পারে।
এ রোগের উৎকৃষ্ট ওষুধ- মারকিউরিয়াস ৬ বা বোরাক্স ৬। ঈষৎ গরম পানিতে কুলি করলে রোগী একটু আরাম বোধ করে।
মুখের বিস্বাদের চিকিৎসা: কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম প্রভৃতি কারণে এ রোগ দেখা দেয়। অনেক সময় রোগভোগের কারণেও মুখে বিস্বাদ দেখা দেয়।
এটাকে রোগ না বলে রোগের উপসর্গ বলাই ভালো। এ ধরনের বিস্বাদ দেখা দিলে কি রকম স্বাদ অনুভূত হচ্ছে তা বিচার করে ওষুধ দেওয়া দরকার।
লবণ স্বাদ থাকলে- নেট্রাম মিউর ১২x চূর্ণ।
অম্ল স্বাদ থাকলে- ফসফরিক অ্যাসিড ৬।
তেতো স্বাদ থাকলে- ব্রায়োনিয়া ৬ বা পালসেটিলা ৬।
মুখগহ্বর প্রদাহের চিকিৎসা: রক্তাল্পতা, পারদের অপব্যবহার, মুখের ভেতর অপরিষ্কার, দাঁত অপরিষ্কার, অজীর্ণ-দোষ প্রভৃতি কারণে মুখগহ্বরে প্রদাহ হতে পারে।
মুখাবয়বের ঝিল্লি রক্তবর্ণ হয়, স্ফীত হয়ে ওঠে, কখনো বা ক্ষতের সৃষ্টি হয় ও প্রদাহ হয়। এ রকম হলে শ্বাস-প্রশ্বাসে দুর্গন্ধ, দাঁতের গোড়ায় আড়ষ্ট-ভাব, কিছু মুখে পুরলেই কাঁটার মতো বেঁধে প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয়।
রোগীর কঠিন খাদ্য খেতে খুব কষ্ট হয়। এ রোগ হলে লক্ষণ বিচার করে ওষুধ খাওয়ালে সত্বর সেরে যেতে পারে।
গলার ভেতর ক্ষত হলে- ফাইটোলাক্কা ৬।
গালের ভেতর ক্ষত ও সেই সঙ্গে মাড়ি থেকে রক্ত পড়েলে- মারকিউরিয়াস ৬।
যদি পারদের অপব্যবহার বা রক্তাল্পতার কারণে এ ধরণের ক্ষত বা প্রদাহ হয়ে থাকে তাহলে- নাইট্রিক অ্যাসিড ৬, কার্বোভেজ ৬, হিপার সালফ ৩০। যেকোন একটি মাত্র ওষুধ সেব্য।
মুখ ফোলার চিকিৎসা: অনেক সময় মুখ ফুলে ওঠে। এ রকম হলে দপ-দপ করে, ছুঁচ ফোটার মতো বেদনা হয়, কখনো বা লাল হয়ে ওঠে।
রোগীর খেতে খুব কষ্ট হয়, নানা রকম অসুবিধা ভোগ করে। সাধারণত ঠাণ্ডা লেগেই এ রকম হয়ে থাকে। তবে মুখে ঘা বা মুখের ভেতরের অন্য কোনো রোগ হলেও মুখ ফুলতে পারে।
যদি সূঁচ ফোটার মতো বেদনা হয় তাহলে- বেলেডোনা ৩০।
ঠান্ডা লেগে যদি মুখ ফুলে ওঠে তাহলে- অ্যাকোনাইট ন্যাপ ৩।
গাল খুব ফুলে উঠলে এবং ঠোঁটের উপরের অংশ ফুলে উঠলে- মারকিউরিয়াস ৬।
মুখ ফুলে যদি দপ-দপ করতে থাকে তাহলে রোগীকে খাওয়ানো দরকার- বেলেডোনা ৩।
মুখে দুর্গন্ধের চিকিৎসা: অনেকের মুখে দুর্গন্ধ হয়। এ রকম হলে তার পাশে বসা যায় না, তার সঙ্গে কথা বলা যায় না। বদহজম, পারদের অপব্যবহার বা মুখ ঠিকমত পরিষ্কার না করার কারণে এ রকম হয়ে থাকে।
এটাকে রোগ বলা চলে না – এটা একটা রোগের উপসর্গ মাত্র। কি কারণে দুর্গন্ধ হচ্ছে তা অনুসন্ধান করে মূল রোগটাকে সারালেই দুর্গন্ধ নষ্ট হবে বা সেরে যাবে।
এ রকম হলে ব্যবহার করতে হবে- নাইট্রিক অ্যাসিড ৬, হিপার সালফ ৩০ বা কার্বোভেজ ৬।
যদি অজীর্ণতা দোষে বা মুখ অপরিষ্কার থাকার দরুন মুখে দুর্গন্ধ হয় তাহলে- নাক্সভমিকা ৩০ বা পালসেটিলা ৬।
জিভে রোগের চিকিৎসা: জিভে ক্ষত হয়, কাঁটা-কাঁটা মতো হয়, দূষিত ব্রণ হয় এবং এ ধরনের উপসর্গ বলাই ঠিক। ঠাণ্ডা লেগে, পারদের অপব্যবহারে বা কঠিন রোগ হওয়ার জন্য এ ধরণের উপসর্গ দেখা দিয়ে থাকে।
রোগী কিছু খেতে পারে না। ঠাণ্ডা পানি জিভে ঠেকলে জ্বালা করে। গরম পানি মুখে পুরলে একটু আরাম বোধ হয়।
জিভে আঘাত লাগার জন্য জ্বালা করলে বা ব্যথা হলে- আর্নিকা ৩।
জিভে ঘা হলে বা ফুলে উঠলে- মারকিউরিয়াস ভাইরাস ৬।
পারদজনিত কারণে জিভে কোনো উপসর্গ দেখা দিলে- হিপার সালফ ৩০ বা নাইট্রিক অ্যাসিড ৩।
জিভে’তে যদি ছোট ছোট ফুস্কুড়ির মতো দেখা দেয়, কাঁটা কাঁটা মতো ঠেকে তাহলে- মার্কবিন আয়োডেটাস ৩ বিচূর্ণ।
জিভে’তে দূষিত ব্রণ হলে- কেলি সায়েনেটাস ৩x।
জিভের মূলগ্রন্থি বৃদ্ধির চিকিৎসা: জিভের মূলগ্রন্থি ক্ষতযুক্ত হয়, বৃদ্ধি পায়। ক্ষতে পুঁজও হতে পারে। অনেক সময় মূলগ্রন্থি খুব বৃদ্ধি পায়, তখন পানি গিলতেও কষ্ট হয়।
ডানদিকের জিভের গোড়ায় রোগ না বাঁদিকের জিভের গোড়ায় রোগ তা বিবেচনা করে ওষুধ দেওয়া দরকার।
যদি ডানদিকের জিভের গোড়া ফুলে ওঠে ও লাল হয় তাহলে দিতে হবে- বেলেডোনা ৩x।
যদি বাঁদিকের জিভের গোড়া ফুলে ওঠে ও লাল হয় তাহলে দিতে হবে- ল্যাকেসিস ৬ বা ৩০।
উপরের ওষুধ দুটিতে কাজ না হলে দিতে হবে- মারকিউরিয়াস ৩।
যদি মনে হয় পুঁজ হবার উপক্রম হয়েছে তাহলে দেওয়া দরকার- হিপার সালফ ৩০। পুঁজ হলেও এই ওষুধটি দেওয়া চলে।
একসঙ্গে ছোট ছোট ক্ষত অনেক হলে- লাইকোপোডিয়াম ৬।
মাঝে মাঝে গরম পানির কুলি করলে রোগী আরাম পাবে। এ রকম হলে গলায় ঠাণ্ডা লাগানো উচিত নয়। ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করাও উচিত নয়।
দন্তশূলের চিকিৎসা: রোগটা হলো দাঁতের যন্ত্রণা। দাঁতের যন্ত্রণা এখন প্রায় লোকেরই হতে দেখা যায়। এ রোগ হবার কয়েকটি কারণ আছে। পেটের গোলমাল, ঠাণ্ডা লাগা প্রভৃতি মূল কারণ।
দাঁতে অসহ্য যন্ত্রণা হয়, রোগী যন্ত্রণায় কাঁতরাতে থাকে। কিছু খেতে পারে না, কোনোভাবে স্বস্তি পায় না। অনেক সময় দাঁত নড়লে এ রকম যন্ত্রণা হয়। দাঁতের কোথাও ফুটো বা গর্ত হলেও এরকম যন্ত্রণা হয়।
দাঁত নড়লে বা আলগা হলে- সালফার ৩০।
যদি গর্ভাস্থায় দাঁতের যন্ত্রণা হয় তাহলে দিতে হবে- সিপিয়া ৩।
দাঁতে গর্ত হওয়ার কারণে যন্ত্রণা হলে- ক্রিয়োজোট ৬।
মাড়ি দিয়ে রক্তপড়া ও যন্ত্রণা থাকলে- অ্যাকোনাইট ৩x।
দাঁতের অসহ্য য্ন্ত্রণা, কানের গোড়া পর্যন্ত বিস্তৃতি হলে- আর্সেনিক ৬।
গরম জিনিস খেয়ে দাঁতের যন্ত্রণা হতে থাকলে- পালসেটিলা ৬।
নারীর রজঃরোধ ও গা শীত-শীত ভাবসহ দাঁতের যন্ত্রণায়- পালসেটিলা ৬।
ঠাণ্ডা লেগে বা বৃষ্টিতে ভিজে দাঁতের যন্ত্রণা হলে- ডালকামারা ৬।
ঠাণ্ডা বাতাস বা পানি লেগে যন্ত্রণা হলে- মারকিউরিয়াস ৩।
যেকোন রকম দাঁতের য্ন্ত্রণার একটি ভালো ওষুধ- প্লান্টেগো (মাদার)।
দন্তশূল হলে গরম পানি, গরম দুধ প্রভৃতি গ্রহণ করলে রোগী আরাম পায়। কোনো ঠাণ্ডা পানীয় দাঁতে ঠেকলেই যন্ত্রণা বাড়ে, সুতরাং তা যাতে না ঠেকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
এ অবস্থায় রোগীর পক্ষে কোনো কঠিন খাদ্য গ্রহণ করাটাও বাঞ্চনীয় নয়। তরল উষ্ণ খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ রোগীর পক্ষে কিছুটা আরামদায়ক হতে পারে।
আরও পড়ুন: ডায়াবেটিস রোগ থেকে মুক্তির উপায় – গাছ-গাছড়ার ওষুধ।
পরিশেষ বলা যায়, মুখের রোগ হলে চেহারার সৌন্দর্য্যে তা প্রভাব ফেলে। তাই মুখের রোগ হলে একটুও অবহেলা করা যাবে না। অবহেলা করলে নিজেরই ক্ষতি হবে।
তাই রোগ লক্ষণ দেখা দেয়া মাত্রই নিকটস্থ অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরামর্শ ও চিকিৎসা সেবা নিতে ভুলবেন না যেন।