শারীরিক ব্যাধি মানুষের নানা রকম ক্ষতি করে। মানসিক ব্যাধিও কম ক্ষতি করে না। মানসিক সমস্যা মানুষের ভেতরে ভেতরে পুড়ে ফেলে। মানুষকে শেষ করে দেয়। স্বীয় ব্যক্তি নিজেই অনেক সময় বুঝতেই পারে না যে তিনি মানসিক সমস্যা নামক ব্যাধিতে আক্রান্ত।
আজকের করতোয়ার এই পোস্টে আমরা মানসিক রোগ নিয়ে আলোচনা করবো। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় মানসিক সমস্যা নামক রোগও আরোগ্য হয়। ঠিকমতো লক্ষণ বিচার করে ওষুধ প্রয়োগ করলে অল্পতেই রোগী রোগ মুক্ত হতে পারে।
মানসিক রোগের চিকিৎসা করার আগে সঠিক কারণ কি তা অনুসন্ধান করা দরকার। কারণের সঙ্গে লক্ষণ নির্ভুলভাবে মিলিয়ে ওষুধ প্রয়োগ করলে রোগী পূর্বাবস্থা অনায়াসেই ফিরে পেতে পারে।
কয়েকটি মানসিক সমস্যা ও হোমিও ওষুধ:
খিটখিটে মেজাজ হওয়া – ক্যামোমিলা ৬।
কোনো জন্তু দেখতে পাচ্ছে মনে হওয়া – ওপিয়াম ৬।
ইঁদুর দেখতে পাওয়া – ইথুজা ৬।
অন্যমনস্ক ভাব লক্ষণে – ক্যানাবিস ইন্ডিকা ১।
ভূত-প্রেত দেখতে পাওয়া – স্ট্র্যামোনিয়াম ৬।
কোনো বিষয়ে মনোনিবেশ করতে না পারা – ইথুজা ৬।
নিজের দেহ খন্ডিত দেখা – ব্যাপ্টিসিয়া ৬।
পরীক্ষার ব্যাপারে হতাশ হওয়া- ইথুজা ৬-৩০।
নীরবে রোদন, বিমর্ষ-ভাব, চোখের পানি ফেলা, একা থাকার ইচ্ছা – ইগ্নেসিয়া ৩০।
ধর্মচিন্তা, বিমর্ষভাব লক্ষণে – নাক্সভমিকা ৩।
রক্তচাপ বৃদ্ধিতে – প্যাসিফ্লোরা (মাদার)।
চিৎকার করা, অনবরত বকবক করা – স্ট্র্যামোনিয়াম ৬।
রোগিনীর রোগের কথা বলার সময় কান্না – পালস ৬।
অনবরত কথা বলা – ল্যাকেসিস ৬, স্ট্র্যামোনিয়াম ৩, বেলেডোনা ৬।
স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া বা দুর্বলতায় – অ্যাসিড ফস ৬।
পাগল হয়ে যাচ্ছে মনে হওয়ায় – প্লাটিনা ৩০।
খামখেয়ালী মেজাজ – স্ট্যাফিস্যাগ্রিয়া ৬, ক্যামোমিলা ৬।
লোকের সঙ্গ ভালোবাসা – লাইকোপোডিয়াম ৩০।
লোকের সঙ্গ লাভে বিরক্তি – নাক্সভমিকা ৬।
উৎকণ্ঠা থাকা – সালফার ৩০।
রাগ চেপে রাখায় উপসর্গ দেখা দিলে – ক্যামোমিলা ৬।
রাগ ভালো হবে মনে করে নিরাশ হওয়া – আর্সেনিক ৬।
উদাসীন ভাব থাকা – অ্যাসিড ফস ৩।
অস্থিরতা ভাব থাকা – আর্সেনিক ৬, সালফার ৩০, অ্যাকোনাইট ৩।
সব বিষয়ে টনটনে জ্ঞান থাকা – কফিয়া ৬।
কথা বলার ইচ্ছে না থাকা – অ্যাসিড ফস ৬।
কাউকে খুন করার ইচ্ছে জাগে – হায়োসায়েমাস ৩।
আত্মহত্যা করার ইচ্ছা জাগে – অরাম মেট ৩০।
লোকে কথায় বলে ‘চিন্তায় চিন্তায় মাথার চুল পেকে গেল’। এটা নিতান্ত কথার কথা নয় – বাস্তবেও এমন ঘটনা ঘটে। ইউরোপীয় মহাযুদ্ধের প্রথমে ইংল্যান্ডের বিদেশ-মন্ত্রী স্যার এডওয়ার্ড গ্রে’র চুল এক রাতের মধ্যে সাদা হয়ে গিয়েছিল।
শরীরের যেমন প্রভাব আছে মনের ওপর তেমনি মনেরও প্রভাব পড়ে শরীরের ওপর। একটির সঙ্গে অপরটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
মন যদি ভালো থাকে তাহলে কাজে স্পৃহা থাকে বা উদ্যম থাকে। আবার শরীর যদি ভালো থাকে তাহলে মন-মেজাজও ভালো থাকে। সুতরাং একটিকে বাদ দিয়ে অপরটিকে চিন্তা করা মোটেও উচিত নয়।
মানসিক সমস্যা হলে উপরে যে লক্ষণগুলোর কথা বলা হয়েছে সেগুলোর কিছু না কিছু দেখা দেবে। কোনো কোনো সময় রোগী অস্বাভাবিক আচরণ করে।
এমতাবস্থায় রোগীর সাথে কখনোই খারাপ আচরণ করবেন না। লক্ষণ অনুযায়ী নিজে নিজে কখনো ওষুধ খেতে যাবেন না বা কাউকে খাওয়াতে যাবেন না।
আরও পড়ুন: রক্তশুন্যতা হলে কি কি রোগ হয়, প্রতিরোধ কিভাবে করবেন?
শুধু মাত্র একটি লক্ষণের উপর ভিত্তি করে কখনো কোনো ওষুধ খাওয়ানো উচিত নয়। অবশ্যই আরো লক্ষণ সম্পর্কে জানতে হবে। এটা শুধু মাত্র একজন বিজ্ঞ চিকিৎসকই বুঝে থাকেন।
অতএব, আপনার পরিবারের কারও এমন সমস্যা হলে অনুগ্রহ করে সময় ক্ষেপণ না করে অভিজ্ঞ কোনো হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে চিকিৎসা করুন।