বুক জ্বালা পোড়া রোগ:
বুক জ্বালা পোড়া রোগ প্রায় মানুষেরই হয়ে থাকে। গ্যাস্ট্রো ইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ এর সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো বুক জ্বালা পোড়া করা। এ রোগ হলে বুকের মাঝখানে পুড়ে যাওয়ার মতো জ্বালার অনুভূতি হয়।
সাধারণত চিকিৎসকগণ এটিকে অতিরিক্ত অ্যাসিডিটি হিসেবে চিহিৃত করে থাকেন। চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ ভালো হয়। তবে চিকিৎসার সাথে সাথে জীবনশৈলী এবং খাদ্য-তালিকার পরিবর্তনও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
রন্ধ্রনিয়ন্ত্রক রয়েছে পাকস্থলী ও খাদ্যনালী এ দুটোর সংযোগস্থলে। পাকস্থলীর এসিড যদি সেই রন্ধ্র নিয়ন্ত্রকের মধ্য দিয়ে উপরের দিকে উঠে আসে তখনই বুক জ্বালা শুরু হয়। মনে হয় বুকটা জ্বলে যাচ্ছে। তবে কিছু কিছু খাবার বুক জ্বালা বাড়িয়ে তুলতে পারে। সেদিক থেকে সাবধান থাকতে হবে।
যেসব কারণে বুকজ্বালা হতে পারে:
১। অতিরিক্ত খাবার খাওয়া: অতিরিক্ত খাবার খেলে বুকজ্বালা বাড়তে পারে। তাই সবসময় পরিমিত পরিমাণে খাবার খাওয়া উচিত। একসঙ্গে অনেক ধরণের খাবার খাওয়া – বুক জ্বালার এটাও একটা অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচ্য। তবে খাওয়ার পরিমাণ কমানোর জন্য ছোট প্লেট ব্যবহার করতে পারেন।
২। চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া: অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খেলে অ্যাসিডিটির পরিমাণ বাড়তে পারে। আর অ্যাসিডিটি বেশি হলেই তা খাদ্যনালী ভেদ করে উপরে উঠে আসতে পারে।
আর তখনই শুরু হয় বুক জ্বালা। আর ইতিমধ্যে যদি আপনার বুক জ্বালা রোগ হয়ে থাকে তবে অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার তা অনেকাংশে বাড়িয়ে তুলবে।
৩। অম্লধর্মী খাবার: যেসব খাবারে অ্যাসিড থাকে যেমন- টমেটো, সালসা, সস, সাইট্রাস ফল (লেবু), জাম্বুরা, কমলা লেবু ইত্যাদি, এগুলো কম খেতে হবে। খালি পেটে এসব খাবার খেলে ঢেঁকুর উঠার সাথে সাথে আপনার বুক জ্বালা বেড়ে যাবে।
৪। কোমল পানীয় বাড়াতে পারে বুক জ্বালা: বিভিন্ন ধরণের পানীয় আমরা সচরাচর খাই। যেমন- কফি, ক্যাফিনযুক্ত চা, কোকা কোলা, কোক, আরসি, মদ ইত্যাদি।
সাধারণত ক্যাফিনযুক্ত পানীয় পাকস্থলীতে অম্লরস ক্ষরণ উদ্দীপিত করে এবং মদ জাতীয় পানীয় খাদ্যনালীর রন্ধ্রনিয়ন্ত্রক’কে শিথিল করে ফেলে। ফলশ্রুতিতে বুক জ্বালা শুরু হয় এবং তা স্থায়ী রূপ নেয়।
৫। বিভিন্ন ধরণের চকলেট খাওয়া: বিভিন্ন ধরণের চকলেটে রয়েছে ক্যাফিনের মতো উদ্দীপক এবং এই ক্যাফিন হতে পারে বুকজ্বালার জন্য দায়ী। চকলেট খাওয়া একবারে বাদ দিতে অনেকেই পারে না। কারণ, অভ্যাস হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে খাওয়ার পরিমাণটা কমাতে হবে।
৬। মসলাযুক্ত খাবার: মসলাযুক্ত খাবার সবাই পছন্দ করে। কারণ, স্বাদ অনেক বেশি হয়। তবে অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার পেটের মধ্যে গ্যাসের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। তাই মসলাযুক্ত খাবার পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
সংক্ষেপ করে যদি বলি তাহলে বলা যায়, ভাজাপোড়া খাবার বেশি খেলে বুক জ্বালা হবে। তৈলাক্ত খাবার বেশি খেলেও এই সমস্যায় আপনি ভুগতে পারেন।
চা, কফি অতিরিক্ত মাত্রায় যদি পান করেন। ধুমপান করলেও বুক জ্বালা হতে পারে। জানলে অবাক হবেন, অতিরিক্ত মাত্রায় দুশ্চিন্তা এবং মানসিক চাপের কারণেও বুকে জ্বালা পোড়া হতে পারে।
কালো গোল মরিচ আর সিরকা সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেলেও বুক জ্বালা হওয়ার জন্য দায়ী। আপনার পিত্ত থলীতে পাথর হলেও বুক জ্বালা পোড়া করতে পারে।
এছাড়াও একসাথে অনেক পরিমাণে খাওয়া, মোটা হয়ে যাওয়া, গর্ভাবস্থায়, শক্ত এবং মোটা আকৃতির বেল্টের প্যান্ট পড়া – এসব কারণেও বুকে জ্বালা পোড়া হতে পারে।
বুক জ্বালা পোড়া থেকে রক্ষার উপায়:
রোগ হলে পরে আমরা সবাই কম বেশি সচেতন হই। কিন্তু কথায় আছে, প্রতিরোধই সর্বোত্তম ব্যবস্থা অর্থাৎ রোগ হওয়ার আগেই সচেতন হওয়া অনেক ভালো।
তবে অবস্থা যদি খারাপের দিকে চলে যায় তবে অবশ্যই নিকটস্থ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেয়া জরুরী। কখনোই হেলা করা যাবে না। নিয়ম অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে।
ওষুধ ব্যতীত আপনি যদি ভালো থাকতে চান তবে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। নিচে উল্লেখ করা হলো:
১। যেসব খাবার খেলে বা পানীয় পান করলে বুক জ্বালা পোড়া করে সেগুলো একদম খাওয়া যাবে না। যদিও খান খুবই অল্প পরিমাণে খেতে হবে।
খাবার এর তালিকার কথা যদি বলি তাহলে বলা যায়, টমেটো, কমলা লেবু, পেঁয়াজ, রসুন, চকলেট, কফি, চা কিংবা কোমল পানীয়।
২। যেকোন মাংস ভেজে খাওয়া বন্ধ করুন। সেঁকা অথবা ঝলসানো মাংস খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। যাদের বুক জ্বালা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় তাদের কম পরিমাণে তেল-চর্বিযুক্ত খাবার যেখানে কম মসলা ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো খাওয়া উচিত।
৩। রাতের খাবার খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়বেন না। অন্তত এক ঘন্টা পরে ঘুমোতে যাওয়ার অভ্যাস করুন।
৪। যেকোন বেলার খাবার এর সময় এক সাথে অনেক খাবার খেতে যাবেন না। সব সময় পেট পুরে খাবেন না। পেটের ১ ভাগ খাবার, ১ ভাগ পানি এবং বাকি ১ ভাগ ফাঁকা রাখার চেষ্টা করুন।
৫। ঘুমানোর সময় সামান্য উঁচু বালিশ ব্যবহার করুন। তাহলে অ্যাসিড আপনার পাকস্থলী থেকে উপরে উঠে আসতে পারবে না।
৬। ধুমপান করা যাবে না। ধুমপান শুধু অ্যাসিডিটির জন্যই দায়ী নয় বরং অনেক বড় বড় রোগের জন্য দায়ী। সুতরাং আজই ধুমপান ত্যাগ করার চেষ্টা করুন।
৭। আপনি যদি মোটা আকৃতির হয়ে থাকেন, ওজন যদি দিনের দিন বাড়তে থাকে তবে ডায়েট মেইনটেইন করুন। ওজন কমানোর চেষ্টা করুন। তবে কোনো ধরণের ওষুধ খেয়ে ওজন কমানোর চেষ্টা করবেন না। হিতে বিপরীত হতে পারে।
আরও পড়ুন: হেপাটাইটিস রোগ এর কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা জেনে নিন।
৮। সবসময় ঢিলেঢালা জামা-কাপড় ব্যবহার করুন। মোটা বেল্টের প্যান্ট পড়বেন না।
৯। মানসিক চাপ কিংবা দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। নিজেকে একটু বিশ্রামে রাখুন। মাথা থেকে আজেবাজে চিন্তা ঝেরে ফেলুন।
১০। পরিমিত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। আর চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরণের অ্যাসিডিটির ওষুধ যাচ্ছেতাই ভাবে সেবন করবেন না।