মাসিক সংক্রান্ত অসুবিধায় অনেকেই (মেয়ে বা মহিলা) সাফার করেন। একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত মাসিক সাধারনত মাসিক হয়। আবার, একটি নির্দিষ্ট বয়সের পরেই মাসিক শুরু হয়।
যখন থেকে মাসিক শুরু হয় তখন থেকেই মেয়েদের এই বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার। মাসিকের কোন সমস্যা পরিলক্ষিত হলে শুরুতেই তা ডাক্তারকে অবহিত করা প্রয়োজন এবং চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন।
আজ আমরা মাসিকের সমস্যায় কার্যকরী একটি ঔষধ নিয়ে আলোচনা করবো। এই ঔষধটি মাসিকের বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকরী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। তো আর কথা নয় – সরাসরি যাচ্ছি মূল আলোচনায়।
ডুবারেল® – Dubarel®
উপাদান: প্রতি ৫ মি.লি. সিরাপে আছে সারাকা ইন্ডিকা ১.৫২ গ্রাম, নাইজেলা সেটিভা ১৫.১৫ মি. গ্রা., সাইপেরাস রটনডাস ১৫.১৫ মি. গ্রা., জিনজিবার অফিসিনালি ১৫.১৫ মি. গ্রা., বার্বেরিস এরিস্টাটা ১৫.১৫ মি. গ্রা., নেলামবিয়াম নুসিফেরা ১৫.১৫ মি. গ্রা., ম্যাংগিফেরা ইন্ডিকা ১৫.১৫ মি. গ্রা., এবং অ্যাডোহটোডা ভ্যাসিকা ১৫.১৫ মি. গ্রা. সহ অন্যান্য ভেষজ উপাদানের নির্যাস।
বর্ণনা: মহিলাদের প্রজননকালীন সময়ে একটি বিশেষ উপসর্গ দেখা দেয় যেটাকে আমরা বলতে পারি অস্বাভাবিক ইউটেরাইন ব্লিডিং। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা গেছে, প্রায় ২০ ভাগ মহিলা এ সমস্যায় ভুগে থাকে এবং স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যায়।
আয়ুর্বেদ হলো ইন্ডিয়ান চিকিৎসা ব্যবস্থার এক প্রাচীনতম শাখা যেখানে অস্বাভাবিক ইউটেরাইন ব্লিডিং এ উপকারী বহু ভেষজের কথা উল্লেখ রয়েছে।
অশোকারিষ্ট (সারাকা ইন্ডিকা, ম্যাংগিফেরা ইন্ডিকা এবং অ্যাডোহটোডা ভ্যাসিকা) জরায়ুর নানাবিধ সমসা জনিত চিকিৎসায় বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানিত ও কার্যকরী।
ফার্মাকোলজি: মহিলাদের মাসিক সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের অসুবিধা এবং স্ত্রী-হরমোনের অসমতায় সারাকা ইন্ডিকা সবচেয়ে জনপ্রিয় নিরাময়ক।
এ বৃক্ষের প্রধান উপাদান হলো স্টেরয়েডাল অংশ ও ক্যালমিয়াম লবণ। সারাকা ইন্ডিকার বাকলে ইস্ট্রোজেন জাতিয় উপাদান আরগোস্টেরল থাকে।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক উপাদান হলো অ্যালকেন এস্টার, ট্যানিন, ক্যাটাচিন, ক্যাটিকোল ও এপিক্যাটিচিন।
ভেষজটি ওভারিয়ান টিস্যুকে উত্তেজিত করার মাধ্যমে এস্ট্রোজেনের কার্যকরীতা বৃদ্ধি করে ওভুলেশন ঘটায় ও এন্ড্রোমেট্রিয়ামকে মেরামত করে।
এটি জরায়ু মাংসপেশীকে সক্রিয় করে যা শক্তিশালী জরায়ু রক্তক্ষরণরোধক হিসেবে কাজ করে। এটি মহিলাদের প্রজনন অঙ্গ ও রক্তের পুষ্টি বৃদ্ধি করে এবং হাইপোথেলামিক পিটুইটারী ওভারিয়ান এঙিসকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে স্ত্রী-হরমোনের সঠিক উৎপাদন ও মাসিক চক্রের নিয়মিতকরণে সহায়তা করে।
সারাকা ইন্ডিকা প্রোস্টাগান্ডিন এইচ ২ সিনথেটেসকে বাঁধা প্রদানের মাধ্যমে জরায়ু থেকে রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
ব্যথা নাশকের ন্যায় সারাকা ইন্ডিকা জরায়ু ব্যথায় নির্দেশিত। এছাড়াও এ ভেষজের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাকটেরিয়া বিরোধী কার্যকারিতা রয়েছে।
ম্যাংগিফেরা ইন্ডিকা সংকোচক ও বমি প্রতিরোধক এবং জরায়ু প্রদাহ ও রক্ত জমাট সংক্রান্ত জটিলতায় উপকারী।
এটি মহিলাদের যৌন ও মূত্রনালীকে দৃঢ় করে এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে। এটি মাসিকের ব্যথা সারায় ও জরায়ুকে নিয়ন্ত্রন করে। এর ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস বিরোধী কার্যকরীতা রয়েছে।
সাইপেরাস রটনডাস রক্ত স্বল্পতা ও সাধারণ দুর্বলতায় কার্যকর। অ্যাডোহটোডা ভ্যাসিকা অতিরিক্ত রক্তপাত বন্ধ করে এবং ডিস্ফাংশনাল ইউটেরাইন ব্লিডিং এ উপকারী।
নির্দেশনা ও ব্যবহার: ডিস্ফাংশনাল ইউটেরাইন ব্লিডিং (ডি ইউ বি), সেকেন্ডারী অ্যামেনোরিয়া, মেনোরেজিয়া, পলি সিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (পি সি ও এস), বন্ধ্যাত্ব।
মাত্রা ও ব্যবহারবিধি: ১২ বছরের উপরে এবং প্রাপ্ত বয়ষ্কদের ক্ষেত্রে: ২ – ৩ চা চামচ (১০ – ১৫ মি.লি.) দিনে ২ – ৩ বার খাওয়ার পর ৩ – ৬ মাস ধরে কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেব্য।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া: নির্দেশিত মাত্রায় সেবন করলে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় না। আর অন্য কোন নিষেধাজ্ঞা জানা যায়নি।
অন্য ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া: আপাতত কোন তথ্য জানা যায়নি।
গর্ভকালীন ও স্তন্যদানকালীন সময়ে ব্যবহার: গর্ভকালীন ও স্তন্যদানকালীন সময়ে ব্যবহার করা উচিৎ নয়।
সরবরাহ: প্রতিটি পি ই টি বোতলে আছে ১০০ মি.লি. সুস্বাদু ও সুগন্ধযুক্ত সিরাপ।
পরিশেষে বলা যায়, মাসিকের সমস্যা আসলে একটি চরম সমস্যা। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ কিংবা ব্যথা এবং দীর্ঘদিন থাকা আসলে স্বাভাবিক কিছু নয়।
তাই যাদের মাসিক সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে তারা ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে উপরোক্ত ঔষধটি নিয়মিত সেবন করতে পারেন। আশা করা যায়, আপনি নিশ্চিত উপকৃত হবেন।
আরও পড়ুন: পিরিয়ড বা মাসিক দেরীতে হয় কেন? এমন সমস্যা হলে যা করবেন