মধু সম্পর্কে গোপন তথ্য:
মধু হলো এক প্রকার মিষ্টি ও ঘন তরল পদার্থ। মৌমাছি ও অন্যান্য কিছু পতঙ্গ ফুলের নির্যাস থেকে এটি তৈরী করে। অতঃপর মৌচাকে সংরক্ষণ করে।
মধু পছন্দ করেনা এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ, মধু হলো উচ্চ ঔষধি গুণসম্পন্ন ভেষজ তরল। এটি খেতেও খুব সুস্বাদু।
বিভিন্ন প্রকার খাদ্য তৈরীতে মধুর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। মধুর মিষ্টি গন্ধের কারণে চিনির চেয়ে অনেকেই মধুকেই বেশি পছন্দ করে।
বাংলাদেশের সুন্দরবন থেকে অনেক বেশি পরিমাণে মধু সংগ্রহ করা হয়। সুন্দরবনের মধু স্বাদের দিক থেকে অনন্য। সুন্দরবনের বেশিরভাগ মধুই সংগ্রহ করা হয় কেওড়া গাছের ফুল থেকে।
প্রাত্যহিক জীবনে মধুর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। মধুর উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। আজ আমরা মধুর উপকারিতা নিয়ে জানবো।
অনেকেই এই উপকারিতাগুলো সম্পর্কে জানে না। তাই মধুর উপকারিতাগুলোকে গোপন তথ্য হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
মধুর ১৫টি উপকারিতা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
১। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে: বাড়তি ওজন যে কারও জন্য ক্ষতিকর ও অস্বস্তির ব্যাপার। বাড়তি ওজন নানা ভাবে ক্ষতিও করে থাকে। মধু নিয়মিত খেলে পাকস্থলীতে অতিরিক্ত গ্লুকোজ তৈরী হয়।
তৈরী হওয়া গ্লুকোজ মস্তিষ্কের সুগার লেভেল বাড়িয়ে দেয়। আর এই জন্য শরীরের মেদ কমানোর হরমোন নিঃস্বরণের জন্য বেশি মাত্রায় চাপ সৃষ্টি করে। আর তাই মেদ কমে যায়।
২। ঘুম কম হলে: অনিদ্রা হলে শরীরে নানারকম সমস্যা দেখা দেয়। রাতে ঘুমানোর পূর্বে ১ চামচ মধু খেয়ে নিন। এতে আপনার অনিদ্রা কেটে যাবে।
৩। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে: কোষ্ঠকাঠিন্য খুব খারাপ একটি রোগ। এ রোগ হলে কয়েকদিন পরপর পায়খানা হয়। প্রচণ্ড কষ্ট হয়।
নিয়মিত যদি মধুর সাথে হালকা গরম পানি মিশিয়ে খাওয়া যায় তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। মধুতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স রয়েছে। আর ভিটামিন বি কমপ্লেক্স কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
৪। ডায়রিয়া হলে: ডায়রিয়া প্রতিরোধে মধুর অনেক ভূমিকা রয়েছে। নিয়মিত মধু খেলে ডায়রিয়া কিংবা পেটের যেকোন অসুখ দূর হয়ে যায়। হজম শক্তি বাড়ে।
৫। অম্বলের সমস্যা দূরীকরণে: অম্বলের সমস্যা দূর করার জন্য অবশ্যই খাটি মধু খেতে হবে। খাটি মধু খেলে মুখের টক-টক ভাবও দূর হয়ে যায়।
৬। হজম শক্তি বৃদ্ধিতে: মধুতে রয়েছে হরেক রকমের উপকারি উপাদান। যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে কিংবা খাবার খেলে হজম হতে দেরি হয় তারা নিয়মিত এটি খেলে সমস্যা দূর হয়।
হজম শক্তি বেড়ে যায়। অ্যাসিডিটি কম হয়। তবে অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে খাবার খেতে হবে।
৭। পাকস্থলীর সুস্থ্যতা নিয়ন্ত্রণে: আগেই বলা হয়েছে, মধু খেলে হজম শক্তি বেড়ে যায়। আর যে ব্যক্তির হজম শক্তি ঠিক রয়েছে তার এত সহজে পাকস্থলীর কোনো সমস্যা হবে না।
সুতরাং নিয়মিত মধু খেলে পরোক্ষভাবে তা পাকস্থলীকে সুস্থ্য রাখে।
৮। অরুচি দূরীকরণে: সবসময় মুখের রুচি একরকম থাকে না। কোনো কারণ ছাড়াই অনেক সময় মুখের রুচি কমে যায়।
অনেকেই আবার অল্প খেয়েই হাঁপিয়ে ওঠেন। যতটুকু খাওয়া দরকার ততোটুকুও খেতে পারেন না। আর তাই এক্ষেত্রে নিয়মিত এটি খেলে খাবারের প্রতি অরুচি দূর হয়ে যায়।
৯। বমি-বমি ভাব দূরীকরণে: সামনে খাবার দেখলে বমি-বমি ভাব হয়। গাড়িতে চড়লে বমির ভাব আসতে পারে। নিয়মিত মধুর সাথে সামান্য গরম পানি মিশিয়ে খেলে এ সমস্যা দূর হয়।
যখনই বমি ভাব আসে তখনই একটু এই ভেষজ তরল খেয়ে নিন। তাৎক্ষনিক উপকার পাবেন নিশ্চিত।
১০। খাদ্য উপাদানের ঘাটতি পূরণ: মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান রয়েছে। সুতরাং নিয়মিত এ ভেষজ তরলটি খেলে দেহের খাদ্য উপাদানের ঘাটতিগুলো সহজেই পূরণ হয়।
১১। রোগ-ব্যাধি কমাতে: মধু রোগ-ব্যাধি কমাতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই আপনি যদি বিভিন্ন রোগে ভুগে থাকেন তবে নিয়মিত মধু খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
১২। ক্ষত ও জখম কমাতে: বিভিন্ন কারণে শরীরে ক্ষত ও জখম হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, অধিকাংশ ক্ষত ও জখমের উপশমে এই ভেষজ তরল ডাক্তারী ড্রেসিং-এর চেয়েও বেশি কার্যকর। অগ্নিদগ্ধ ত্বকের জন্যও এটি খুব উপকারী।
১৩। ঠাণ্ডা উপশমে: ঠাণ্ডা লেগে স্বর্দি জ্বর হতে দেখা যায়। এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু নিয়মিত মধু খেলে এ সমস্যা থেকে সহজেই রেহাই পাওয়া যায়। ঠাণ্ডা উপশমে মধু খুবই কার্যকর।
১৪। দূর্বলতা দূরীকরণে: বিভিন্ন কারণে আমাদের শরীর দূর্বল হয়ে যায়। অক্লান্ত পরিশ্রমে আমরা ভেঙে পড়ি। কিন্তু নিয়মিত মধু খেলে শরীরের দূর্বলতা দূর হয়। সহজেই ক্লান্ত শরীর আবার সজাগ ও সতেজ হয়ে উঠে।
১৫। গ্লাইকোজেনের রিজার্ভ বৃদ্ধিতে: জানলে অবাক হবেন যে, প্রাচীন গ্রীসের খেলোয়াড়েরা এই ভেষজ তরল খেয়ে মাঠে খেলতে নামতো। কারণ, মধুতে রয়েছে উচ্চ মাত্রার ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ যা যকৃতে গ্লাইকোজেনের রিজার্ভ গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন: নিম ও হলুদের নানা ধরণের ভেষজ উপকারিতা জেনে নিন।
পরিশেষে বলা যায়, লক্ষ-কোটি মৌমাছির অক্লান্ত শ্রম আর সেবাব্রতী জীবনের দান হলো এই ভেষজ তরল। মধুর মধ্যে রয়েছে উত্তম সব গুণাবলী।
তাই নিজের শরীর সুস্থ্য রাখতে হলে নিয়মিত মধু খেতে পারেন। মধু খুবই সহজলভ্য। বাজারে প্রায় সব জায়গায়-ই পাওয়া যায়।