মাঙ্কিপক্স বর্তমানে আরেক ধরণের আতঙ্ক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর আক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। মাঙ্কিপক্সের সাথে আমরা সবাই হয়তো পরিচিত নই। তবে এই লিখার শেষের দিকে মাঙ্কিপক্স নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, পাশের দেশ ভারতের কেরালা রাজ্যের এক বাসিন্দা মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আর সর্বশেষ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ভারতে এখন পর্যন্ত মাঙ্কিপক্সে ৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
আর ভারতে যে একজন ব্যক্তির মাঙ্কিপক্সে মৃত্যু হয়েছে সেই খবর প্রথম নিশ্চিত করেছে বার্তা সংস্থা এএনআই।
অন্যদিকে, ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ওয়্যারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, যে ব্যক্তি মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তার বয়স মাত্র ২২ বছর। তিনি কেরালার ত্রিশুর জেলার বাসিন্দা ছিলেন।
ভারতের কেরালার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জ জানিয়েছেন যে, ওই তরুণের মাঙ্কিপক্স সর্বপ্রথম অন্য একটি দেশে শনাক্ত হয়েছিল। ভারতে তার প্রথম সংক্রমণ হয়নি।
এসব সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম থেকে জানা গেছে যে, ওই তরুণের মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে। আর ওই তরুণ ভারতে এসেছেন গত ২২ জুলাই।
ওই তরুণ ভারতে আসার পরপরই মানসিক অবসাদ ও মস্তিষ্কের প্রদাহ নিয়ে কেরালার একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমন খবর প্রচারিত হয়েছে।
ভারতীয় আরেকটি সংবাদ মাধ্যম দ্য নিউজ মিনিট জানিয়েছে, ওই তরুণের মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয় ১৯ জুলাই এবং সেটা আমিরাতে।
শরীরে ভীষণ জ্বর নিয়ে ২৭ জুলাই, ২০২২ খ্রি. তারিখে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। মাঙ্কিপক্সে সংক্রমিত তরুণের মৃত্যু নিয়ে একটি তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে কেরালার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তদন্তের মাধ্যমে তার মৃত্যুর কারণ উৎঘাটনের চেষ্টা করা হবে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভারতে এখন পর্যন্ত পাঁচ জন মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র ১ জন দিল্লীর আর বাকি চার জন্য কেরালার। আর কেরালার চার জন্য সম্প্রতি বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন।
এখন আমরা জানবো মাঙ্কিপক্স নিয়ে কিছু সাধারন কথা। কারণ, মাঙ্কিপক্স বর্তমানে একটা আতঙ্ক। কোন দেশে কত হারে এটা ছড়িয়ে পড়ছে তা বলা মুশকিল। তাই মাঙ্কিপক্স নিয়ে আমাদের জানা উচিত।
মাঙ্কিপক্স ভাইরাস বা বাঁদরবসন্ত ভাইরাস (MPV বা MPXV) হল একটি ডাবল-স্ট্র্যান্ডেড ডিএনএ জুনোটিক ভাইরাস যা মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে মাঙ্কিপক্স সৃষ্টি করে।
এটি পক্সভাইরাডে পরিবারের অরথোপক্সভাইরাস গণের অন্তর্গত। এটি মানুষের অরথপক্স ভাইরাসগুলির মধ্যে একটি যার মধ্যে ভ্যারিওলা (VARV), কাউপক্স (CPX) এবং ভ্যাক্সিনিয়া (VACV) ভাইরাস রয়েছে।
এটি ভ্যারিওলা ভাইরাসের সরাসরি পূর্বপুরুষ নয় বা এর সরাসরি বংশধর নয়, যা স্মলপক্স সৃষ্টি করে। মাঙ্কিপক্স রোগটি গুটিবসন্তের মতো, তবে হালকা ফুসকুড়ি এবং কম মৃত্যুহার সহ।
ভাইরাসটি প্রাণী থেকে মানুষ এবং মানুষ থেকে মানুষ উভয়ই ছড়াতে পারে। প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমণ পশুর কামড়ের মাধ্যমে বা সংক্রামিত প্রাণীর শারীরিক তরলের সাথে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে ঘটতে পারে।
সংক্রামিত ব্যক্তির শারীরিক তরল থেকে ফোমাইটস (স্পর্শযোগ্য পৃষ্ঠ) এর সংস্পর্শে ফোঁটা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে।
মাঙ্কিপক্সের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, ঘেমে যাওয়া, পিঠে ব্যথা, মাংসপেশির টান ও অবসাদ।
জ্বর কমলে শরীরে দেখা দেয় ফুসকুড়ি। অধিকাংশ ঘটনায় শুরুতে মুখে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। পরে অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে; বিশেষ করে হাতের তালু ও পায়ের তলায়।
কোনো সংক্রমিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এলে মাঙ্কিপক্স ছড়াতে পারে। ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করে ভঙ্গুর ত্বক, শ্বাসনালি, চোখ, নাক বা মুখের মাধ্যমে।
যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে এ রোগ ছড়াতে পারে—আগে এমনটা বলা না হলেও এখন ধারণা করা হচ্ছে, যৌন মিলনের সময় সরাসরি সংস্পর্শে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে।
সংক্রমিত বানর, ইঁদুর ও কাঠবিড়াল এবং ভাইরাসযুক্ত বস্তু যেমন বিছানাপত্র ও জামাকাপড়ের সংস্পর্শে এলেও ছড়াতে পারে ভাইরাসটি। [মাঙ্কিপক্স বিষয়ক তথ্যসমূহ উইকিপিডিয়া হতে নেওয়া]
আরও পড়ুন: দূর্ঘটনা – ট্রেন ও মাইক্রোবাস সংঘর্ষের ফলে নিহত ১১ জন।