সাধারনত পনের বছর বয়স থেকে মেয়েদের মাসিক ঋতুস্রাব শুরু হয় এবং পঞ্চাশ বছর বয়সের দিকে তা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
সাধারনত গর্ভকালীন অবস্থায় এবং শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় পিরিয়ড বন্ধ থাকে। এই দুই সময় ছাড়া অন্য সময়ে মাসিক বন্ধ থাকলে তার পেছনে কোনো রোগ আছে বলে ধরে নিতে হবে।
আজ আমরা এই সমস্যার জন্য কিছু হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সম্পর্কে জানবো। তবে অনুরোধ, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে ঔষধগুলো সেবন করতে যাবেন না।
Pulsatilla Pratensis: মাসিক বন্ধের চিকিৎসায় হোমিও ঔষধগুলোর মধ্যে পালসেটিলার স্থান এক নম্বরে। এটি স্নেহপরায়ন, কথায় কথায় কেঁদে ফেলে, খুব সহজেই মোটা হয়ে যায় – এই ধরণের মেয়েদের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে।
মাত্রা হবে নিম্নশক্তিতে (৫, ৩, ৬ ইত্যাদি)। সেবন করার নিয়ম হলো ৫ থেকে ১০ ফোঁটা করে রোজ তিনবার।
Senecio Aureus: শরীরে রক্ত কম থাকলে অর্থাৎ যারা রক্তশুন্যতায় ভুগছেন, তাদের জন্য সিনিসিও অরিয়াস ভালো কাজ করে। এদের হাত-পা সব সময় ঠান্ডা এবং ঘামে ভিজা ভিজা থাকে।
Thlaspi Bursa Pastoris: বারসা পেসটোরাই মাসিক বন্ধের চিকিৎসায় একটি শ্রেষ্ঠ ঔষধ। বিশেষত সেবন করতে হবে নিম্নশক্তিতে (Q) ৫ থেকে ১০ ফোঁটা করে রোজ তিনবার।
Calcarea Carbonica: মোটা, স্থূলকায়, থলথলে শরীরের মেয়েদের ক্ষেত্রে ক্যালকেরিয়া কার্ব ভালো কাজ করে বিশেষত যদি সাথে কিছুটা রক্তশূন্যতাও থাকে। এদের মাথা সহজেই ঘেমে যায়, অল্পতেই বুক ধড়ফড় করে এবং মাথা ব্যথা অথবা কাশি সারা বছর লেগেই থাকে।
Aconitum Napellus: ভয় পেয়ে মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে একোনাইট খেতে হবে।
Ferrum Metallicum: ফোম মেট এর লক্ষণ হলো দুর্বলতা, সাদাটে মুখ, বুক ধড়ফড়ানি, মুখ-চোখ ফোলা ফোলা, চোখের চারদিকে কালি পড়ে গেছে, দেখতেই মনে হয় অসুস্থ্য।
Sepia: মাসিক বন্ধের চিকিৎসায় সিপিয়ার লক্ষণ হলো পেটের মধ্যে চাকা বা বলের মতো কিছু একটা আছে বলে অনুভূত হয়। শারীরিক দুর্বলতা থাকে প্রচুর এবং সংসারের প্রতি কোন আকর্ষণ থাকে না।
Bryonia Alba: যাদের মাসিকের সময়ে মাসিক না হয়ে বরং নাক থেকে রক্তক্ষরণ হয় এবং প্রচণ্ড মাথা ব্যথা হয়, তাদের বেলায় ব্রায়োনিয়া প্রযোজ্য।
Lachesis: ল্যাকেসিসের লক্ষণ হলো পিরিয়ড শুরু হলে নাক থেকে রক্তক্ষরণ এবং মাথা ব্যথা ভালো হয়ে যায়।
Graphites: যেসব মহিলা দিন দিন কেবল মোটা হতে থাকে, যাদের মাসিকের রক্তক্ষরণের পরিমাণ খুবই অল্প, যাদের সারা বছর কোষ্ঠকাঠিন্য লেগে থাকে, তাদের বেলায় গ্রেফাইটিস প্রযোজ্য।
Kali Phosphoricum: একেবারে নার্ভাস ধরণের মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যাদের শরীরের অবস্থা বেশ খারাপ, ভীষণ বদমেজাজী, অতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমে যাদের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়েছে তাদের ক্ষেত্রে এই ঔষধ প্রযোজ্য।
Cimicifuga or Actea Racemosa: এটি নার্ভাস ধরণের মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বিশেষত যারা ঘন ঘন বাতের ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। মনে আনন্দ নেই এবং সবকিছুরই খারাপ দিকটা আগে চিন্তা করেন।
Natrum Muriaticum: ঋতুস্রাবে রক্তক্ষরণ হয় খুবই অল্প এবং যাদের পিরিয়ড প্রতিবারই কিছুদিন পিছিয়ে যায়, তাদের মাসিক বন্ধ হলে নেট্রাম মিউর প্রযোজ্য। এদের মুখ হয় সাদাটে এবং ফোলা ফোলা এবং বেশী বেশী লবণ বা লবণযুক্ত খাবার খাওয়ার প্রতি তীব্র আকর্ষণ থাকে।
Kali Carbonicum: যেসব রোগীর লক্ষণ নেট্রাম মিউরের মতো অথচ নেট্রাম মিউরে কোন কাজ হয় না, সেক্ষেত্রে ক্যালি কার্ব দিতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়, লক্ষণের সাথে মিল রেখে হোমিওপ্যাথি ঔষধ সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করা হলো যাদুর মতো কাজ করে। তবে অবশ্যই নিকটস্থ অভিজ্ঞ কোনো হোমিও চিকিৎসকের সান্নিধ্যে অবশ্যই আপনাকে চিকিৎসা নিতে হবে।
আরও পড়ুন: মাঙ্কিপক্স কতোটা ভয়াবহ এবং ভারতে কয়জন মারা গেল?