বাংলাদেশে বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে ভেষজ চিকিৎসা সেই আদিকাল থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে। এখন এ চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেকটা উন্নতও হয়েছে। বিভিন্ন আয়ুর্বেদী কোম্পানী বর্তমানে গুরুত্বের সাথে ভেষজ ওষুধ তৈরী করছে।
আজ আমরা কোষ্ঠকাঠিন্য, অ্যাসিডিটি, আলসার এবং আমাশয় রোগের ভেষজ চিকিৎসা নিয়ে জানবো। তো আর কথা নয়, সরাসরি যাচ্ছি মূল আলোচনায়।
কোষ্ঠকাঠিন্য (ভেষজ চিকিৎসা):
লক্ষণ: অতিরিক্ত চা বা কফি, পান, গুরুপাক দ্রব্য ভোজন, ঠিকমতো হজম না হওয়া, কায়িক পরিশ্রম না করা, অনিদ্রা, কৃমি, রাতজাগা প্রভৃতি কারণে মল ঠিকমতো পরিষ্কারভাবে শরীর থেকে নির্গত হয় না।
ফলে অক্ষুধা, মাথা-যন্ত্রণা, পেটের মধ্যে ভুটভাট করা, অম্ল রোগসহ প্রভৃতি রোগ দেখা দেয়।
চিকিৎসা: হরিতকি ৫০ গ্রাম, আমলকি ৫০ গ্রাম, বয়রা ৫০ গ্রাম, সোনা পাতা ২৫ গ্রাম, বেলচূর্ণ ২৫ গ্রাম, বিট লবণ ২৫ গ্রাম, জোয়ান ২৫ গ্রাম, যবক্ষার ১০ গ্রাম, আদা শুঁঠ ৫ গ্রাম এবং পিপুল ৫ গ্রাম নিন।
দ্রব্যগুলোকে রোদে শুকিয়ে ভালো করে চূর্ণ করে কাপড়ে ছেঁকে শিশিতে ভরে রেখে দিন। রোজ দুবেলা ভাত খাবার পর ১/২ চামচ খেয়ে ঠাণ্ডা পানিতে খেতে হবে। বেশী কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে রাত্রে গরম পানি খেতে হবে। উল্লেখিত দ্রব্যগুলো যেকোন দশকর্মা ভান্ডারে পাওয়া যাবে।
পথ্য: লঘু অথচ পুষ্টিকর খাদ্য, শাক অবশ্যই খাওয়া উচিত। ঘি, তেলেভাজা বিভিন্ন খাদ্য খাওয়া উচিত হবে না।
অম্ল বা অ্যাসিড:
লক্ষণ: কোষ্ঠকাঠিন্য, অজীর্ণ সহ প্রভৃতি কারণে পেটে বায়ু জমা হয় এবং ওপর দিকে ঠেলে সারা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে নানা রকম শারিরীক অসুবিধার সৃষ্টি করে।
চিকিৎসা: রাত্রিবেলা কাঁচের গ্লাসের ১ গ্লাস উষ্ণ পানিতে ৫/৬ টুকরো শুকনো আমলকি ভিজিয়ে ঢাকা দিয়ে রেখে দিন। সকালে পানিটা ছেঁকে খালি পেটে খেয়ে নিন।
অথবা, ২৫০ গ্রাম পানিতে ৫ গ্রাম মৌরি ডাল ভালো করে ফুটিয়ে ৫০ গ্রাম হলে নামিয়ে নিন। ঠাণ্ডা হলে ছেঁকে নিন এবং অর্ধেকটা সকালে ও অর্ধেকটা বিকালে সেবন করুন।
এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য প্রদত্ত ফর্মুলায় ওষুধ তৈরী করে দুবেলা আহারের পর ১ চামচ করে খেতে হবে যতোদিন না রোগ নির্মূলভাবে সেরে যায়।
আলসারের ভেষজ চিকিৎসা:
লক্ষণ: দীর্ঘদিন পেটে গ্যাস জমে থাকায় অন্ত্রে এবং ডিওডেনামে ঘা হয়ে যায়। একেই আলসার বলা হয়। পেটে ব্যথা, জ্বালা, অরুচি, বমিসহ প্রভৃতি লক্ষণ দেখা যায়।
এ রোগ ধরা পরা মাত্রই নিচের ফর্মূলার মতো করে ওষুধ তৈরী করে খেতে হবে ২ মাস। বহু পুরনো রোগীর ক্ষেত্রে এবং অপারেশন হওয়া রোগীদের ক্ষেত্রে উপযুক্ত ডাক্তারের চিকিৎসা নেয়া উচিত।
চিকিৎসা: ২ চামচ আমপাতার রস, ২ চামচ দুর্বা ঘাসের রস, ১ চামচ নিমপাতার রস, ১ চামচ আদার রস, ১ চামচ হেলেঞ্জার রস, ২ চামচ কালোমেঘের রস এবং ১ চামচ থানকুনি পাতার রস একসাথে মিশিয়ে একটা কাপে নিতে হবে।
এবার একটি পরিষ্কার লোহা গরম করে এ রসের মধ্যে ডুবিয়ে তুলে নিতে হবে। এই ওষুধ সকালে খালি পেটে খেতে হবে প্রতিদিন। যতদিন রোগ ভালো না হবে ততদিন ওষুধ খেতে হবে।
পথ্য: পেঁপে, কাচঁকলা সিদ্ধ, হেলেঞ্জা সিদ্ধ দিয়ে নরম ভাত খেতে হবে। পেট কখনো খালি রাখা ঠিক নয়। সমস্ত গুরুপাক খাদ্য, ঘি, তেল, মশলা এবং ভাজাপোড়া খাওয়া একদম নিষেধ।
আমাশয় রোগ:
লক্ষণ: অ্যামিবা ব্যাসিলাস নামক এক প্রকার জীবাণুর আক্রমণে এই রোগ হয়ে থাকে। পেটে কামড়ানিসহ পিচ্ছিল পায়খানা, কখনো বা সাদা হয়, কখনো বা পেট ব্যথা ছাড়াই বার বার তৈলাক্ত পায়খানা হয়।
চিকিৎসা: থানকুনি পাতার রস ২ চামচ, পাথরকুচি পাতার রস ২ চামচ, দুর্বা ঘাসের রস ২ চামচ, আদার রস ১ চামচ মিশিয়ে খেতে হবে দিনে ৩ বার করে পরপর ৩ দিন।
পথ্য: কাঁচকলা সিদ্ধ, থানকুনি পাতা বেঁটে কয়েক গ্রাস ভাত খাওয়াতে হবে। এছাড়া হালকা এবং সহজপাচ্য খাদ্য খাওয়ানো উচিত।
আরও পড়ুন: আফিং নেশাজাতীয় হলেও উপকারিতা অনেক।
পরিশেষে বলা যায়, আগের যুগে নানারকম ভেষজ ওষুধ দিয়েই প্রায় সবরকম রোগ সেরে যেত। কিন্তু বর্তমানে ঐভাবে ভেষজ ওষুধগুলো পাওয়া যায় না কিংবা মানুষ কষ্টে করে সংগ্রহ করে এভাবে তৈরী করতে চায় না।
কিন্তু সত্যিকার অর্থে, কেউ যদি কষ্ট করে (নিয়মানুযায়ী) ভেষজ ওষুধ-সমূহ তৈরী করে এবং সেবন করে তাহলে তার উপকার ১০০% হবে। তবে ইউনানী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।
সূত্র: ডা. এম এস সরকার (আদি ও আসল রোগমুক্তি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নামক বই)