ভাগনার রাশিয়া থেকে বিতাড়িত হওয়ার পরও বিভিন্ন কারনে এখনও আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন। ভাগনার গ্রুপ নিয়েই অনেক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।
খুব সম্প্রতি বেলারুশের নিরাপত্তা বাহিনী ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে (ভাগনার বাহিনীর সাথে) পোলেন্ড সীমান্তে যৌথ মহড়ায় অংশ নিবেন।
ধারণা করা হচ্ছে, যৌথ মহড়া শুরু হওয়ার আগেই সেখানে পৌছে গিয়েছেন ভাগনার প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিন। সেখানে পৌছার পরে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন তিনি।
এই মহড়া যখন হচ্ছে তখন ইউক্রেনের ওদেসায় হামলা জোরদার করতে যাচ্ছে রুশ বাহিনী। রুশ বাহিনীর পক্ষ থেকে এই মহড়া নিয়ে আপাতত কিছু বলা হয়নি। তবে কোন ঘোষণা আসতে পারে।
বেলারুশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যৌথ মহড়ার ঘোষণা এসেছে। তারা একটা বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছে যে, বেলারুশের সশস্ত্র বাহিনী ভাগনার গ্রুপের সঙ্গে মহড়া চালিয়ে যাবে।
চলতি সপ্তাহে বেলারুশের সশস্ত্র বাহিনীর একটি বিশেষ একটি দল ভাগনার গ্রুপের যোদ্ধাদের সঙ্গে ব্রেসদাস্কি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে প্রশিক্ষণ এবং মহড়ায় অংশ নেবে।
উল্লেখ্য যে, ভাগনার গ্রুপ তাদের অসন্তুষ্টির জায়গা থেকে রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গত জুনের শেষের দিকে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
সেই সময় তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিলো রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুসহ সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের আটক করা। বিদ্রোহ করার মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই রোস্তভ-অন-দন শহর দখলে নেয় ভাগনার বাহিনী এবং সাথে সাথে সেখানকার সেনা সদর-দপ্তরও তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়।
তারপর ভাগনার বাহিনীর একটি দল মস্কোর উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কিন্তু বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার লুকাশেঙ্কের মধ্যস্থতায় রুশ সরকারের সঙ্গে ভাগনার গ্রুপের সমঝোতা হয়ে যায়।
সেই সমঝোতায় এমন একটি চুক্তি ছিল যে, বিদ্রোহের কারণে ভাগনার যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছিল সেগুলো প্রত্যাহার করে নেয়া হবে।
এরপরে রুশ সরকার জানায়, তারা ভাগনার বাহিনীকে আর কোন অর্থ দেবে না। আর ভাগনার প্রধান প্রিগোশিন বেলারুশে যাবেন বলেও সিদ্ধান্ত হয়।
আর ঠিক এই সময় বেলারুশের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, তারা ভাগনার বাহিনীর সঙ্গে কাজ করবে। আর তাই চলতি মাসের শুরুর দিকে বেলারুশের সরকারের পক্ষ থেকে ভাগনার গ্রুপকে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং যোদ্ধারা তখন সেদেশেই যান।
আর তারপরই বেলারুশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যৌথ মহড়ার ঘোষণা এল। কিন্তু ঠিক কী ধরণের মহড়া হবে সেটা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সঠিকভাবে জানানো হয়নি।
অন্যদিকে, পোল্যান্ড এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের সীমান্ত নিরাপদ রয়েছে এবং সবসময় সেখানকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
ভাগনার গ্রুপের যোদ্ধারা বেলারুশের যে এলাকায় গেছেন সেখানকার স্যাটেলাইট ছবি পর্যালোচনা করছে সিএনএন। তাতে দেখা যায়, চলতি সপ্তাহে একটি পরিত্যাক্ত ঘাঁটিতে ভাগনার যোদ্ধাদের যেতে দেখা গেছে। সেখানে কয়েক শ যানবাহন নেয়া হয়েছে।
এসব ঘটনার পর গত বুধবার ভাগনার প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশিত হয়।
প্রিগোশিন ভিডিওতে যা বললেন:
ইয়েভগেনি প্রিগোশিন তার ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ভাগনার যোদ্ধারা এখন আর ইউক্রেনের যুদ্ধে অংশ নেবে না। তাঁদের নজর এখন আফ্রিকায়। সেখানে নতুন যাত্রা শুরুর প্রস্তুতি নেবেন যোদ্ধারা।
গত বুধবার টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় প্রিগোশিনকে এসব কথা বলতে শোনা যায়। রাশিয়ায় বিদ্রোহের পর প্রিগোশিনের এটিই প্রথম ভিডিও বার্তা।
রাশিয়ায় বিদ্রোহের পরে প্রিগোশিন কোথায় ছিলো তা জানা যাচ্ছিল না। বুধবার ওই ভিডিও বার্তা প্রকাশের পরে প্রিগোশিন বলেন ‘স্বাগত যোদ্ধারা…বেলারুশের ভূখণ্ডে স্বাগত।’
তবে নতুন এই ভিডিও বার্তা প্রকাশের পর ধারণা করা হচ্ছে, প্রিগোশিন এখন বেলারুশে রয়েছেন। ভিডিও বার্তায় তিনি আরও বলেন ‘আমরা সম্মানের সঙ্গে যুদ্ধ করেছি। আমরা রাশিয়ার জন্য অনেক কিছু করেছি। এখন যা ঘটছে তা অসম্মানজনক। আমাদের এর সঙ্গে জড়িত থাকার কোন প্রয়োজন নেই।’
আরও পড়ুন: ইমরান খানকে জরুরী তলব করেছে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা এনএবি