মেহেদী হাসান যার বাড়ি শেরপুরে। তিনি ঢাকার মহাখালী, তেজগাঁও আর গাজীপুরের চৌরাস্তার বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার লাগাচ্ছেন। এটা কোনো জাকজমকপূর্ণ পোস্টার নয়। পোস্টারটি দেখলে যে কারও মাথা ঘুরে যাবে।
পোস্টারে লিখা- মায়ের জীবন বাঁচাতে নিজের একটি কিডনী বিক্রি করতে চাই। আর এ পোস্টার খুব তাড়াতাড়ি ভাইরাল হয়ে যায়। সম্প্রতি একাত্তর টিভি মেহেদী হাসানের একটি ইন্টারভিউও নিয়েছেন।
জানা যায়, মায়ের চিকিৎসা ও ওষুধ বাবদ খরচ যোগার করতে চাকরির খোঁজে প্রায় ৩ সপ্তাহ আগে ঢাকায় আসে মেহেদী হাসান। শহরটি তার কাছে প্রায় অচেনা। শহরের কাউকে সে তেমন চেনে না এবং তার তেমন কোনো আত্মীয়-স্বজনও এ শহরে নেই।
প্রায় না খাওয়া অবস্থায় দিনের পর দিন ঢাকার ফ্লাইওভারগুলোতে ঘুমায় মেহেদী হাসান। বিলাশবহুল এই শহরে মেহেদীর মতো যদিও অনেকেই ফুটপাতে ঘুমায় কিন্তু মেহেদীর বিষয়টি একটু আলাদারকম ছিল।
বেসরকারি এক টেলিভিশনের প্রতিবেদনে দেখা যায়, কান্না জড়িত কণ্ঠে মেহেদী বলেন, “ঢাকায় ট্রেনে আসছি, টাকা ছিলো না, মায়ের কানের রিং ছিলো। এই রিংগুলো আমি বিক্রি করে দিছি। আমি বলেছি, মা আমি চাকরি পেলে তোমার রিং, চিকিৎসা সবই হবে। আমার জন্য মা দোয়া করো।”
তিনি আরও বলেন, “একটি চাকরির জন্য কতজনের পা পর্যন্ত ধরেছি কিন্তু হয়নি। এছাড়া যে আর কোন উপায় নেই, মায়ের চিকিৎসার জন্য মাসে ৪ হাজার টাকার ওষুধ লাগে যা গত একমাস ধরে বন্ধ। মাকে ভালো কারার জন্য ঢাকাতে আসছি একটি চাকরি করার জন্য।”
মেহেদী আরো বলেন, আমি প্রত্যেকটি সেক্টরে গেছি কত দারোয়ানের পা ধরেছি। আমার মা আজ বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ। মার ডান হাত প্যারালাইজড হঠাৎ হাতে শক্তি আসে আবার চলে যায়।
মা বলে, বাবা- আমি কি ভালো হতাম না, তখন খুব কষ্ট হয় যে, মায়ের জন্য কিছুই হয়তোবা করতে পারলাম না।
আজকে আমি যদি অসুস্থ হতাম তাহলে মা যেকোন ভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতো। করোনার শুরুর দিকে হঠাৎ মেহেদীর মা প্যারালাইজড হন। দেখা দেয় হার্টের সমস্যা।
২০১৭ সালে মেহেদীর বাবা তার মাকে ডিভোর্স দিয়ে অন্যত্র সংসার শুরু করলে বাড়ি ছাড়া হয় মেহেদী ও তার মা। তার মা গার্মেন্টস-এ কাজ করে সংসারের হাল ধরলেও এখন সে ভার মেহেদীর ওপর পড়েছে।
মেহেদীর মা হেনা বেগম বলেন, মাসে আমার ৪ হাজার টাকার ওষুধ লাগে। আমার বুকে ব্যথা। আমি বিরাট অসুস্থ।
শেরপুরে তার গ্রামের বাড়ি খোঁজ নিয়ে দেখা যায় টাকার অভাবে সে বাড়ি ভাড়া দিতে পারছিলেন না। এক বছর আগে তার মা তার এক আত্মীয়ের সাথে মেহেদীর বিয়ে দিলেও সেই সংসারও চলছে অনেক কষ্টে।
মেহেদীর স্ত্রী মৌসুমী আক্তার বলেন, তাদের নতুন সংসারে এমনও দিন গেছে যে টানা তিন দিন না খেয়ে থেকেছে। লজ্জার কথা কি বলবো ঘরে চাল নেই, সবতো বাজার থেকে কিনে আনতে হয়, এখন খাদ্যের অভাবে আমরা না খেয়ে আছি।
মেহেদীর বাসার মালিক ছায়েদুর রহমান বলেন, সে আমাদের এখানে ভাড়া থাকে। ছেলেটি অভাবগ্রস্ত কিন্তু অনেক ভালো। সে ঠিকমত আমার বাসার ভাড়াও দিতে পারে না।
মেহেদীর কাছে তার মা তার পৃথিবী। নিজের জীবন দিয়ে হলেও সে চায় তার মা ভালো থাকুক। তাই দিনভর এই শহরে ঘুরে ঘুরে চাকরি খুঁজে বেড়ায় মেহেদী। কারন ওষুধ ছাড়া মাকে বাঁচানো যাবে না।
মিহেদী বলেন, মাদরাসার লাইনে দাখিল, আলিম শেষ করে ইংরেজীতে অনার্সে ভর্তি হয় ফাস্ট ইয়ারে পরীক্ষার ফর্ম পুরনে যে টাকা আমাকে দেওয়া হয়ছিলো তা দিয়ে মায়ের ওষুধ কিনেছিলাম।
এখন সবাই আমাকে জিজ্ঞাসা করে তোমার পড়ালেখা ঠিক আছে? তো আমি বলি ঠিক আছে, কিন্তু আমি তো জানি যে আমি পরীক্ষা দিতে পারি নাই।
মেহেদী আজ বড় অসহায়। তবে মায়ের জন্য তার কিডনী বিক্রির বিষয়টি সবার মধ্যে সাড়া জাগিয়েছে। মায়ের প্রতি সন্তানের এমন ভালোবাসা থাকা উচিত।
হয়তো অতি শীঘ্রই মেহেদীর একটি চাকরির ব্যবস্থা হয়ে যাবে। কারণ, সমাজে অনেক বিত্তবান মানুষ রয়েছেন। ছোট একটি চাকরি মেহেদীকে দেয়া তাদের জন্য কোনো ব্যাপারই না। হয়তো আমরা সে খবরটি খুব শীঘ্রই প্রকাশ করতে পারবো। মায়ের জীবন বাঁচাতে মেহেদীর এই আত্মত্যাগ (কিডনী বিক্রির ইচ্ছা) ভোলার মতো নয়।
আরও পড়ুন: ১ দিনে ৯০০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি – রেকর্ড।