মালয়েশিয়া আমাদের এশিয়া মহাদেশেরই একটি দেশ। দেশটি সব দিক থেকে অনেক উন্নত। সেখানে হাজার হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক কাজ করছে।
সম্প্রতি আবার মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেবে বলে জানিয়েছেন। সেই জন্য অনলাইনে নিবন্ধন শুরু হয়েছে। আপনি যদি বিদেশে যেতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন এবং আপনার যদি একটি পাসপোর্ট থাকে তবে দেরী না করে এখানে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সেটা অনুসরণ করে অনলাইনে দ্রুত আবেদন করুন।
আপনারা হয়তো জানেন যে, বিগত ৪ বছর ধরে মালয়েশিয়া সরকার কোনো বাংলাদেশী লোক নিচ্ছিল না। কিন্তু বর্তমানে আবার তা শুরু হয়েছে।
আর তাই যারা মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক তাদের জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আর সেটা করা যাবে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) এর মাধ্যমে। জুন মাসের ১৩ তারিখ থেকে এ নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
বিএমইটি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, গুগল প্লে স্টোরে থাকা “আমি প্রবাসী” অ্যাপের মাধ্যমে খুব সহজেই মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য অনলাইন আবেদন করা যাবে।
বিএমইটি এর মহাপরিচালক বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, মালয়েশিয়া কাজে যেতে যারা ইচ্ছুক তাদের সে দেশের চাকুরিদাতারা যাতে বাছাই করতে পারেন, সেজন্য সবাইকে বিএমইটি এর ডেটাবেজে অন্তর্ভুক্ত হতে হবে – এরকমই একটি ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মালয়েশিয়া যেতে নিবন্ধন করবেন যেভাবে:
বাংলাদেশে বিএমইটি এর মোট ৪২টি কার্যালয় রয়েছে। এগুলো বিভিন্ন জেলায় রয়েছে। আপনার জেলায় আছে কিনা তা খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন।
আবার, বিদেশ যাওয়ার জন্য সরকারী ১১টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। আপনি চাইলে বিএমইটি এর যেকোন কার্যালয় কিংবা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে সরাসরি নিবন্ধন করতে পারবেন।
যদি এভাবে সরাসরি আবেদন করতে চান তাহলে আপনি সাথে করে আপনার পাসপোর্ট, পাসপোর্ট সাইজের ছবি, নিজের মোবাইল নম্বর, ইমেইল (যদি থাকে) এবং যদি কোনো সার্টিফিকেট থাকে (পড়াশোনার এবং কাজের দক্ষতার) সেগুলো নিয়ে যাবেন।
এসব কেন্দ্রে গিয়ে যদি আপনি নিবন্ধন করেন তাহলে আপনার আঙুলের ছাপ নেয়া হবে। আর যদি মোবাইলে অ্যাপের মাধ্যমে করেন তাহলে আঙুলের ছাপ আপাতত লাগবে না। মনে রাখবেন, “আমি প্রবাসী” নামক অ্যাপটা সরকার কর্তৃক অনুমোদিত।
আপনি যদি কেন্দ্রে গিয়ে নিবন্ধন করেন তাহলে আপনার ২০০ টাকা খরচ হবে। অর্থাৎ এই ২০০ টাকা নিবন্ধন ফি হিসেবে তারা আপনার কাছে থেকে নেবে।
আর যদি আপনি অ্যাপের মাধ্যমে করেন তাহলে আপনার আরো ১০০ টাকা বেশি খরচ হবে অর্থাৎ ৩০০ টাকা। অতিরিক্ত ১০০ টাকা “আমি প্রবাসী” অ্যাপের খরচ (সার্ভিস চার্জ) হিসেবে লাগবে।

কারও যদি কোনো দক্ষতা সনদ না থাকে তবুও ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী যেকেউ মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
আপনি যখন নিবন্ধন করবেন তখন ২ বছরের জন্য আপনার একটি অ্যাকাউন্ট তৈরী হবে। অর্থাৎ আপনার নিবন্ধনের মেয়াদ থাকবে ২ বছর।
নিবন্ধন করার পরেও আপনি চাইলে আপনার কোনো তথ্য আপডেট করতে পারবেন বিশেষ করে আপনি যদি কোনো দক্ষতার সার্টিফিকেট অর্জন করেন তাহলে সেটা অ্যাড করতে পারবেন।
পূর্বে যারা বিএমইটি’তে নিবন্ধন করেছেন তাদের নিবন্ধন করার আর কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু চাইলে তারাও তাদের তথ্য আপডেট বা এডিট করতে পারবেন। যখন আপনার নিবন্ধন সম্পন্ন হবে তখন আপনার মোবাইল নম্বরে একটি বার্তা বা ম্যাসেজ যাবে।
নিবন্ধন করার পর যেভাবে নিয়োগ পাবেন:
বিএমইটি এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, যেসকল কর্মীর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ইন্সটিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি অথবা অন্য কোন বৈধ কারিগরি প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো ধরণের দক্ষতার প্রশিক্ষণ রয়েছে তারা সেই প্রশিক্ষণের সনদ নিবন্ধনের সময় আপলোড করলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।
গত বছর বাংলাদেশের সরকারের সাথে মালয়েশিয়ার সরকারের যখন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় তখন সেখানে কিছু যোগ্যতার কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ কিছু যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ন্যূনতম ইংরেজী ভাষা সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে, মালয় ভাষার জ্ঞান থাকলে সেটা বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে। কিন্তু কারও যদি মালয় ভাষা সম্পর্কে কোনো জ্ঞানই না থাকে তবে তাকে অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত করা হবে না।
বর্তমানে মালয়েশিয়ার সরকার কৃষি, নির্মাণ, খনি, গৃহকর্ম, বাগান, পরিচ্ছন্নতা কর্মী এবং আরও কিছু খাতে লোকবল নিতে চায়।
আপনি যদি সবদিক থেকে টিকে যান তবে মালয়েশিয়া থেকে নিয়োগদাতা আপনার জন্য বিমান টিকেট পাঠাবে। তবে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য যে খরচ তা আপনাকে বহন করতে হবে।
আবার, যখন আপনি কর্মী হিসেবে মালয়েশিয়া পৌছবেন তখন আপনার স্বাস্থ্য পরীক্ষার খরচ, ইনস্যুরেন্স সংক্রান্ত খরচ, মানসম্মত আবাসন, বীমা, চিকিৎসা ও কল্যাণ ইত্যাদি খরচ নিয়োগকর্তা বা কোম্পানী বহন করবেন।
পরিশেষে বলা যায়, “আমি প্রবাসী” অ্যাপ ব্যবহার করে নিবন্ধন করা খুবই সহজ। সেখানে আপনার কিছু তথ্য চাইবে। সেগুলো আপনি ঠিকঠাক দিতে পারলে শেষে ৩০০ টাকা বিকাশে পরিশোধ করতে বলবে।
আপনি নিজে নিজে সাহস না পেলে আশেপাশের কোনো কম্পিউটার এর দোকানে যান এবং সেখানে কাজ করুন। কোনো ভুল তথ্য দেয়া থেকে বিরত থাকুন। আর ৩০০ টাকার উপরে টাকা দিতে যাবেন না। তবে কম্পিউটার খরচ হিসেবে যা দেবেন সেটা আলাদা।
আরও পড়ুন: আরআরএফ নামক বেসরকারি সংস্থায় ১৩৬৩ পদে নিয়োগ।