মাছ চাষ বর্তমানে বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই কম বেশি দেখা যায়। আগে শুধু বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলেই মাছ চাষের প্রসার ছিল। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গেও ব্যাপক মাছ চাষ দেখা যায়।
পঞ্চগড়ের অজপাড়া গাঁয়ের কৃষক সৈয়দ আলী তার বাড়ির পাশেই পুকুরে মাছের চাষ করছেন বিগত ৩ বছর থেকে। প্রথম বছর তেমন একটা লাভ তিনি করতে পারেননি অর্থাৎ তার লোকসান গুণতে হয়েছে।
কিন্তু ২য় বছর থেকে তিনি লাভের মুখ দেখছেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সৈয়দ আলীর মাটির বাড়ি। দুুটি ঘর। সৈয়দ আলীর এক ছেলে আর এক মেয়ে। ছেলেটি নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে আর মেয়েটি ৫ম শ্রেণীতে পড়াশোনা করে।
সৈয়দ আলীর বাড়ির পাশেই পূর্বদিকে একটি পুকুর রয়েছে। পুকুরের মূল মালিক আরেকজন। তিনি সৌদিআরবে থাকেন। সৈয়দ আলী বিশ্বস্ত মানুষ হওয়ায় পুকুরে মাছ চাষ করার দায়িত্বটা মূল মালিক তাকেই দিয়েছেন।
পুকুরে কোন ধরণের মাছ চাষ করেন জিজ্ঞেস করলে সৈয়দ আলী বলেন, বেশ কয়েক প্রজাতির মাছ তিনি চাষ করেন। উল্লেখযোগ্য হলো- গ্রাস কার্প, সিলভার কার্প, মিরর কার্প, সরপুটি সহ ইত্যাদি। তবে সিলভার কার্প সবচেয়ে বেশি।
তাছাড়া, সিলভার কার্প জাতীয় মাছের কদর পঞ্চগড়ের সাধারণ মানুষের মধ্যে একটু বেশি। সেদিকটা বিবেচনায় তিনি পুকুরে ঐ মাছের চাষ বেশি করেন।
প্রতি বছর তিনি ৫ মন মাছের পোনা ছাড়েন। মাছের যাবতীয় খাবার তিনি বাজার থেকে সংগ্রহ করে নিজ বাড়িতেই তৈরী করেন। সৈয়দ আলীর স্ত্রী সার্বক্ষণিক তাকে সহযোগিতা করেন।
রাতে পাহারার কাজটিও সৈয়দ আলীর নিজেরই করতে হয়। কারণ, পাহারা না দিলে মাছ চুরি হওয়ার কিংবা কেউ শয়তানি বা শত্রুতা পূর্বক পুকুরের পানিতে বিষ মিশিয়ে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে।
মাসে কত টাকা খরচ হয় জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, সবমিলিয়ে প্রায় দশ হাজার টাকা চলে যায়। কিন্তু যখন থেকে মাছ বিক্রি শুরু হয় তখন আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়না। প্রতিদিনই তিনি মোটা অঙ্কের টাকার মাছ বিক্রি করেন।
সৈয়দ আলী আরো বলেন, পুকুরে সারা বছর পানি থাকে। তবে চৈত্র মাসের দিকে একটু সেচ পাম্প লাগানোর প্রয়োজন পড়ে। তা নাহলে মাছের ক্ষতি হতে পারে। রোদের তাপে পানি অনেক গরম হয়ে যায়। তাই পানির স্তর যাতে কয়েক ফিট থাকে সে ব্যবস্থা করা হয়।
এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সৈয়দ আলীর সুখের সংসার। তাদের সংসারে এক সময় অভাব অনটন লেগেই থাকতো। কিন্তু এখন আর সেই সমস্যা নেই।
সৈয়দ আলীর স্বপ্ন, সন্তান দুটোকে মানুষের মতো মানুষ করবেন। গ্রামের আরো কয়েকজন সৈয়দ আলীর এই সাফল্য দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন এবং মাছ চাষের পরিকল্পনা করছেন।
আরও পড়ুন: পেয়াজ চাষ করে মাথায় হাত উত্তরবঙ্গের চাষীদের।
মাছ চাষ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অনেকেই সাফল্যের মুখ দেখছেন। স্থানীয় মৎস সম্পদ অধিদপ্তর থেকেও মাছ চাষীদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়।
সরকার যদি মাছ চাষীদের জন্য ব্যাংক ঋণ (সুদ মুক্ত) এর ব্যবস্থা করে দেয় তবে তা আরো বেশি মানুষকে উৎসাহিত করবে। ফলাফল স্বরুপ দেশে মাছের চাহিদা মিটিয়ে প্রয়োজনে বিদেশে রপ্তানী করা যাবে।