খুব সম্প্রতি মহানবী (সাঃ) কে নিয়ে ভারতের দুজন উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তি কটুক্তি করেছেন। এই বিষয় নিয়ে গোটা ভারত বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের হুমকির মুখে পড়েছে।
মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ভারতকে সরাসরি ক্ষমা চাইতে বলা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে ভারতের পণ্য নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হচ্ছে। বাংলাদেশেও এ নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে।
মূলত মহানবী (সাঃ) কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য বা কটুক্তি করেছেন ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এর দুজন নেতা। একজন পুরুষ আর একজন মহিলা।
খুব সহজভাবে যদি মূর্খ দু’জনের পরিচয় ফাঁস করি তাহলে একজন হলেন ভারতের বিজেপি দলের জাতীয় মূখপাত্র নুপুর শর্মা এবং অন্যজন হলেন মিডিয়া সেলের প্রধান নবীন জিন্দাল।
কাতার, কুয়েত ও ইরান তাদের দেশে থাকা ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া সমালোচনা করেছেন এবং বিভিন্ন হুশিয়ারি দিয়েছেন।
শুধু এই দেশগুলোই নয়, মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে কড়া হুঁশিয়ারি ও ভারতীয় পণ্য বয়কটের আহবান আসছে। সব মিলিয়ে ভারত বর্তমানে একটু নড়েচড়ে বসেছে।
অন্যদিকে, মহানবী (সাঃ) কে নিয়ে বেফাস কথাবার্তা বলায় নুপুর শর্মাকে বিজেপি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে অর্থাৎ সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে।
ভারতের সাথে সৌদি আরবের সম্পর্ক বেশ ভালো আগে থেকেই ছিল। বিভিন্ন কুটনৈতিক বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে বেশ সমঝোতা ছিল। কিন্তু এ ঘটনার পরে সৌদি আরবও ভারতের প্রতি বিরুপ মন্তব্য করেছে এবং হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
সৌদি আরব থেকে আরও জানানো হয়েছে যে, ভারতকে এই বিষয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। নচেৎ পাল্টা অবস্থানে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
এদিকে, নুপুর শর্মা ও নবীন জিন্দাল কেন এমন মন্তব্য করেছেন তা জানাও খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সপ্তাহখানেক আগে নুপুর শর্মা একটি টিভি বিতর্ক আলোচনায় অংশ নেন।
সেখানে তিনি কথার পৃষ্টে মহানবী (সাঃ) কে নানারকম খারাপ মন্তব্য করেন। নুপুর শর্মার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেছেন যে, হিন্দুদের মহাদেব শিবকে নিয়ে কটুক্তি ছুড়ে দেয়ার প্রতিবাদে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন।
টেলিভিষনে এমন কথা বলার পরপরই সেখানকার (কানপুর) স্থানীয় মুসলিমরা প্রতিবাদ শুরু করেন। এতে পুলিশের সাথে মুসলমানদের সংঘাত হয়। অনেকেই আহত হয়। এখন পর্যন্ত কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। তবে ভারতে বেশ জোরালোভাবেই এর প্রতিবাদ চলছে।
মুসলিমরা ভারতের নানা জায়গায় নুপুর শর্মার এমন মন্তব্যের জন্য প্রতিবাদ করছেন। বড় বড় মিছিল হচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং ইউটিউবে প্রতিবাদের নানারকম ভিডিও পাওয়া যাচ্ছে।
ওমানের গ্রান্ড মুফতি বিষয়টি খুব জোরালোভাবে নিয়েছেন। তিনি আরব বিশ্বকে এক হয়ে প্রতিবাদ করতে বলেছেন এবং মধ্য প্রাচ্যে ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা বলেছেন।
বিশ্বে সমগ্র ইসলামিক দেশগুলোর জন্য একটি জোট রয়েছে যেটাকে বলা হয় ওআইসি। সেই ওআইসির পক্ষ থেকে নিন্দা জানানো হয়েছে। ওআইসির পক্ষ হতে বলা হয়েছে যে, ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত উপায়ে ঘৃণা ছড়ানো হয়।
পাকিস্তানের পক্ষ হতেও তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। ভারতের বিরুদ্ধে তারাও নানা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। ভারতের এমন গর্হিত কাজ ভবিষ্যতে আবার হলে যুদ্ধ ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এর প্রতিবাদ করছেন সেখানকার মুসলিমরা। রাস্তায় রাস্তায় হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মুসলমান বের হয়ে কালেমা পতাকা উড়াচ্ছেন এবং কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছেন।
নুপুর শর্মার সদস্যপদ বাতিল করাসহ মিডিয়া সেলের প্রধান নবীন জিন্দালকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু এটা আসলে কোনো সমাধান নয়। বিশ্বের ১৫টি দেশ এখন পর্যন্ত ভারতের প্রতি তীর্যক মন্তব্য করেছে।
ভারতের মধ্যে যে বিরোধী দলগুলো রয়েছে সেগুলোর চাপেও পড়েছে বর্তমান বিজেপি সরকার। তাই বিজেপি সরকারকে অবশ্যই মহানবী (সাঃ) কে কটুক্তির যে প্রভাব তার জবাব দিতে হবে।
নয়াদিল্লির কাতার দূতাবাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, নরেন্দ্র মোদির সরকারকে প্রকাশ্যে মন্তব্য করা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। বার্তাসংস্থা রয়টার্স ওই কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ‘আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে যেকোনো আঘাত সরাসরি অর্থনৈতিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে’।
ইতিপূর্বেও ভারতে মুসলিম বিদ্বেশী আচরণ করা হয়েছে। নানা ধরণের অঘটন ঘটেছে। মুসলিমদের গরুর মাংস খেতে বা গরু লালনপালনে বাঁধাগ্রস্ত করা হয়েছে। এমন উগ্রবাদী আচরণ কখনোই কাম্য নয়।
মহানবী (সাঃ) কে নিয়ে কেউ কটুক্তি করলে মুসলিম বিশ্ব কখনোই বসে থাকবে না। নিজের জীবন দিয়ে হলেও এর প্রতিবাদ করবে। এমন নজির পৃথিবীতে আছে। তাই ভারতকে ভবিষ্যতে ইসলাম বিদ্বেশী কোনো আচরণ না করার জন্য অবশ্যই সাবধান হওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: সীতাকুণ্ড বিস্ফোরণ – শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিস্তারিত ঘটনা।