গত বছরের তুলনায় মরিচের ফলন ও দামে কৃষকরা এবার সন্তুষ্ট। কারণ, বৈরী আবহাওয়া না হওয়ায় এবার মরিচের খুব ভালো ফলন হয়েছে। কোনো ধরণের পোকার সংক্রমণ নেই। মরিচের ফুল ঝরে যাওয়ার সংখ্যা অনেক কম।
বাজারে চাহিদা প্রচুর। ১ মন মরিচ স্থানীয় বাজারে প্রায় ৩০০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে করে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন মরিচ উঠানো যায় অর্থাৎ ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করা যায়।
বগুড়ার মরিচ চাষী আব্দুল হক বলেছেন, প্রতি বছর তিনি কয়েক একর জায়গায় মরিচ চাষ করেন। কিন্তু লাভের মুখ খুব একটা দেখেন না। কিন্তু এবার তিনি দাম নিয়ে সন্তুষ্ট। অন্যদিকে, এবার ফলনও ভালো হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রতি বছর বিদেশ থেকে কিছু পরিমাণ মরিচ আমদানি করতে হয়। সরকার কৃষকের অবস্থা না বুঝেই হয়তো এমনটা করে। কিন্তু এবার তা করা হয়নি। যার ফলে মরিচের দাম খুব একটা উঠানামা করেনি।
মরিচ চাষ করা হয় শীতকালীন মৌসুমে। যে জমিতে পেয়াজ চাষ করা হয় ঐ একই জমিতে আবার মরিচ চাষও করা যায়। মরিচ গাছ খুব একটা বড় হয় না। তবে ঝড়ো হাওয়া হলে মরিচের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
বাতাসে মরিচের গাছ মাটির দিকে হেলে যায়। আর যখন হেলে যায় তখন মরিচের ফলন আর আগের মতো হয়না। তাই অনেক মরিচ চাষী আগে থেকেই সাবধানতার জন্য মরিচ গাছে খুটি ব্যবহার করেন।
বগুড়ার চাষী আব্দুল হক নিজেও এ কাজটি এবার করেছেন। কারণ, তার বেশ কয়েক একর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। যদি কোনো কারণে তুফান বা ঝড় হয় তবে বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই আগে থেকেই তিনি শ্রমিক নিয়ে যেগুলো একটু দূর্বল মরিচের গাছ মনে হয়েছে সেগুলোতে খুটি দিয়েছেন।
মরিচের ফুল আসা শুরু করে ফাল্গুন মাসে। আর চৈত্র মাসে মরিচ বাজারে বিক্রি শুরু হয় বাণিজ্যিকভাবে। আর চৈত্র মাস শেষেই শুরু হয় তুফানের দিন। বৈশাখ আর জৈষ্ঠ্য মাস হলো গ্রীষ্মকাল। আর এই দুই মাসে দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রায়ই কাল বৈশাখী ঝড় বয়ে যায়।
শুধু বগুড়াতেই নয়, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও এর চাষীরাও একই কাজ করেন। সরেজমিনে দিনাজপুর গিয়ে দেখা যায় যে, মরিচের গাছে সেখানকার কৃষকরাও খুটি দিচ্ছেন। দাম ও ফলনের কথা জিজ্ঞেস করতেই তারা আনন্দে আত্মহারা। কারণ, বাজার মূল্য যা রয়েছে তাতে কৃষকের খুশী থাকারই কথা।
দিনাজপুরের ঘাসি পাড়ার কৃষক সামাদ আলী বললেন যে, গত কয়েক বছর থেকে তেমন একটা লাভের মুখ দেখেন না। প্রথম কয়েক সপ্তাহ দাম ভালো থাকলেও পরে দাম নেমে যায়। কিন্তু এবার শুরু থেকেই দাম অনেক ভালো এবং বাজার নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। মরিচের ফলনও ভালো হয়েছে। সব মিলিয়ে এ বছরটা ভালোই যাচ্ছে।
মরিচের চারা কিভাবে সংগ্রহ করেন জিজ্ঞেস করলে চাষী সামাদ জানান যে, নিজেরাই মরিচের বীজ রোপণ করেন। তারপর তা বেড়ে ওঠলে ক্ষেতে লাগান। বীজ রোপন করার পর চারা হতে প্রায় দেড় মাস সময় লাগে। বাজারে ভালো চারা অনেক সময় পাওয়া যায় না।
বগুড়া, দিনাজপুর ও এই সব অঞ্চলের পার্শ্ববর্তী এলাকায় মরিচের একটি জাত বেশি জনপ্রিয়। আর এই জাতটিকে স্থানীয় ভাষায় বলা হচ্ছে আকাসী। এই মরিচ আসলেই খুব ঝাল প্রকৃতির হয়। চিকন ও লম্বাটে আকৃতির হয়। একটি মরিচ গাছে প্রচুর পরিমাণে ধরে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১টি মরিচ গাছে ১ কেজির বেশি মরিচ পাওয়া যায়।
মরিচ চাষের ক্ষেত্রে তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা বা নিয়ম নেই। খুব সহজেই মরিচ চাষ করা যায়। তবে নদী তীরবর্তী জমিতে মরিচ ভালো হয় যদিও সব ধরণের জমিতেই মরিচের চাষ সম্ভব।
কৃষক আতাউর বলেন, বেলে দো-আঁশ মাটিতে মরিচের ফলন সবচেয়ে ভালো হয়। তিনি তার নিজের ৫ বিঘা জমিতে এ বছর আকাসী মরিচের চাষ করেছেন। সপ্তাহে প্রায় ১০ মন করে মরিচ বর্তমানে বাজারে বিক্রি করছেন। তিনিও মরিচের বাজার মূল্য এবং ফলন নিয়ে খুব সন্তুষ্ট।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ সরকার প্রবাসীদের জন্য যেসব সুখবর নিয়ে আসছে।
বাংলাদেশ কৃষি তথ্য বাতায়নের প্রকল্প পরিচালক আহসান উল্লাহ করিম এর সাথে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের তুলনায় এ বছর মরিচের ফলন ভালো হয়েছে। বাইরের দেশ থেকে মরিচ আমদানি করা হচ্ছে না। প্রয়োজনে দেশের মরিচ বিদেশে রপ্তানী করা হবে। বাজারের যে দাম তাতে কৃষক ভাইদের এ বছর যথেষ্ট লাভ হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।